দ্রুত নির্বাচন চেয়ে আসা বিএনপি বৈঠক করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। তাদের জানানো হলো, নির্বাচন হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা নির্বাচনের এই সময়সীমা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন।
অন্যদিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে খোলামেলা এই আলোচনায় বিএনপিকে সন্তুষ্ট বলেই তার মনে হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা আগে থেকেই বলে আসছেন।
তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে বলে তারা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
তার দুই মাস পর বুধবার আবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
ড. ইউনূসের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়াও ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক লিখেছেন, বৈঠক শেষে বেরিয়ে ফখরুল যখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তখন তার চোখেমুখে হতাশার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
তিনি বলেন, “তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।”
নির্বাচনের সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় বিএনপির অসন্তোষ। সেই সঙ্গে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আরও পেছানোর ক্ষেত্রেও আপত্তি রয়েছে তাদের।
ফখরুল বলেন, “তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন আমাদেরকে দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান।
“আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।”
ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপির অবস্থান কী হবে- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে এবং মিত্র অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বিএনপি ডিসেম্বরের কথাই বলে এসেছে বলে জানান ফখরুল।
আগে ডিসেম্বরের প্রতিশ্রুতি পেলেও এখন জুন পর্যন্ত সময় বাড়ছে কেন, সাংবাদিকরা ফখরুলের কাছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো আমি বলতে পারব না। এটা উনারা বলতে পারবেন।”
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বাসস জানিয়েছে, নির্বাচন পেছানোর কোনও ইচ্ছা বা পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
“চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের (২০২৬) জুন মাসের কথা বলা হলেও এর মানে এটা নয় যে এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। আমরা বলেছি, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হবে।”
বিএনপির মতামত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
ফখরুলের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর সংবাদ সম্মেনে আসা আসিফ নজরুল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা চলাকালে উনাদের (বিএনপি নেতা) হ্যাপি মনে হয়েছে। অনেক বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং তারা সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়েছে।”
নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার সরকার দ্রুত সেরে ফেলতে চাইছে বলে জানান তিনি।
সংস্কার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, এই উদ্যোগে তার দল সহযোগিতা করছে।
তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন পেছানোর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে সব দলগুলোর, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি।
“বাকি যেসব সংস্কারে আমরা একমত হব, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের (বিএনপির) মূল কথা।”