অবিলম্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “জাতিকে অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, আমরা তো সেটা মেনে নিতে পারব না।
“সুতরাং জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ১৬ বছরের বিনা ভোটের সরকারকে মানেনি, এখন এই সরকারকেও দীর্ঘ দিন মানবে না।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সাবুর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও প্রজন্ম একাডেমির যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমাদের নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘জাতিকে বিভক্ত রেখে কোনও উন্নয়ন হয় না’। আমরাও বলছি, জাতিকে বিভক্ত করে দেশে উন্নয়ন সম্ভব না।”
দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সামনে আরও ঘোলাটে হতে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এই সরকার অবশ্যই জাতিকে একটা আশার আলো দেখাবে। তবে আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে জাতি আপনাদের ওপর থেকে বিশ্বাস হারায়।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ ছয়টি কমিশন করেছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধানরা গতকাল সোমবার তাদের কাজের অগ্রগিত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে অবহিত করেছেন।
সভায় এ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, “বর্তমানে সংস্কারের কোনও লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন নিয়ে আপনারা কোনও কথা বলছেন না। আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। এখন আমরা যদি বলি, আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন।
“সুতরাং কোনোরকম ছলচাতুরি করার প্রয়োজন নেই। জাতিকে সুস্পষ্ট করে জানান- কবে নির্বাচন দিতে চান। জাতি জানতে চায়। জাতিকে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে দেবেন, আর জাতি বসে বসে তামাশা দেখবে- এটা ভাবার কোনও কারণ নেই।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আগে আমরা কারাগারেই থাকতাম, মাঝে মধ্যে কারাগার থেকে বের হতাম। কারাগার ছিল আমাদের আবাসিক ঠিকানা। কারণ, গত ১৬ বছরে আমাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। সরকারকে বলব, আমাদেরকে-জনগণকে শান্তি দিন, স্বস্তি দিন। অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”
তিনি বলেন, “তিন মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। অথচ আপনারা একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। কিন্তু সেটা করছেন না। হয় তো করবেন অথবা করবেন না।”
‘সংবিধান রাফ খাতা নয়, যা খুশি তাই করবেন’
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান ‘সংশোধনের’ যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সমালোচনা করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, “সংবিধান সংশোধন করার আপনারা কে? পার্লামেন্ট ছাড়াই সংবিধান সংশোধন করে ফেলবেন?
“মনে রাখতে হবে, সংবিধান কোনও রাফ খাতা নয়, যা খুশি তাই করবেন। সংবিধান সংশোধন কিংবা পুনর্লিখন করতে হলে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন, যারা স্টেক হোল্ডার রয়েছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা করতে হবে।”
‘বাবার আগে ছেলে হাঁটলে অবস্থা ভালো হবে না’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে জোরেসোরে এই দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে। এটা কিসের দ্বিতীয় স্বাধীনতা? এই কথাটার আবিষ্কার করল কে? কোন গোষ্ঠী আবিষ্কার করল? কেন করল?
“আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি, ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছি। এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কী বোঝাতে চান আপনারা? আমার কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, আপনারা কি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে চান? সংবিধান নিয়ে কিছু করতে হলে যারা স্টেক হোল্ডার তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
‘আমাদের কিছু স্নেহস্পদ ছেলে দেশ পরিচালনায় আছে’ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই- বাবার আগে ছেলে হাঁটলে দেশের অবস্থা ভালো হবে না। মানুষ বিনা ভোটের সরকারকে কখনও মানেনি, মনে রাখবেন- এখনও মানবে না।”
মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপি নেতা সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন।
একাডেমির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, প্রয়াত সাবুর সহধর্মিণী হোসনে আরা বেগম রিনা, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির তথ্য সম্পাদক মজিবুর রহমান, একাডেমির সহ-সভাপতি শারমিন আহমেদ রিনা, নেতা মাইনুদ্দিন আহমেদ তুহিন, আবু হায়দার মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, এস এম কমর উদ্দিন, রমিজ উদ্দিন রুমি, ডা. মামুন হাসিব ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা মোরশেদ আলম, কবীর হোসেন প্রমুখ।