জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করায় সরকারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দলটির দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘নিন্দনীয়, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির পর বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে বিএনপির এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আজকে যাদের (জামায়াত) নিষিদ্ধ করতে চায়, সেই জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যতাও সর্বজনবিদিত।
“একসময় তারা পরস্পরের সঙ্গী ছিলেন। ’৮০র দশকে স্বৈরাচারবিরোধী সর্বদলীয় গণআন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করে স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে স্বৈরাচারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।”
ফখরুল বলেন, “সে সময়েও জামায়াতের তৎকালীন নেতারা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তার পৈত্রিক নিবাসে সাক্ষাৎ করে কোরআন ও জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। উপহার দেওয়া-নেওয়ার সময় উভয় দলের নেতাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি আজও অনেকের মানসপটে রয়েছে।”
“৯০ পরবর্তীকালে জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একত্রে সংসদের ভেতর-বাইরে যুগপৎ আন্দোলনে ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধ করেছিল। সংসদ থেকে একত্রে পদত্যাগ করে গণতন্ত্রকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। সে সময়ে শেখ হাসিনার জামায়াত নেতাদের পাশে বসিয়ে একত্রে কর্মসূচি দেওয়ার ছবি আজও মানুষের দৃশ্যপটে ভাসে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “তখন জামায়াতকে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী বা জঙ্গি মনে হয় নাই। কারণ, তখন জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছিল। আজ জামায়াত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধিতা করছে। তারা আজ আওয়ামী লীগের সঙ্গী নেই বলে আওয়ামী ভাষায় জঙ্গি হয়ে গেছে।
“আজ কোন রাজনৈতিক দল জঙ্গি ,তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন। বাংলাদেশে আজ জঙ্গির সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগ। তাদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাযজ্ঞে গোটা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তারা দেশকে ব্যর্থ ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
বাংলাদেশের সংবিধানে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন করার অধিকার রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “সাংবিধানিক অধিকারবলে যে কেউ যে কোনও রাজনৈতিক দল, সংগঠন করতেই পারেন। আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়সঙ্গত ও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কোনও তদন্ত ছাড়াই কোনও রাজনৈতিক দলকে অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অন্যায় এবং সংবিধানসম্মত নয়। সরকার এসব অগণতান্ত্রিক কাজ করে এক দফা আন্দোলন থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে পারবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দল মত নির্বিশেষে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবাইকে রাষ্ট্রঘাতী-প্রাণঘাতী সরকারের পতনের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এর আগে গত শুক্রবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেই ঐক্যে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্মতি জানিয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, বিএনপির ডাকা জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে তাদের সম্মতি রয়েছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা থেকে ‘সন্ত্রাসী’ দল হিসাবে জামায়াতকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এই দলটির সহযোগী সংগঠনকেও।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানোর পর জামায়াত নির্বাচন করতে না পারলেও রাজনৈতিক দল হিসাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছিল। এখন সেই পথও বন্ধ হয়ে গেল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায় এবং নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখও করা হয়।