জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিষয়টিকে মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে।
বুধবার ঢাকার ডেমরায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, “আপনারা সংস্কার করুন। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ বলতে আপনাদের এতো সংশয় হচ্ছে কেন? গণতন্ত্র হচ্ছে যা কিছু হবে জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। মানুষ তো এসব বিষয়ে সন্দেহ করে। আপনারা সংস্কারের জন্য কমিশন করলেন, সব করলেন।
“এটা কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে, কত দিনের মধ্যে একটা অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনে গত ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি, এমন নির্বাচন নয়। নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কোন দলকে ভোট দিবে, তাদেরকে নির্বাচন করবে- কে সরকার গঠন করবে। স্পষ্টতা ও পথরেখা এই দুইটা হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। আপনারা ডেডলাইন বলতে, সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছেন। এইটা তো মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাকে সবার আগে দেখতে হবে মানুষ কোনটাতে বাঁচে, মানুষ কোনটাতে স্বস্তি লাভ করে।”
এসময় নিম্নআয়ের মানুষ যাতে ঠিকমতো খেতে পারে সেজন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, “অনেক জিনিসের শুল্ক কমিয়েছেন। কিন্তু বাজারে তার কোনও ইফেক্ট নেই। চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এগুলোর কিন্তু দাম কমেনি। এগুলোর জন্য দায়ী সিন্ডিকেট।
“এই আওয়ামী সিন্ডিকেটবাজদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। তা না হলে গণতন্ত্রের যে চেতনা, আন্দোলনের যে চেতনা, যারা জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা নিরাপদ রাখতে এমন কোনও পদ্ধতি নেই যা অবলম্বন করেননি।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদেরকে ধরে তিনি কারাগারে নিয়েছেন। যেসব ছেলে-মেয়েরা কোনও রাজনীতিই করেন না কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছেন, ব্লগার বলে তাদেরকে ধরেছে। তাদের ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। এইভাবে তিনি রাজত্ব করতে চেয়েছেন তার গদিকে রক্ষা করার জন্য।”
শেখ হাসিনার সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, “তিনি যখন দেখেছেন এভাবেও তার গদি নিশ্চিত হচ্ছে না তখন তিনি ধরে ধরে হত্যা করেছেন, গুম করেছেন, ক্রসফায়ার দিয়েছেন। যার চরম প্রকাশ পেয়েছে গত জুলাই মাসে। অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট মাসেও তিনি গণহত্যা করেছেন।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনগণের সঙ্গে ভোট নিয়ে প্রহসনের অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “ভোটারদেরকে তিনি ভোটকেন্দ্রে আসতে দেননি। পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে তিনি ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। উনি জানতেন একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভোট পাবেন না।”
তিনি বলেন, “এক অদ্ভুত পার্লামেন্ট ছিল। একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারি দল, অন্যদিকে তাদেরই অনুগত অন্যদেরকে বিরোধীদল বানাত। কোথায় নির্বাচন, কোথায় জনগণের সমর্থন, কোথায় জনগণের ইচ্ছা যে জনগণ হচ্ছে দেশের মালিক; যে জনগণ ঠিক করবে, নির্ধারণ করবে কে হবে তাদের শাসক।
“এটা জনগণের অধিকার। এই অধিকার যিনি হরণ করেছেন, তার পক্ষে যারা কথা বলেন ওরা তো মানুষ না, ওরা জন্তু-জানোয়ারের আত্মা দিয়ে কথা বলছে।”
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, “তারা যদি মনে করে আবার সেই যুগ আসবে, আবার জনগণের টাকা হরি লুট করা হবে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভর্তুকি দেওয়া হবে।
“আর ওই ভর্তুকির টাকা চলে যাবে শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবারের কাছে, যারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছেন তাদের পকেটে। সেই টাকা দিয়ে তারা বিদেশে আরাম আয়েশে বসবাস করবে। এই নমরুদের রাজত্ব আর বাংলাদেশে হবে না। আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এক প্রবল ভূমিকম্পের মতো এক আলোড়ন তৈরি করে ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটেছে। এটা এক অদ্ভুত আন্দোলন। ছাত্ররা প্রতিটি আন্দোলনে ভ্যানগার্ড থাকে, আন্দোলনের সামনের ভাগে থাকে।
“এবারের আন্দোলনে প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র, হাই স্কুলের ছাত্র, মাদ্রাসার ছাত্র, ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা অকাতরে জীবন দিয়েছে। কী অদ্ভুত সাহসের উপর ভর করে তারা আত্মদান করেছে। এই অনন্য শহীদী আত্মদান পৃথিবীতে খুব বিরল।”
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার, যুবদল নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ।