বান্দরবানে কুকি-চিন সশস্ত্র গোষ্ঠির হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন বা সাধারণ ঘটনা’ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার মতে, সীমান্ত জুড়ে সেনা মোতায়েন এখন সময়ের দাবি।
গত কয়েকদিনে পার্বত্য জেলাটির কয়েকটি ব্যাংকে হামলা, ম্যানেজারকে অপহরণ ও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া বক্তব্যকে ‘কৌতুহলোদ্দীপক এবং উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “কুকি-চিনের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন । তা না হলে ব্যাংক লুট, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানা সম্ভব হবে না।”
শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ‘রহসজ্যজনক’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য একধারে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক এবং উদ্বেগজনক বটে। তিনি বলেছেন, কুকি-চিনের আস্তানা আমাদের র্যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। তারা আমাদের সীমানা পার হয়ে ভিন্ন কোনও দেশে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেভাবে তারা অবস্থান করছিল। এখন তারা কোত্থেকে আসছে, কিভাবে আসছে!”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের রেশ ধরে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত, কুকি-চিন সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও খোঁজ-খবর রাখেননি কিংবা রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কোনও এক অজানা কারণে কুকি-চিনকে তোয়াজ করা হয়েছে। কেনও কুকি-চিনকে এতো তোয়াজ করা হয়েছে এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য।”
কুকি-চিন প্রশাসনের নাকের ডগায় বেড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রুহুল কবীর রিজভীর।
গোয়েন্দাদের ‘ব্যর্থতা’
কুকি-চিনের হামলার ঘটনায় গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, “কুকি-চিন দুই-তিন দিনে যেভাবে বান্দরবানে থানা-পুলিশ ফাঁড়ি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করছে তাতেই এটা স্পষ্ট যে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠি সম্পর্কে দেশের গোয়েন্দারা বেখবর ছিল বা তাদের বেখবর করে রাখা হয়েছিল।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘রিমান্ড’ দাবি
বান্দরবানে কুকি-চিনের ভয়াবহ হামলাকে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কুফল বলে মনে করেন রিজভী।
কেন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গ্রেপ্তার দাবি করছেন তা জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, “উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, উনি সব জানেন। আজকে যে সংঘাতময় পরিবেশ, যে রক্তাক্ত পরিবেশ… এই পরিবেশ যে পূর্বপরিকল্পিত তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেই প্রমাণ হচ্ছে। সুতরাং তাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় তাহলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
মিয়ানমারের মতো ভারত সীমান্তকেও ‘অরক্ষিত’ উল্লেখ করে সেখানকার সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ঘটনা হচ্ছে বলে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ওপর নির্ভরশীল না থেকে অবিলম্বে দেশের সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন এখন সময়ের দাবি।”