Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

তারেক রহমানের দেশে ফেরা আটকে আছে কোথায়

তারেক রহমান ১৬ বছর ধরে রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
তারেক রহমান ১৬ বছর ধরে রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
[publishpress_authors_box]

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো, খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ হলো, বন্দি বিএনপির নেতারাও একে একে জেল থেকে বেরিয়ে এলেন; কিন্তু তারেক রহমান দেশে ফেরেননি এখনও।

পদ জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাই হোক না কেন, দলের নেতাদের কাছে যিনি কাণ্ডারী, কর্মীদের চোখে যিনি ভবিষ্যৎ, সেই তারেক রহমানের এখনও না ফেরা রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশে দণ্ড নিয়ে ১৬ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেকের ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতারা আগে বলতেন, সময় হলেই ফিরবেন তাদের নেতা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই মাস গড়িয়ে গেলেও সেই সময় কি এখনও হয়নি? সেই প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির কর্মীদের মধ্য থেকে। মামলা প্রত্যাহার করে তাকে কেন দেশে ফেরানো হচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষুব্ধও তারা।

সব প্রক্রিয়া সেরে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান- বিএনপি নেতারা এমন কথা বললেও কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান উত্তরাধিকার সূত্রেই বিএনপিতে আসেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তাকে রাজনীতিতে আনতে দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের একটি পদ তৈরি করা হয়েছিল।

মা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বনানীতে তার দলীয় কার্যালয় হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে তারেক ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ আরও অনেক রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরের বছর নির্বাচনের আগে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তারেক। এক সপ্তাহ পর ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি।

সেই থেকে তিনি লন্ডনে রয়েছেন। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোও মুক্তি পাওয়ার পর মালয়েশিয়া যান। তিনি সেখানে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে মারা যান। ফলে বিএনপিতে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসাবে এখন তারেকই আছেন সামনে।  

তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তিনটি বাধা বিষয় আলোচনায় আসে। এক, দেশের চারটি মামলায় তার দণ্ড; দুই, তার পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা; তিন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে যেতে হয়েছিল তারেক রহমানকে। পরের বছর তিনি মুক্তি পেয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান।

মামলার বাধা কোথায় কোথায়

২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই তারেকের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে।

দেড় দশক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা ছিল আদালতের; যা শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রত্যাহার হয়।

আওয়ামী লীগ আমলে চারটি মামলায় দণ্ড হয় তারেকের। এরমধ্যে একটি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা। ফলে দেশে ফিরলে তার কারাগারে যেতে হতো, সেই বাস্তবতা এখনও রয়েছে।

২০১৩ সালে তারেকের বিরুদ্ধে প্রথম মামলার রায় হয়; মামলাটি ছিল ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে। ঢাকার জজ মো. মোতাহার হোসেনের দেওয়া সেই রায়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাজা হলেও খালাস পান তারেক। সেই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে দেওয়া রায়ে তারেককে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে।

এরপর জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালে তারেকের ১০ বছর কারাদণ্ডের রায় হয়। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারও সাজা হয়েছিল।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ২০২৩ সালে আদালত তারেককে ৯ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়। তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানেরও ৩ বছরের সাজা হয় এই মামলায়।

তারেকের সর্বোচ্চ সাজার রায়টি হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায়। ২০১৮ সালে দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে তার এই সাজা হয়।

এই সবগুলো মামলায় তারেককে পলাতক দেখিয়ে তার সাজার আদেশ হয়। ফলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ তার ছিল না। এখন আপিল করতে চাইলে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ১৬ বছর ধরে লন্ডনে রয়েছেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান এখন দেশে ফিরলে কি তাকে কারাগারে যেতে হবে- এই প্রশ্নে বিএনপির সহ আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মামলাগুলো থেকে খালাস বা অব্যাহতি না দিলে দেশে আসলে কিছুদিনের জন্য হয়তো তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে।

“তবে সরকার চাইলে সাজাপ্রাপ্ত মামলাগুলো আপিলের শর্তে জামিন পাবেন, এমন কোনও নির্বাহী আদেশ পেলে দেশে আসতে তার কোনও বাধা নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ মিথ্যা মামলাগুলোর দণ্ড স্থগিত করে তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দেওয়া।”

দণ্ড মাথায় নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরার পরও সম্পাদক শফিক রেহমানকে কারাগারে যেতে হয়নি। তার সঙ্গে একই মামলায় দণ্ডিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশে ফেরার পর তাকে কারাগারে যেতে হলেও পাঁচ দিনের মধ্যে মুক্তি পান তিনি।

দুজনের ক্ষেত্রে দুরকম হওয়ার ব্যাখ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, শফিক রেহমান সাজা স্থগিতের আবেদন করলেও মাহমুদুর রহমান তা করেননি। সে কারণে দুজনের ক্ষেত্রে আলাদা ফল এসেছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তারেকের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের দণ্ড সম্প্রতি সরকার নিজস্ব ক্ষমতায় স্থগিত করেছে। একইভাবে তারেক রহমানের দণ্ড স্থগিতের সুযোগও রয়েছে।

তারেকের আইনজীবী মেজবাহ বলেন, “যদি তার (তারেক রহমান) সাজা হওয়া চার মামলার দণ্ড স্থগিত করা হয়, তবে তাকেও কারাগারে যেতে হবে না।”

তারেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে শতাধিক। সংখ্যাটি বিএনপির আইনজীবীরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে রায় হওয়া চারটিতেই এখন তার কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশে ফিরলে কারাগারে যেতে হলেও তার কারাবাস যে সীমিত কালের জন্য হবে, তা মাহমুদুর রহমানের ঘটনায় স্পষ্ট।

সেক্ষেত্রে তারেকের দেশে ফেরার আইনি বাধা কাটাতে বিএনপি কী করছে- জানতে চাইলে দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তারেক রহমান আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তার সব মামলা আইনিভাবেই মোকাবেলা করে যথাসময়ে দেশে ফিরবেন তিনি।”

আইনজ্ঞরা বলছেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১ উপ-ধারার বিধান মতে সরকার যে কোনও ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। তারেকের ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে।

ঢাকার জজ আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় অভিজ্ঞ আইনজীবী মীর আলমগীর হোসেন বলেন, “যে কোনও ব্যক্তির মামলা থেকে খালাস, প্রত্যাহার বা দণ্ড স্থগিত করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। এতে আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটে না। আমাদের সংবিধানে সরকার ও রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।”

আরেক আইনজীবী আজাদ রহমানও একই মত প্রকাশ করেন।

২০১৬ সালে হজ পালনে লন্ডন থেকে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তারেক রহমান; খালেদা জিয়াও তখন দেশ থেকে গিয়েছিলেন।

পাসপোর্ট জটিলতা কি কারণ

তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে গেলেও পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তার পাসপোর্ট আর নবায়ন হয়নি। তিনি কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যে রয়েছেন, সে বিষয়টি কখনও খোলসা করেনি বিএনপি।

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছেন। ব্রিটিশ হোম অফিস বাংলাদেশ হাইকমিশনে সেই পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে।

তখন বিএনপি আবার তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল, তারেক রহমান যদি পাসপোর্ট ফেরতই দিয়ে থাকে তাহলে তা যেন সরকার দেখায়।

তখন সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট দেখানো হয়নি। ফলে তিনি পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছেন কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে নবায়ন না হওয়ায় তারেক রহমানের হাতে বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট এখন নেই। ফলে তাকে নতুন করে পাসপোর্ট নিতে হবে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার নতুন পাসপোর্ট পাওয়ায় কঠিন হবে না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে কোন স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তা নিয়ে নানা সময়েই কথা উঠেছিল। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় ছোট ভাই কোকোর মৃত্যুর পর কথা ওঠে, শর্ত সাপেক্ষে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় তখন কুয়ালালামপুর যেতে পারেননি তারেক।

তারেক যদি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে থাকেন, তবে তাকে একটি অস্থায়ী ভিসা দেওয়া হতে পারে। তা দিয়ে আবার বিদেশ সফর করা যায় না।

আবার রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হলে তার একটি ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ পাওয়ার কথা। সেটা দিয়ে তিনি বিদেশে কিংবা নিজ দায়িত্বে নিজ দেশেও ফিরতে পারেন।

তারেকের ক্ষেত্রে কোনটি ঘটেছে, তা কখনোই স্পষ্ট জানা যায়নি।

২০১৪ ও ২০১৬ সালে তারেক রহমানকে সৌদি আরবে ওমরাহ ও হজ পালনে যেতে দেখা গিয়েছিল। শেষ বার দেশ থেকে খালেদা জিয়াও হজে গিয়েছিলেন। সৌদি আরবে মিলিত হয়েছিলেন দুজন। সেখান থেকে তারেক আবার লন্ডন ফিরে যান।

খালেদা জিয়া এক দশক আগে লন্ডনে গেলে সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।

পাসপোর্টহীন তারেক তখন ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন বলে কথা উঠেছিল।

সদ্য ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লি সরকার ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিচ্ছে বলে খবর চাউর হয়েছে। তিনিও এখন পাসপোর্টবিহীন। গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে।

পাসপোর্ট না থাকলে ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে দেশে ফেরাও যে বড় জটিলতার কোনও বিষয় নয়, তা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরাই প্রমাণ করে।

২০১৫ সালে গুম হওয়ার পর ভারতের মেঘালয়ে রাজ্যে যখন সালাহউদ্দিনকে পাওয়া গিয়েছিল, তখন তার সঙ্গে কোনও পাসপোর্ট ছিল না। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কারাগারেও যেতে হয়েছিল।

মামলার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ট্রাভেল ডকুমেন্ট জোগাড় করেন সালাহউদ্দিন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল দেখে সম্প্রতি দেশে ফেরেন তিনি।

ফলে তারেক যদি দেশে ফিরতে চান, তবে পাসপোর্ট এখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

তিনি যদি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়েও থাকেন, তাতেও তার দেশে ফেরায় বাধা নেই। তবে তিনি যদি নিজ দেশে নিরাপদে ফেরেন, তাহলে তার রাজনৈতিক আশ্রয় আর কার্যকর থাকবে না।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এক সভায় তারেক রহমান। তখন তিনি ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

রাজনৈতিক বাধা কি আছে

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হতো, দেশে ফিরলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন তারেক রহমান। ফলে তার দেশে ফেরা নিরাপদ নয়।

তখন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলতেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে ‘জেলের ভাত’ খেতে হবে।

ফলে ওই সময়ে তারেকের দেশে ফেরার কোনও উদ্যোগ ছিল না। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেড় দশক পর রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে ফিরেছে বিএনপি।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই তাদের আমলে দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে সাজা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। বিএনপির দণ্ডিত বিভিন্ন নেতাও মুক্তি পেয়েছেন। এমনকি যে মামলায় তারেকের সঙ্গে দণ্ডিত মামুন, তিনিও এখন মুক্ত।

ফলে তারেকের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে এই সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলই দেখা যাচ্ছে। এখন বিএনপি কী চায়, তা বড় বিবেচ্য।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নাল আবেদীন এখন লন্ডনে রয়েছেন।

তিনি সেখান থেকে টেলিফোনে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দেশে ফেরার সময়ের সিদ্ধান্তটা উনার নিজস্ব বিষয়।”

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতারাই কথা বলেছেন। তবে তার মুখ থেকে কখনও কোনও কথা আসেনি।

বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে তারেক রহমানের জন্য একটি চেয়ার সংরক্ষিত থাকে; তিনি ভার্চুয়ালি সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন।

বিএনপি কী করছে

তারেক রহমান ডিসেম্বরে কিংবা জানুয়ারিতে দেশে ফিরতে পারেন, এমন একটি গুঞ্জন চলেছে। বলা হচ্ছে, সেই পথ করতেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অধিকাংশ শীর্ষনেতা এখন লন্ডনে।

জয়নাল আবেদীনসহ ফোরামের নেতাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান আসাদও এখন লন্ডনে। তিনি বিএনপির সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক।

লন্ডনে থাকা এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উনাকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরেই দেশে ফিরবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সরকার চাইলে যেকোনও সময়ই ফিরবেন।”

ডিসেম্বরেই কি তারেক রহমান দেশে ফিরছেন- জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ফিরবেন, ফিরতে তো হবেই। যে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিহিংসায় সব মামলায় ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়েছে।

“এখন তো আমি মনে করি, সেই সাজাগুলোর রায় আইনিভাবেই কার্যকর থাকা উচিৎ না। অন্তর্বর্তী সরকার এটি দ্রুত নিরসন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।”

নয়াপল্টনের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন তারেক রহমান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।

দলীয় পর্যায়ে থেকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাকসচিব রুহুল কবির রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা তো এখন ক্ষমতায় নেই, আমরা আমাদের দাবি জানাতে পারি। সেটিই জানাচ্ছি, আমাদের নেতারা, মহাসচিব বারবার তাগাদা দিচ্ছেন এ বিষয়ে।”

তারেক রহমানের সাজাগুলোর নির্বাহী আদেশে বাতিল করার ওপর জোর দিচ্ছেন রিজভী।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, “এখানে দুটো বিষয় আছে- যদি তিনি (তারেক) আইনের সব বিষয় মান্য করেন, তবে আমাদের সিআরপিসির মধ্যে রয়েছে তিনি কীভাবে আপিল করতে পারবেন এবং কীভাবে আপিল করে তিনি মুক্ত হতে পারবেন।

“আর মামলাগুলো যেহেতু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সে কারণে সরকার যদি ইচ্ছা করে তাহলে তাকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। অব্যাহতি দিলে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই।”

তারেকের ফেরার বিষয়ে কথা বলতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনে একাধিকার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত