বাংলাদেশের অর্থনীতি আবারও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসতে হলে জরুরি ও সাহসী সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, এই সংস্কার দেশে মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদনের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ অংশে এমন মতামতই তুলে ধরা হয়েছে। পরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়া, বিশেষ করে নারী ও শিক্ষিত তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত হয়েছে।
বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ নানা অভিঘাত দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে। দুর্বল ভোগব্যয় ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
“তবে বিনিয়োগ এবং শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়িয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আবারও ৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এরপর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আবারও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথে ফিরে আসবে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি আবারও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে হলে জরুরি ও সাহসী সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়োজনীয় সংস্কার দেশের অর্থনীতিকে আবারও শক্তিশালী, অন্তর্ভূক্তিমুলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সামগ্রিক বেকারত্বের হার কমে আসার মধ্যেও বিশেষ করে শহরাঞ্চলে উচ্চ বেকারত্ব ছিল। শহুরে শিক্ষিত যুবকদের জন্য কাজের প্রাপ্যতা কমে যায় এবং তৈরি পোশাক খাতের মতো বড় শিল্পে কর্মসংস্থান স্থবির হয়ে পড়ে। ২০১৬ সাল থেকে ঢাকায় কর্মসংস্থান কিছুটা বাড়লেও চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেট তিন বিভাগের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
গত অর্থবছরের খাদ্য ও জ্বালানি খাতের কারণে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭ শতাংশে উঠে গিয়েছিল এবং আগামীতেও এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকবে বলেও আশংকা করছে বিশ্বব্যাংক।
তবে সরবরাহ খাতের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে পারলে মধ্যমেয়াদে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি সংকোচন এবং শক্তিশালী রেমিটেন্সের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। প্রতিবন্ধকতার কারণে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমলে তা পরে পুনরুদ্ধার হয়েছে। আমদানি পেমেন্ট ঘাটতির ভারসাম্যও উন্নত হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আলোকে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ ও নারীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে অসুবিধায় পড়েছেন।
“কিন্তু বারবার বাংলাদেশ প্রতিকূলতার মধ্যেও অসাধারণ সহনশীলতা ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, জরুরি ও সাহসী সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসতে পারবে এবং এর মাধ্যমে যুবসমাজের জন্য লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”


