বলিউডের জন্য এই বছরটা ছিল স্বস্তির। প্রায় আট মাস সুপার ডুপার হিট ছবির যখন কোন দেখা নেই, তখন ‘স্ত্রী টু’ এলো স্বস্তি হয়ে। বক্স অফিসও তার চিরচেনা উদ্যোমে ফিরে গেলো। সঙ্গে যুক্ত হলো পুরোনো সিনেমা আবারও মুক্তি দেয়ার ট্রেন্ড।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, পুরোনো সিনেমা নতুন করে মুক্তি দেওয়ার এই ট্রেন্ড কি আসলেই ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে নিচ্ছে? নতুন সিনেমার অবর্তমানে এই ট্রেন্ড বক্স অফিসকে কতটা লাভবান করছে সেই প্রশ্ন ঘুরছে বোদ্ধা মহলে।
নাকি এটি কেবল মাত্র একটি ট্রেন্ড?
চলচ্চিত্র সমালোচক রোহিত জাসওয়াল এর মতে, পুরানো সিনেমার নতুন করে মুক্তির ফলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ বৈ ক্ষতি হচ্ছে না।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “শত কোটি টাকার ব্যবসায অবশ্য হচ্ছে না। বেশ কিছু প্রতিবেদন তা দাবি করলেও, এটা আসলে তেমন বড় কোন ঘটনা না। তারপরও ‘তুম্বাড়’ ভালো সাফল্য দেখিয়েছে, ‘রকস্টার’, ‘লেয়লা-মাজনু’, এবং ‘বীর জারা’ এর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এই পুনঃমুক্তি প্রাপ্ত সিনেমাগুলো ৬০-৭০ কোটি রুপি আয় করেছে। এই অর্জন আবার একেবারে ফেলেও দেওয়া যায়না।”
সিনেমাগুলো খুব বড় সাফল্য না পেলেও, অন্তত ফ্লপ হয়নি। আর তাই রোহিত মনে করেন, এই ট্রেন্ড সামনের বছরেও বহাল থাকবে।
তিনি বলেন, “সিনেমাগুলো বক্স অফিসে মোটামুটি ব্যবসা ধরে রাখতে পেরেছে। আর তাই সামনের বছরও এই ট্রেন্ড দেখা যাবে। সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহগুলো খুব বেশি লাভবান না হলেও মাল্টিপ্লেক্সগুলো কিন্তু পুনঃমুক্তির কারণে সচল থাকছে।”
অনলাইন ভিত্তিক টিকেট বুকিং সাইট ‘বুক মাই শো’-এর চিফ অপারেটিং অফিসার আশিষ সাক্সেনার মতে, এই ট্রেন্ড মূলত দর্শকদের বড় পর্দায় সিনেমা দেখার আগ্রহ আর ভালোবাসাকেই ইঙ্গিত করে। এই ওটিটির যুগে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাকে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে রাখেন।
আশিষ বলেন, “পুনরায় মুক্তির মূল ব্যাপারটি হলো- মানুষ বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে চায়। ইতিবাচক দিকটি হলো, এই সিনেমাগুলোর অনেকগুলোই ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে। এখানে বার্তাটি হলো, সিনেমার ব্যবসা পর্দাতে টিকে থাকবে। আর সিনেমা যদি কালজয়ী হয় তবে মানুষ হলে ভিড় করবে তা দেখতে।”
সাক্সেনার মতে এই ট্রেন্ড “চিরকালীন ক্লাসিকগুলিকে” আরেকবার সুযোগ দেওয়ার মতো।
তিনি বলেন, ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, এবং ‘মুঘল-ই-আজমের’ মতো ক্লাসিক এর পুনঃমুক্তি সবসময়ই সফল হয়েছে। সাম্প্রতিক পুনঃমুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা যেমন ‘তুম্বাড়’, ‘লেয়লা মাজনু’, ‘বীর জারা’ এবং ‘রকস্টার’ এই ট্রেন্ডে নতুন জোয়ার এনেছে।”
সিনেমার সাফল্য মানেই বক্স অফিস নয়। জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে যদি দেখা যায়, তবে বলতে হয়- দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়া মানে বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। তাই এমন সুযোগ এলেই তা লুফে নিতে হবে। আদায় করে নিতে যতটা পারা যায়।
পুনঃমুক্তি প্রাপ্ত অনেক ছবি নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভালোবাসা আর সৃজনশীল গল্প। তাই দ্বিতীয়বার মুক্তির আরেক মানে হলো দর্শকের মনে স্থান করে নেওয়া আর তাদের দেখার অভিজ্ঞতায় নতুন কিছু যুক্ত করা।
আসলে সিনেমার সাফল্য-ব্যর্থতা জীবনের মতোই। তাই বলতে হয়, সাফল্য হলো সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারা। আর আরেকবার সুযোগ পেলে তা কাজে লাগান।
ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে