Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বইমেলা ২ দিন বাড়ানোর দাবি, বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ

Book-Fair_Jibon-amir--(6)
Picture of মেরিনা মিতু

মেরিনা মিতু

বইমেলার বাকি আর মাত্র ছয়দিন। মাসের শেষ শুক্রবার মেলায় ভিড় যে থাকবে তা ধারণাতেই ছিল। বেলা ৩টা থেকে মেলায় জনসমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা হতেই তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। কিন্তু তাতে উৎকণ্ঠা কাটেনি প্রকাশকদের। আশা অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি। তারা বলছেন, অনেকে বই দেখে কিন্তু কেনে না।

অধিবর্ষ হওয়ায় এবার ফেব্রুয়ারি শেষ হবে ২৯ দিনে। এর পরের দুই দিনই শুক্র ও শনিবার। তাই মেলার সময় ওই দুই দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে প্রকাশকরা। তাদের দাবি, মেলার প্রস্তুতি ও বৃষ্টির কারণে প্রথম দিকে প্রকাশকরা যথাযথভাবে বিক্রি শুরু করতে পারেনি। ছুটির দুই দিন মেলার সময় বাড়াতে পারলে বাড়তে পারে বই বিক্রিও।

মেলার শেষ সময়ে বই বিক্রি নিয়ে প্রকাশকরা যখন হতাশা প্রকাশ করছেন তখন শিশুপ্রহরের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

আর ছুটির দিন বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় জয়ের ‘ভি’ চিহ্ন দেখান খাবার দোকানিরা।

মেলার সময় বাড়ানোর দাবি

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মেলার সময় দুদিন বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতি।

চিঠিতে বলা হয়, প্রথম তিন দিন প্রস্তুতি ও বৃষ্টির কারণে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকরা যথাযথভাবে বিক্রি শুরু করতে পারেননি। সে কারণে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আগামী ১, ২ মার্চ শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় অমর একুশে বইমেলার সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মেলার সময় বৃদ্ধি বইমেলা কমিটির একক সিদ্ধান্তের বিষয় নয়।

“ডিএমপির কিছু নির্দেশনা আছে, সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হয়। তাছাড়া, গণপূর্ত বিভাগও মাঠের সংস্কারকাজের জন্য ১ মার্চে মাঠ ছেড়ে দিতে বলেছে।”

“প্রকাশকরা যে চিঠি দিয়েছে, তা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। কোনও সিদ্ধান্ত হলে তা মন্ত্রণালয় থেকেই হবে” যোগ করেন তিনি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকাশকদের দাবি নিয়ে সব মহলে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

প্রথম দিকে বৃষ্টির কারণে অনেকে বইমেলায় আসতে পারেনি বলে জানান বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা ও আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি।

সময় যদি দুদিন বাড়ানো হয়, তবে তারা বইমেলায় আসতে পারবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এবার বই বিক্রি হয়েছে খুবই কম। দুটি ছুটির দিন পেলে বিক্রি কিছুটা বাড়বে।”

শিশুপ্রহরে সন্তুষ্টি

সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সকালে বইমেলায় আয়োজন করা হয় শিশুপ্রহরের। আর শিশুপ্রহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সিসিমপুর। এদিন তাই সন্তানদের নিয়ে অনেক অভিভাবক আসেন বইমেলায়।

শুক্রবার মায়ের সঙ্গে সিসিমপুরের আয়োজন উপভোগ করছিল আরিয়ান আরমান। তখন টুকটুকি, হালুমদের নিয়ে শিশুদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে সচেতন করছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

আরিয়ান বলে, “আমি বড় হয়ে বাইক চালাব। শিকুর মতো ট্রাফিক আইন মেনে চলব।”

সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসা অভিভাবকরা মনে করছেন, বইমেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুপ্রহর। সন্তানের বিকাশে এটি দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বইমেলায় আসেন শামিম-সাজেদা দম্পতি। শামিম বলেন, “বইমেলা আমার দুই সন্তানের প্যারেন্টিংয়ে খুব সাহায্য করেছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, শিশুপ্রহরের সিসিমপুরের আয়োজনের কথাই বলব।”

“সত্যি বলতে শিশুরা সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর দ্বারা খুবই প্রভাবিত। সিসিমপুর দেখে তারা কোনও অভিযোগ ছাড়া সবজি খাচ্ছে, মাছ খাচ্ছে। যেটা নিয়ে কিছুদিন আগেও বেশ সমস্যায় পড়তে হতো। আর এখন নিজেরাই ঠিক সময়ে খেতে যায়, ঘুমায়, ব্রাশ করে, পড়তে বসে।”

আরেক অভিভাবক সালাউদ্দিন তালুকদার বলেন, “খেয়াল করে দেখলাম, এখানে আনন্দের মধ্যে দিয়ে সে দ্রুত অনেক কিছু শিখছে, অভ্যাস গড়ে তুলছে। আমরা যেখানে অনেক সময় ব্যয় করেছি, সেটি সহজ হয়েছে এই আয়োজনের মাধ্যমে।”

ভিড় বেশি বিক্রি কম

মেলায় উপচেপড়া ভিড় কিন্তু বিক্রির অবস্থা নাজুক। প্রকাশকদের ভাষ্য, মানুষ এখন আর বই কিনে না। দিন যত যাচ্ছে বইয়ের পাঠক কমছে।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বই বিক্রি সবচেয়ে কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, এরকম চলতে থাকলে নিয়ম পালনের মেলা হয়তো হবে, তবে পাঠক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে একসময় প্রকাশনীগুলোও টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ফাগুন ও একুশের রেশ এখনও দেখা গেল মেলায়। বাসন্তি বা সাদা-কালো পোশাকে দর্শনার্থীরা মেলার স্টলে স্টলে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু ব্যস্ত থাকছেন ছবি তোলা বা ভিডিও করায়।

দর্শনার্থীর ভিড়ে দম ফেলার সুযোগ নেয় বিক্রয়কর্মীদের। তারপরও তাদের কণ্ঠে হতাশা। বলছেন, অনেকেই বই দেখতে চাইছেন, কিন্তু কিনছেন না।

পরিস্থিতি পুরোপুরি তুলে ধরেন সংবাদ প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী রাসেল মাহমুদ। তিনি বলেন, “আপনি দশ মিনিট এখানে দাঁড়ান। দেখেন আমি এক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারি কিনা।

“সবাই বই চায়, দেখে…ছবি তুলে, তারপর চলে যায়। পঞ্চাশজন বই দেখতে চাইলে একজন কেনে, আবার কখনও কখনও সেটাও হয় না।”

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী শাম্মী আক্তার বলেন, “দেখেন এত এত মানুষ, কয়জনের হাতে বই আছে? সবার হাতে ফুল আছে, খাবার আছে, বেলুন আছে, শুধু বই নাই।”

পাঠক তৈরি হচ্ছে না, তাই বেচা বিক্রিও ঠিক মতো হচ্ছে না– এমনটাই মনে করেন আহমেদ প্রকাশনীর প্রকাশক মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে বইমেলা শুধু নামকাওয়াস্তে মেলা হয়েই থাকবে।”

প্রতিবছরই বই বিক্রি কমছে- উল্লেখ করে অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, “অর্থনৈতিক মন্দা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকে মেলায় এসে বই কিনতে পারেননি। এবার এখনও পরিসংখ্যান জানি না, তবে ধারণা করছি যে আগের থেকে বিক্রি এবার আরও কম।”

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর মোট ৪৭ কোটি টাকার বই কিনেছেন ক্রেতারা, আগের বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বইমেলা

খাবার দোকানিদের ‘ভি’

বই বিক্রি নিয়ে প্রকাশক-বিক্রয়কর্মীদের অসন্তুষ্টি থাকলেও খাবার বিক্রিতে জয়ের চিহ্ন দেখাচ্ছেন বইমেলার খাবার দোকানিরা। ছুটির দিনে কেমন বিক্রি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে দেখিয়েছেন ‘ভি’ চিহ্ন।

হাজী বিরিয়ানির বিক্রয়কর্মী ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তেহারি পরিবেশনে। কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে, ভেতরে লেগে থাকা ভিড়ের দিকেই ইঙ্গিত করেন তিনি। জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছিলেন অনেকে। লম্বা লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন আরও অনেকে।

আশেপাশে ফুচকা-চটপটি, মমোসহ পিঠার দোকানগুলোতেও দেখা যায় একই চিত্র। ১০০ টাকা দিয়ে এক প্লেট মমো নিয়েছেন মেলায় ঘুরতে আসা সায়দাবাদের জাবেদ আহমেদ। তিনি বলেন, “এখানে দাম একটু বেশি। কিন্তু একদিনই তো, প্রতিদিন তো আর খাব না।”

আনন্দ ফুটেছিল আইসক্রিম বিক্রেতা আনোয়ার মিয়ার চোখেমুখেও। তিনি বলেন, “আইজ মনে হইতাছে মেলা শেষ হওয়ার আগে আমার মাল শেষ হইয়া যাইব।”

কথাগুলো বলতে বলতেই হাত তুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত