Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

বিতর্ক সঙ্গী করে শুরু হচ্ছে বইমেলা

বইমেলা
প্রস্তুতি শেষ, এখন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য অপেক্ষা বইমেলা প্রাঙ্গণের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

‘পড়ো বন্ধু গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।

বই ঘিরে বিপুল এই কর্মযজ্ঞ শুরু ঠিক আগ মুহূর্তে বিতর্কের ঝড়ের মধ্যে পড়ে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি।

বিতর্কের শুরু বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে। ২০১৪ সালে ‘মুসলমানমঙ্গল’ গ্রন্থের জন্য এই সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার।

১০ বছর পর সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জন্ম দেন নতুন বিতর্ক।

গত রবিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত চিঠি ও এক লাখ টাকার চেকের ছবি সংযুক্ত করে পোস্ট দেন জাকির তালুকদার।

সেখানে জানান, পুরস্কারের অর্থ এবং সম্মাননা স্মারক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এতে নিজেকে ভারমুক্ত লাগছে বলেও জানান।

এই পদক্ষেপের কারণ জানতে চাইলে জাকির তালুকদার বলেন, এর মাধ্যমে বাংলা একাডেমির গণতন্ত্রহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করেছেন তিনি।

বাংলা একাডেমি মান ধরে রাখতে পারেনি অভিযোগ করে ২৫ বছর ধরে কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন না হওয়া নিয়েও তোলেন প্রশ্ন। যে বিষয়টি নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে ওঠা অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন মহাপরিচালক নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, “১৯৯৯ সালের পর থেকে একাডেমিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে থাকে। তখন পরিষদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় দেখা যায়, ভোটার সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাংলা একাডেমির ফেলো, সদস্যরা এ নিয়ে আপত্তি জানান। তারা এ নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংশোধনের জন্য বলেন। পরে এ প্রক্রিয়াটি নানা বিতর্কে স্থগিত থাকে। নির্বাচনের বিধিমালা ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের বিষয়টি এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে।”

বাংলা একাডেমির মান নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেক আবর্জনার ভেতর থেকেও আমরা ভালো মানের লেখা খুঁজে পাই। বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চা এখন অনেক বেড়েছে। কম বয়সি অনেক লেখক ভালো ভালো পুরস্কার পাচ্ছেন।”

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ ঘোষণা করা হয়। যা মেলার উদ্বোধনী দিনে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম-২’সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা ঘুরে দেখবেন।

মেলা খোলা থাকবে যতক্ষণ

এবারের বইমেলা অধিবর্ষের বলে ২৯ দিন পাওয়া যাবে। ছুটির দিন ছাড়া মেলা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রাত সাড়ে আটটার পর মেলার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা যাবে না।

ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার শিশুদের জন্য বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকবে। আর সেদিন মেলা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

পরিধি ও বিন্যাস

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, এবারের মেলায় প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। এগুলো হলো-দোয়েল চত্বর, টিএসসি, মন্দির গেইট ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ গেইট।

ধুলো কমাতে মাঠের কিছুটা অংশে ইট বিছানো হবে। এ বছর মোড়ক উন্মোচন এবং ‘লেখক বলছি’ মঞ্চকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, প্রয়োজনে ঝড়-বৃষ্টিতে সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

বইমেলার পরিধি ও বিন্যাস এবার অপরিবর্তিত থাকছে। গত বছরের মতো এবারও মোট সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আয়োজিত হবে মেলা। স্টল বিন্যাসের ক্ষেত্রে ফাঁকা জায়গা কম রেখে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাছাকাছি রাখা হবে।

তবে এবার লিটল ম্যাগ চত্বর নিয়ে আসা হয়েছে মুক্তমঞ্চের পাশে। টিএসসির দিকের ফটক দিয়ে মেলায় প্রবেশ করলে হাতের ডানে একেবারে শুরুতেই পাওয়া যাবে এই চত্বর। বাঁ দিকে এবার কোনো স্টল থাকছে না। অন্যদিকে মন্দিরের ফটক দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলেই পাওয়া যাবে শিশু চত্বর।

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবছর নতুন ২০টি প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী অংশে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে ৪৫৯টি প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৯৬টি প্রতিষ্ঠান এক ইউনিট, ১০৩টি প্রতিষ্ঠান দুই ইউনিট, ৩৯টি প্রতিষ্ঠান তিন ইউনিট এবং ২০টি প্রতিষ্ঠান চার ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে।

প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ৩৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু চত্বরে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৭টি প্রতিষ্ঠানকে। যেখানে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান এক ইউনিট, ২০টি প্রতিষ্ঠান দুই ইউনিট, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিন ইউনিট এবং তিনটি প্রতিষ্ঠান চার ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে নতুন বইয়ের খবর। মেলা চলাকালে প্রতিদিন থাকবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনাসভা। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে থাকছে বই নিয়ে লেখক-পাঠকের মতবিনিময়।

প্রকাশকদের জন্য পুরস্কার

অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণ করা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশ করা বইয়ের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এ ছাড়া শিশুতোষ বইয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০০টি বই। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

বিশেষ নিরাপত্তা বলয়

বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। মেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, মেলার ভেতরে ও বাইরে সাদাপোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকবে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট, বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল এবং ডগ স্কোয়াড। সাইবার পেট্রোল ও ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারিতে থাকবে মেলা।

এছাড়া, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে বইমেলা ঘিরে রয়েছে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার। নিবিড় তদারকির মধ্য দিয়ে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য থাকবে ফায়ার টেন্ডার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা।

মেলার প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের আর্চওয়ে পেরিয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে ডিএমপি।

ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ফটক খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে মেলায় প্রবেশ আরও সহজ হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত