ঢাকায় বসন্ত বরণের আয়োজন মানেই যেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের বটতলার ঘিরে জমে ওঠা উৎসব। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা।
ভোর থেকেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখ হতে থাকে বটতলাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাগুলো। যদিও নগরীর বিভিন্ন স্থানেই বিচ্ছিন্নভাবে বেশকিছু আয়োজন হয়েছে বসন্ত বরণের, তবে উৎসবের আমেজ পেতে রাজধানীবাসী বেছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার এই আয়োজনকেই।
চারুকলা ছাড়িয়ে শহীদ মিনার, কার্জন হল, অপরাজেয় বাংলা, হাকিম চত্বর, ভিসি চত্বর, ফুলার রোড কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সব জায়গায় ছিল মানুষের মিছিল। রঙিন পোশাক পরে, খোঁপায় ফুল গুঁজেম বাহারি সাজ পোশাকে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলেন নারীরা।
সঙ্গী পুরুষরাও অবশ্য কম যাননি। হলুদ, লাল, সবুজ, বাসন্তী থেকে নীল, কী ছিল না তাদের পাঞ্জাবির রং!
জনসমাগমকে ঘিরে পুরো এলাকায় বসেছিল ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের মেলা। আজ যেন ছিল রেশমি চুড়ি, পুঁতির মালা, রংবেরঙের খেলনা, বাঁশি, হাওয়াই মিঠাই, চটপটি, ফুচকা, ভেলপুরি, মুড়িমাখা আর আইসক্রিম বিক্রেতাদের দিন।
প্রতি বছরের মতো এবারও চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ভোরে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সকাল সোয়া ৭টার দিকে বরেণ্য সেতারবাদক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাগ বসন্ত মুখারী বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
তারপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। বরেণ্য শিল্পীদের একক পরিবেশনার পাশাপাশি গান ও নাচ পরিবেশন করে শিশু-কিশোররা। ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।
পাশাপাশি বসন্তকথন পর্ব, প্রীতিবন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময়ও হয় সকালের অনুষ্ঠানে। বসন্তকথন পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ।
সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১০টার দিকে শুরু হয় বসন্ত-আনন্দ শোভাযাত্রা। চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসে শোভাযাত্রাটি।
এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সকালের পর্ব।
বিকালে ছিল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের নানা পরিবেশনা, দলীয় সংগীত ও আবৃত্তিও।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় বসেছিল সমগীতের বসন্ত উৎসবের আয়োজন। ছিল আমাদের পাঠশালা ও শিশুদের জন্য আমরার শিশু নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। আদিবাসী ভাষার গান নিয়ে উৎসবে ছিল ব্যান্ডদল মাদল।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চলছে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব ১৪৩০’। চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে প্রতিদিন দেখানো হচ্ছে চারটি করে সিনেমা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদের এ আয়োজনে আজ দেখানো হয়েছে, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত ঘুড্ডি, ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত আবহমান, গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত মনপুরা এবং হিমেল আশরাফের প্রিয়তমা সিনেমা।
আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ৫০ টাকা, যা পাওয়া যাবে উৎসবের প্রতিদিন, টিএসসির প্রবেশমুখে।