রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পরে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ছিল সুলিমান, এসলাম, আল হাসান ও আনাস। সম্পর্কে সহোদর। মহা উৎসাহ নিয়ে এই চার কিশোর দেখছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ ম্যাচ।
তোমরা কি ঢাকায় থাকো? প্রশ্নটা করতেই হাসিমুখে সুলিমান বলল, “ না। প্রথমবার আমরা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছি।” এই কিশোরদের জন্মভূমি লিবিয়া। সবাই থাকে রাজধানী ত্রিপোলিতে।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বাড়তি তথ্য যোগ করলো সুলিমান, “শুধু ফিলিস্তিনের ফুটবল ম্যাচ দেখব বলেই আমরা বাংলাদেশে এসেছি।”
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের হোম ভেন্যু বলে কিছু নেই। দেশে দেশে খেলে বেড়ায় ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা। ২১ মার্চ কুয়েতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ছিল ফিলিস্তিনের হোম ভেন্যু। সেই ম্যাচটিও কুয়েতে বসে দেখেছে সুলিমানের পরিবার।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার ভিআইপি গ্যালারির পশ্চিম দিকে বসেছিল এই কিশোরেরা। আর তাদের বাবা-মা বসেছিল আরেক পাশে।
ফিলিস্তিনের এই খুদে দর্শক মাঠে এসেছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দেখতে। শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে ঘরে ফিরেছে এই দর্শকেরা। মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায়। ছবি: সকাল সন্ধ্যা।
ফিলিস্তিনে রয়েছে এই পরিবারের অনেক আত্মীয় স্বজন। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি তাদের রয়েছে অকুন্ঠ ভালোবাসা। আল-হাসান বিরতির ফাঁকে সেটাই বলছিল, “ ফিলিস্তিনে আমাদের অনেক আত্মীয় আছেন। যুদ্ধের কারণে সেখানে যাওয়া হয় না। কিন্তু যেখানেই ফিলিস্তিনের ফুটবল ম্যাচ থাকে সেখানে ছুটে আসি।”
এই ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিল ৫১৯৫ জন দর্শক। এদের মধ্যে ছিল প্রচুর ফিলিস্তিনি দর্শক। সবার হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। সেভ প্যালেস্টাইন লেখা টি-শার্ট পরেও অনেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন।
বাংলাদেশের পড়াশোনা করতে আসা বেশ কিছু ছাত্র এসেছিল মাঠে। শেষ সময়ের গোলে বাংলাদেশ হেরেছে ফিলিস্তিনের কাছে।
দিনশেষে তাই হাসতে হাসতেই ফিরেছেন এই দর্শকেরা। এদেরই একজন মোহাম্মেদ ইসহাক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ইসহাকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজায়। ৫ বছর ধরে তিনি রয়েছেন বাংলাদেশে। হাতে ধরা ফিলিস্তিনের পতাকা । ম্যাচ শেষে তিনি বলছিলেন, “কখনোই মনে হয়নি এই ম্যাচ ফিলিস্তিন হারবে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে ম্যাচটি জিতব। এই জয় ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য।” দলের একমাত্র ফুটবলার মোহাম্মেদ সালেহ উঠে এসেছেন গাজা থেকে। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন “সালেহর খেলা খুব ভালো লাগে আমার।”
মানবিক সঙ্কটে রয়েছে গাজা। প্রতিদিনই মানুষ মরছে সেখানে। এই ম্যাচের জয়টা একটু হলেও গাজার মানুষকে আনন্দ দেবে বলে মনে করেন ইসহাক, “ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বিশেষ করে গাজার অবস্থা ভয়াবহ। বোমা হামলা হচ্ছে সেখানে প্রতিদিন। ইসরায়েল সৈন্যরা পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে। সেখানে আমাদের কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে ইসরায়েলে কাজ করতো। তারা এখন কিছুই করতে পারছে না। না খেয়ে আছে। পশ্চিম তীরের মানুষেরা না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেখানে মিলিটারি কার্ফু দিয়ে রেখেছে। ওরা কেউ বাইরে যেতে পারে না। কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। যারা সেখানে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তাদের জন্য আজকের জয়টা আনন্দের সামান্য উপলক্ষ্য হতে পারে।”