Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

বিপিএলের টানা দ্বিতীয় শিরোপা বরিশালের

borishal
[publishpress_authors_box]

শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান। রিশাদ হোসেন অত সমীকরণে গেলেন না। হুসেন তালাতের প্রথম বলেই মেরে দিলেন ছক্কা। ওই বিশাল শটে চিটাগং কিংসকে হারানোর এপিটাফও লেখা হয়ে গেল ফরচুন বরিশালের। পরের তিন বলে দুই সিঙ্গেল নিয়ে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হলেন তামিম ইকবালরা।

ফাইনালের যে আমেজ দেখার ছিল তা পাওয়া গেল না। খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংসের ম্যাচের মতো শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা হলো না। বরং একপেশে লড়াইয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নিল ফরচুন বরিশাল।

চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিপিএল শ্রেষ্ঠত্ব বরিশালের। এই আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে জোড়া শিরোপা নিশ্চিত করেছে তারা। এতদিন চার শিরোপা জয়ী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পর শুধু ঢাকা ডায়নামাইটসের একাধিক শিরোপা ছিল।

ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে চিটাগং। জবাবে ব্যাটিংয়ে শক্তিশালি বরিশাল ১৯.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় এই রান।

সকালের সূর্য দিনের আভাস দেয়। বিপিএলের ফাইনালে সেই আভাস মিলেছিল টসের সময়। মিরপুরে এখন ভালো উইকেট, অনেক রান হয়। সেই সঙ্গে শীতের শেষের কুয়াশা বোলারদের বল গ্রিপ করা কঠিন করে তোলে। বল নরম থাকায় সুইং ও সিম কম ধরে।

তাই টস জিতে মিরপুরে এখন আগে বোলিং করাই রীতি। বরিশাল অধিনায়ক তামিম সেই কাজটাই করেছেন। টস জিতে আগে বোলিং নিতে দ্বিধা করেননি। তখনই সবাই বুঝে যায় ম্যাচটি জিততে যাচ্ছে ব্যাটিং শক্তি নির্ভর বরিশাল।

এমন উইকেটে ২২০-২৫ রান না হলে লড়াই করা কঠিন। চিটাগং সেই শুরুটা পেয়েছিল। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় রান দুইশোর নিচেই আটকে যায়।

বরিশালের ইনিংসের শুরু থেকে দারুণ জবাব দেয়। তামিম ইকবাল ঝোড়ো ইনিংস খেলে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। ২৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান তার। ৮ ওভারে দলকে ৭৬ রানের পুঁজি দিয়ে ফেরেন তামিম।

একই ওভারে শরিফুল তামিমের পর ডাভিড মালানকে ফেরান। তাতে বরিশালের রানের গতি কিছুটা কমে যায়। তাওহিদ হৃদয় অপরপ্রান্তে বিধ্বংসী হওয়ার চেষ্টায় ২৮ বলে ৩২ রানের বেশি করতে পারেননি। মাঝের ওভারগুলোতে কাইল মায়ার্সই এগিয়ে দিয়েছেন বরিশালকে। মাত্র ২৮ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান তার।

মায়ার্স ক্রিজে থাকা অবস্থায় জয় থেকে খুব অল্প দূরেই ছিল বরিশাল। কিন্তু শরিফুল ১৮তম ওভারে আবারও জোড়া ধাক্কা দেওয়ায় ম্যাচ জমে ওঠে। মায়ার্সকে ফেরানোর পর মাহমুদউল্লাহকেও ৭ রানে ফেরান শরিফুল। পরের ওভারে বিনুরা ফার্নান্দো এক ছক্কা হাঁকানো হার্ডহিটার মোহাম্মদ নবিকে ফেরালে ম্যাচে ফেরে চিটাগং।

অবশ্য শেষ ওভারের প্রথম বলে রিশাদ হোসেনের ছক্কায় তাদের ফেরা নয় বরিশালের জয় গাঁথা লেখা হয়।

দারুণ শুরু পেয়েও দুইশো হলো না চিটাগংয়ের, এটাকে দুর্ভাগ্যই বলা যাবে।

শুরুটা অবিশ্বাস্য ছিল চিটাগং কিংসের। দুই ওপেনারের ব্যাটে চড়ে বিশাল স্কোরের আভাস দেয় তারা। ইনিংস শেষে তা আর বাস্তবে রূপ পায়নি। ১২১ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েও ফাইনালে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে বোর্ডে দুইশো তুলতে পারেনি চিটাগং। নির্ধারিত ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান তাদের।

শুরু থেকে বিপরীত স্রোতে সাঁতরে গেল চিটাগং। দুই ওপেনার পুরো স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গেলেন। খাজা নাফে ও পারভেজ হোসেন ইমনকে এই রূপে দেখার আশা করেনি কেউ। নাফে ৪৪ বলে ৬৬ রান করে থামেন। ইমন অপরাজিত ছিলেন ৭৮ রানে। অনেকে ভেবেছিলেন বরিশালের আগে বোলিং নেওয়া মানে চট্টগ্রামের দ্রুত গুটিয়ে যাওয়া।

স্টেডিয়ামের আবহও তেমনই ছিল। লাল জার্সির আধিক্যে আকাশীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গ্যালারী ভর্তি লাল জার্সিধারীদের উল্লাস থামিয়ে অন্য লড়াই উপহার দেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার।

দুজনের ব্যাটে চড়ে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৯৩ রান করে তারা। শুরুর ৫ ওভারেই ৫১ রান। দশম ওভারের পর খাজা নাফে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। তার নো লুক শটের ছক্কাগুলো দারুণ উপভোগ করে দর্শকরা। ক্যামেরাম্যানদের জন্যও অসাধারণ ছবির মুহূর্ত এনে দেন পাকিস্তানি ব্যাটার।

১৩তম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় চিটাগং। এবাদতের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৬৬ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ৩ ছক্কা। অন্য প্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইমন। তানভীর ইসলামের এক ওভারে মারেন তিন ছক্কা। এক ওভারেই ২২ রান, ইনিংসের সর্বোচ্চ।

১৬তম ওভার পর্যন্ত ওভারপ্রতি ১০ রান করে নেওয়ার গতিটা পরের ওভারে ধরে রাখতে পারেনি চিটাগং। ১৭তম ওভারে মোহাম্মদ আলী মাত্র ৪ রান দেন। এতে চিটাগংয়ের দুইশো ছোঁয়ার গতিটা ছন্দ হারায়। ওদিকে ৪১ বলে ৭২ রান করা ইমন পরের ৮ বলে তুলেছেন মাত্র ৬ রান। ব্যাট থেকে বড় শট না আসায় চিটাগংয়ের রানও বড় হতে পারেনি।

ইমনের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে ৭ ওভারে ৭০ রান তুলেছেন গ্রাহাম ক্লার্ক। পায়ে চোট পেয়ে ঠিকঠাক দৌড়াতে পারছিলেন না এই ব্যাটার। ব্যাটিং করতেও সমস্যা হচ্ছিল তার। শেষ পর্যন্ত রান আউট হয়ে থামেন মাত্র ২৩ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করা ক্লার্ক। ইমন ৪৯ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।

টস জিতে আগে বোলিংয়ে বরিশাল

বিপিএল ফাইনালে কোনও সুযোগ নিতে চাননি তামিম ইকবাল। তাই মিরপুরের উইকেটে টস জিতে আগে বোলিং নিতে দ্বিধা করেননি তিনি। যদিও এবার মিরপুরে রান হয়েছে। তবে রাতের শিশিরের কথা মাথায় রেখে আগে বোলিং নেওয়ার বিকল্প ছিল না।

বরিশাল তাদের টানা দ্বিতীয় শিরোপার খোঁজে আছে। চিটাগং কিংস অপেক্ষায় প্রথম শিরোপার। তবে ২০১৩ সালের পর এই প্রথম ফাইনালের আমেজ গায়ে মাখা দলটি সেই চাপ সামলাতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন ওঠে।

তারকার দিক থেকেও বরিশালের চেয়ে পিছিয়ে চিটাগং। গড়পড়তা দল নিয়েও পারফরম্যান্সের জোরে ফাইনালে উঠেছে তারা। হেভিওয়েট বরিশালকে থামাতে দলগত পারফরম্যান্সই ভরসা দলটির।

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দলীয় পারফরম্যান্সের জোরে অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতে চিটাগং। সেই আত্মবিশ্বাস এই ফাইনালে কাজে লাগানোর লক্ষ্য চিটাগংয়ের। বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল আগেই জানান ফাইনালকে শুধু একটি ম্যাচ হিসেবেই দেখবেন।

শিরোপা নির্ধারনীতে এমনিতেই চাপমুক্ত থাকেন তামিম। পুরোনো অভ্যাস আজও টেনে আনতে চান বরিশাল অধিনায়ক। চাপমুক্ত থাকেন বলেই কঠিন ম্যাচগুলোতে ভালো করার ইতিহাস তার।

ফাইনালে নতুন ক্রিকেটারকে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি ফরচুন বরিশাল। তাই দলে জিমি নিশাম যোগ দিলেও এই কিউইকে খেলায়নি তামিম ইকবালরা। তার পরিবর্তে এতদিন খেলে আসা মোহাম্মদ নবি ও গত ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ আলীর ওপরই ভরসা রাখছে বরিশাল।

তবে মাঠের লড়াইটা অবশ্যই ভিন্ন। ম্যাচ ডেতে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে। ক্রিকেটের সেই পুরোনো অতীত মাথায় রেখে আত্মবিশ্বাসী চিটাগং ও ফেভারিট বরিশাল মুখোমুখি হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত