Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মানব মস্তিষ্কে চিপ বসাল ইলন মাস্কের নিউরালিংক

ছবি : দ্য গার্ডিয়ান
ছবি : দ্য গার্ডিয়ান
[publishpress_authors_box]

কেবল মুভিতে নয়, এখন বাস্তবেও মানব মস্তিষ্কে বসানো হচ্ছে ইলেকট্রনিক চিপ (ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, বিসিআই)। এমন যুগান্তকারী কার্যক্রমে এবার যুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। মস্তিষ্ক কী ভাবছে কিংবা কী করছে তা দেখার পাশাপাশি এই চিপ এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করবে। মস্তিষ্কের পাঠানো সংকেতগুলো যথাযথভাবে বুঝে ব্লুটুথের মাধ্যমে এটি সংযুক্ত ডিভাইসে পাঠাবে।

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক বেশ কয়েকবছর ধরেই মানব মস্তিষ্কে চিপ বসানো নিয়ে কাজ করছেন। চিপ বসানোর মূল্য লক্ষ্য ছিল ব্যবহারকারী যাতে নিজের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে ফোন কিংবা কম্পিউটার ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে তিনি স্নায়ু ও ব্রেন সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনা দিয়ে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না, এ সম্পর্কে চিপের কার্যকারিতা নিয়ে এত বছর কাজ করছিল নিউরালিংক।

অবশেষে মাস্কের এত বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলতা পেল। সোমবার নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এক্সের (সাবেক টুইটার) এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি পোস্টে বলেন, প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে সফলভাবে চিপ বসানো হয়েছে। রবিবার চিপটি বসানোর পর এটি প্রাথমিকভাবে আশাব্যঞ্জক নিউরন স্পাইক বা স্নায়ু আবেগ শনাক্ত করেছে। যার মস্তিষ্কে চিপটি বসানো হয়েছে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানান মাস্ক।

মানব মস্তিষ্ক যে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে সারা দেহে তথ্য আদান-প্রদান করে সেই প্রক্রিয়াই হচ্ছে স্পাইক বা স্নায়ু আবেগ। মাস্কের প্রতিষ্ঠান কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, মানব মস্তিষ্কে এই চিপ বসানোর জন্য রোবটের সাহায্য নেওয়া হবে। এর সাহায্যে মানুষের মস্তিষ্কের এমন একটা অংশে চিপটি স্থাপন করা হবে, যা মানুষের চলাফেরার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।

এর আগে গত বছরের মে মাসে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিউরালিংককে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে পরীক্ষার অনুমতি দেয়।

মাস্ক মূলত ভবিষ্যতের এক পৃথিবীর কল্পনা করেছেন। নিউরালিংকের সাহায্যে সাত বছর গবেষণার পর যার বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি এমন এক ভবিষ্যতের কল্পনা করছেন, যেখানে স্টিফেন হকিংয়ের মোটর নিউরন রোগের মতো ব্যক্তিরা দ্রুত গতিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। টাইপিংয়ের মতো প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আরও দ্রুত এই চিপের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।

মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, নিউরালিংকের প্রথম পণ্যটির নাম হবে ‘টেলিপ্যাথি’। কেবল চিন্তার মাধ্যমেই এই প্রযুক্তির ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন।

তবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক চিপ বানিয়ে পুরো বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করলেও, আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কাজ করে আসছে।

মাস্কের বেশ কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অনুরূপ ডিভাইস মস্তিষ্কে স্থাপন করেছে। সুইজারল্যান্ডের ইকোলে পলিটেকনিক ফেডারেল ইন লুজানে (ইপিএফএল) নামক এক প্রতিষ্ঠান সফলভাবে একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে। এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি চিন্তার সাহায্যে চলাচলে সক্ষম হন।

মস্তিষ্কে ইলেকট্রনিক চিপ স্থাপনের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মধ্যে সংযোগ ঘটানো হয়। তিনি এর মাধ্যমে চিন্তাশক্তি দ্বারা পা ও পায়ের পাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ২০২৩ সালের মে মাসে পিয়ার-রিভিউ জার্নাল নেচারে প্রকাশ করা হয়।

এর আগে উটাহ-ভিত্তিক ‘ব্ল্যাকরক নিউরোটেক’ নামক এক প্রতিষ্ঠান ২০০৪ সালে ব্রেনে কম্পিউটার ইন্টারফেসের স্থাপন করেছিল বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়। 

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক, ২০২২ সালের শেষের দিকে কিছু কাজের জন্য বেশ সমালোচিত হয়েছিল। ওই বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিষ্ঠানটির মস্তিষ্কে চিপ বসানোর পরীক্ষায় কাজে লাগানো ভেড়া, বানর, শূকরসহ প্রায় দেড় হাজার প্রাণী মারা গিয়েছিল।

যদিও পরের বছর জুলাইয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ এ বিষয়ে তদন্ত করে জানায়, তারা ফার্মে প্রাণী নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে নিয়মের কোনও লঙ্ঘন খুঁজে পায়নি। বিষয়টির তদন্ত এখনও চলমান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত