স্বপ্নের এক রাত কাটল আর্জেন্টিনার জন্য। লিওনেল মেসি, পাউলো দিবালা, লাউতারো মার্তিনেসদের ছাড়াই সুপার ক্লাসিকোয় তারা ব্রাজিলকে বিধ্বস্ত করল ৪-১ গোলে। মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে ছন্দময়, হৃদয়কাড়া ফুটবলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের নিয়ে যেন ছেলেখেলাতেই মেতেছিল আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার হয়ে একটি করে গোল করেন হুলিয়ান আলভারেস, এনসো ফের্নান্দেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ান সিমিওনি। ব্রাজিলের হয়ে এক গোল ফেরান মাথিয়াস কুনিয়া। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে আজই প্রথম অন্তত ৪ গোল হজম করল ব্রাজিল। আর লাতিন কোনো দলের বিপক্ষে ৪ গোল হজম করল ১৯৮৭ কোপা আমেরিকার পর।
আর্জেন্টিনা অবশ্য বিশ্বকাপে নিশ্চিত করে ফেলেছিল মাঠে নামার আগেই। লাতিন অঞ্চলের অপর ম্যাচে বলিভিয়া-উরুগুয়ে ড্র করার পরই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গিয়েছিল লিওনেল স্কালোনির দল। ব্রাজিলকে গুঁড়িয়ে বাছাইপর্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বটাও ধরে রাখল তারা।
১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা বাছাইয়ে শীর্ষে আর্জেন্টিনা। সমান ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইকুয়েডর। চিলির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। ১৪ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে উরুগুয়ে আছে তিনে। ১৪ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে চারে ব্রাজিল।
বাছাইয়ে কখনও ৫ ম্যাচ হাতে রেখে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়নি আর্জেন্টিনার। সেটা উদযাপন করতেই কিনা শুরু থেকে ব্রাজিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে স্কালোনির শিষ্যরা। প্রথম ১২ মিনিটে তারা এগিয়ে যায় ২-০’তে। এত দ্রুত কখনও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২ গোল হজম করেনি ব্রাজিল। অথচ এই সময়ে আর্জেন্টিনার পোস্টে কোনও শট নিতে পারেনি দোরিভাল জুনিয়রের শিষ্যরা।
সবমিলিয়ে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৫৫.৭ শতাংশ বলের দখল রেখে খেলে পোস্টে শট নিয়েছিল ১২টি, লক্ষ্যে ছিল ৭টি। আর ব্রাজিল ৩টি শট পোস্টে নিয়ে লক্ষ্যে রেখেছিল একটিই। বিরতির আগে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ৩-১ ব্যবধানে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো বিরতির আগে তিন গোল হজম করল ব্রাজিল। প্রথমটি ছিল ২০০৫ সালের জুনে আর্জেন্টিনার মাটিতেই।
বিরতির আগে ৬১ শতাংশ বলের দখল ছিল আর্জেন্টিনার। চতুর্থ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার ডিফেন্স চেরা পাস দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন আলভারেস। দলীয় ফুটবলের অসামান্য প্রদর্শনীতে তারা ২-০’তে এগিয়ে যায় এনসো ফের্নান্দেস লক্ষ্যভেদ করলে, গোলটা হয়েছে ৩৩তম টাচে।
২৬তম মিনিটে গোলের জন্য প্রথম শট নিয়েই লক্ষ্যভেদ করে ব্রাজিল। এর দায় অবশ্য ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর। ডি-বক্সের বাইরে বল অনেক্ষণ পায়ে রেখেছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে নিচু শটে জালে জড়ান মাথিয়াস কুনিয়া। ৩৬তম মিনিটে আলমাদার শট ঠেকান ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক বেন্তো। পরের মিনিটে পারেননি আর। ফের্নান্দেসের দারুণ ক্রস বক্সে পেয়ে চমৎকার ভলিতে আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার।
বিরতির পর মুরিলো, জোয়েলিনতন ও রোদ্রিগোকে তুলে নিয়ে ব্রাজিলিয়ান কোচ দোরিভাল মাঠে নামান ওরচিজ, জোয়াও গোমেজ ও এন্দ্রিককে। কাজ হয়নি তাতেও। উল্টো ৭১ মিনিটে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর পাস বক্সে পেয়ে কোনাকুনি শটে বদলি খেলোয়াড় সিমিওনি ব্যবধান করেন ৪-১।