শেষ বাঁশি বাজতেই রাগে ক্ষোভে রেফারির দিকে ছুটে গেলেন দোরিভাল জুনিয়র। ব্রাজিল কোচের চেহারায় বলে দিচ্ছিল কতটা অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। কোপা আমেরিকায় ‘ডি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা হলো না ব্রাজিলের।
যুক্তরাষ্ট্রের লেভিস স্টেডিয়ামে বুধবার কলম্বিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে সেলেসাওরা। রাফিনিয়ার গোলে শুরুতে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। কিন্তু মুনোজের গোলে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। এই ড্রয়ে টানা ২৬ ম্যাচ অপরাজিত রইলো হামেস রদ্রিগেজের কলম্বিয়া দল।
৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়া। সমান ম্যাচে ১ জয় ও ২ ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রানার আপ ব্রাজিল। ৬ জুলাই শেষ আটে উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। একই দিনে কলম্বিয়া খেলবে পানামার বিপক্ষে।
এক ম্যাচ আগেই প্যারাগুয়ের বিপক্ষে দারুণ ছন্দময় ফুটবল উপহার দিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু এদিন সেই ব্রাজিলের ছিটোফোটাও পাওয়া গেল না।
প্রথমার্ধে যাও বা রাফিনিয়ার ফ্রি কিকে দারুণ সম্ভাবনার গল্পটা লিখতে যাচ্ছিল ব্রাজিল। পুরো প্রথমার্ধে চাপের মুখে থেকেও ব্রাজিলের এগিয়ে যাওয়ার আসল নায়ক তো বার্সেলোনার এই উইঙ্গার। ম্যাচের ১২ মিনিটে তার দুর্দান্ত ফ্রি-কিক জালে না জড়ালে হয়তো খালি হাতেই কোপা থেকে ফিরতে হতো ব্রাজিলকে।
কলম্বিয়া ঠিক কতখানি আগ্রাসী ছিল তা বোঝা যায় ম্যাচ পরিসংখ্যান থেকে। তারকায় ঠাসা ব্রাজিল যেখানে গোলে শট নিতে পেরেছে মোটে ৭ বার, সেখানে কলম্বিয়ার শট ১৩ বার। বল দখলে ৫১ ভাগ এগিয়ে ব্রাজিল, ৪৯ ভাগ কলম্বিয়া।
ম্যাচের শুরুতেই হামেস রদ্রিগেজকে ফাউল করে বসেন ব্রাজিল তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তিনি হলুদ কার্ড দেখায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ব্রাজিলের। কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কার্ড নিষেধাজ্ঞায় বেঞ্চে বসে কাটাতে হবে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডকে।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। রাফিনিয়ার দুর্দান্ত রংধনু শটটি কলম্বিয়া গোলরক্ষক কামিয়ো ভারগাসের হাতে লেগে ঢোকে জালে (১-০)।
ব্রাজিলের রক্ষণে বারবার আতঙ্ক ছড়িয়েছেন হামেস রদ্রিগেজ। ৩৪ মিনিটে রদ্রিগেজের ফ্রি কিক কোনও রকম ফিস্ট করে ফেরান ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসন বেকার।
কিন্তু গোল শোধে মরিয়া কলম্বিয়া এরপর আক্রমণের ঢেউ তুলেছে। আর বিরতির আগে যাওয়া দানিয়েল মুনোজের গোলটা সেই আক্রমণেরই ফল।
হলুদ গ্যালারি স্তব্ধ করে দেওয়া মুনোজের গোলটা হয়েছে জন করদোবার ডিফেন্স চেরা পাসে। মুহূর্তেই ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢোকা মুনোজ দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করে উল্লাসে মেতে ওঠেন। এর আগে অবশ্য কলম্বিয়ার দাভিনসন সানচেজের গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল করে দেন রেফারি।
ঠিক জোগো বনিতোর ফুটবলটা ব্রাজিলিয়ানদের পায়ে ফুটে উঠছে না অনেক দিন ধরেই। তবুও আগের ম্যাচে যাও বা ব্রাজিল জেগে উঠেছিল কিছুটা। কিন্তু কলম্বিয়ার ঠাসা রক্ষণের সামনে যেন পাত্তায় পেল না লুকাস পাকেতা, রদ্রিগো, ভিনি জুনিয়ররা।
ম্যাচের ৫৮ মিনিটে একইভাবে ফ্রি কিক পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল ব্রাজিল আরেক বার। কিন্তু এবার আর রাফিনিয়া পারলেন না। বল বার ঘেষে বেরিয়ে গেল।
৮৩ মিনিটে কলম্বিয়ার রাফায়েল সান্তোস বোরে দারুণ একটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন । ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসনকে একা পেয়েও বল মারলেন বাইরে! না হলে হয়তো এই ম্যাচে হার নিয়েই ফিরতে হতো ব্রাজিলের।
বাকি সময়ে অবশ্য দুই দলের কেউই গোল করতে পারেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে একে তো ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে পাচ্ছে না ব্রাজিল। এর ওপর টুর্নামেন্টের দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিচ্ছে লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ের। কে জানে কোয়ার্টার ফাইনালেই হয়তো দোরিভাল জুনিয়রকে দিতে হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।