৮ জুলাই। এই তারিখটা দগদগে ক্ষত হয়ে থাকবে ব্রাজিলের ফুটবলে। ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এদিনই জার্মানি ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল তাদের। সেই ১৯৫০ বিশ্বকাপে ফাইনালে পরিণত হওয়া শেষ ম্যাচে মারাকানায় উরুগুয়ের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল ব্রাজিলের। তার চেয়ে বেশি ট্র্যাজেডির জার্মানির কাছে বেলে হোরিজেন্তোয় ৭-১ গোলে হারটা।
সেই ম্যাচের ১০ বছর পূর্তি হল আজ। ব্রাজিলিয়ান দৈনিক গ্লোবো ম্যাচটার স্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল তখনকার জার্মান কোচ ইওয়াখ্যিম ল্যোভের। তাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে এখনও ম্যাচের স্মৃতি তরতাজা ল্যোভের, ‘‘ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলাটা সবসময় চাপের। ব্রাজিলও সেই চাপে ছিল। আমি সেই বিশ্বকাপের কথা প্রতিদিনই স্মরণ করি, কারণ এটা বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল। ব্রাজিলের মতো ঐতিহ্যবাহি দেশে বিশ্বকাপ জেতাটা বিশেষ কিছু।’’
মারাকানায় ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানো নিয়ে ল্যোভ বললেন, ‘‘ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত বাজার পর থেকে দর্শকরা আবেগি হয়ে পড়েছিল। প্রথম কয়েক মিনিট ব্রাজিলই ভালো খেলেছে। কিন্তু প্রথম ১০ মিানিটে গোল পেয়ে গেলাম আমনা (১১ মিনিটে করেছিলেন মুলার)। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।’’
প্রথম ৩০ মিনিটেই ব্রাজিল পিছিয়ে পরে ৫-০ গোলে। এ নিয়ে ল্যোভের স্মৃতিচারণ, ‘‘প্রথম গোলের পর ক্লোসা ব্যবধান দ্বিগুণ করল ২৫ মিনিটের আগে। সেই গোলের পর স্তম্ভিত হয়ে যায় ব্রাজিল। গ্যালারির পরিবেশ বদলে যায়। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। পরের তিনটা গোল হয়ে গেল এভাবেই। ওদের কোন এনার্জিই ছিল না। ট্যাকটিক্যালিও বিভ্রান্ত হয়ে পরে ব্রাজিল।’’
বিরতির সময় জার্মানির ড্রেসিংরুমে নাকি বলা হয়েছিল, ‘‘ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে আর বেশি গোল দেওয়ার দরকার নেই।’’ এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন ল্যোভ, ‘‘এটা বাজে কথা। বরং আমি মনে করিয়ে দিয়েছিলাম বাছাইপর্বে সুইডেনের কাছে শুরুতে ৪ গোল দিয়ে শেষ ৩০ মিনিট ৪ গোল হজম করার কথা। ফুটবলে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। তবে খারাপ লাগছিল ব্রাজিলের জন্য। কারণ এর আগে ঘরের মাঠে ২০০৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এভাবে বাদ পড়ার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদেরও। নিজেদের দলের জন্য গর্ব হলেও ব্রাজিলের জন্য খারাপ লাগছিল আমার।’’
এরপর আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে জার্মানি। তবে ল্যোভ তার কোচিং ক্যারিয়ারে স্মরণীয় স্মৃতিই মনে করেন ব্রাজিলকে হারানো ম্যাচটি ,‘‘একটা জরিপে বেশ কিছুদিন আগে জানানো হয়েছে, ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানোটাই জার্মানির সর্বকালের সেরা (আমারও তাই মনে হয়)। এরপর আসবে ২০১৪ সালের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জয়। এই দুটো ম্যাচ নিয়ে এতদিন পরও কথা হয় জার্মানিতে।’’
সেই হারের ১০ বছর পূর্তির একদিন আগে আরেক ট্র্যাজেডি ঘটেছে ব্রাজিলের ফুটবলে। কোপা আমেরিকায় উরুগুয়ের রক্ষণ ভেদ করে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার জন্য মাঠের দুই প্রান্ত ব্যবহার করেও লাভ হয়নি। ৪-২-৩-১ ছকে খেলে বার বার উরুগুয়ের বক্সে প্রায় একা হয়ে যাচ্ছিলেন এনদ্রিক। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা তারা হারে টাইব্রেকারে। তাই প্রশ্ন উঠেছে ব্রাজিলের ফুটবলের সামর্থ্য নিয়েই।