ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগও আনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তার ১৫-১৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ বলছে, করোনা মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য বলসোনারো ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তাদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেন।
পুলিশের অভিযোগ, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশের জনস্বাস্থ্য ডাটাবেজে বলসোনারো, তার মেয়ে এবং তাদের আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাদের কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার তথ্য দেন। কিন্তু তারা আসলে টিকা নেননি।
সম্প্রতি বলসোনারো ও তার রক্ষণশীল দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ফৌজদারি অপরাধের মামলা হচ্ছে। এতে তাদের সমর্থকরা দেশব্যাপী বিক্ষোভ করার হুমকি দিয়েছে।
বলসোনারো গত বছর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, তিনি কোনও মিথ্যা তথ্য দেননি এবং কখনও টিকা নেওয়ার দাবিও করেননি।
একজন আইনী বিশ্লেষক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, বলসোনারো স্বাস্থ্য তথ্য জাল করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দুই থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে। আর অপরাধীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
বলসোনোরো দীর্ঘদিন ধরেই কোভিড-১৯ টিকা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তার পরিবর্তে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছিলেন।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ, যা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২০ সালে মহামারির সর্বোচ্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি ফাইজার ব্রাজিলের কাছে টিকা বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়ে বলসোনারোকে ইমেইল করে। কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেন।
অবশেষে ২০২১ সালে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক থেকে টিকা কেনার পর বলসোনারো দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হন। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, টিকার চালানগুলোতে অনিয়ম ধরা পড়ার পরও তিনি চুক্তিটি বাতিল করেননি।
তবে বলসোনারো ও ভারতীয় কোম্পানি উভয়ই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বলসোনারো আরও বেশ কয়েকটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। গত বছর বিচারকদের একটি প্যানেল বলসোনারোকে ২০২২ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দেশের ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম নিয়ে ভিত্তিহীন সন্দেহ প্রকাশ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। এতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিষিদ্ধ করা হয়।
এছাড়া ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি তার সমর্থকদের সরকারি ভবনগুলোতে ধারাবাহিক হামলায় তার ভূমিকা নিয়েও তদন্ত চলছে। লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তার সমর্থকরা ওই হামলা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার সঙ্গে এই হামলার মিল রয়েছে।
ট্রাম্পসহ যুক্তরাষ্ট্রের উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত বছর তিনি কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সসহ রিপাবলিকানদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ট্রাম্পের হোটেলগুলোর একটির সামনে রক্ষণশীল অ্যাকটিভিস্ট চার্লি কার্কের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।