রোমাঞ্চ, নাটক, মুগ্ধতা, উত্তেজনা-একটা ফুটবল ম্যাচ উপভোগ্য হতে যা যা দরকার সবই ছিল ব্রাজিল-স্পেনের খেলায়। রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে কেউ হারলে ম্যাচের মাহাত্ম্যটাই কমে যেত। তাই হয়ত ৩-৩ গোলের সমতায় মাঠ ছাড়লো দুই দল।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ব্রাজিলের ফুটবলে যেমন থাকল হার না মানার অদম্য মানসিকতা। তেমনি স্পেন খেলল পাসের ফুল ফুটিয়ে চিরায়ত নিজেদের ফুটবল। তাতে গোল হল ৬টি, এর তিনটি পেনাল্টি থেকে।
শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ব্রাজিল ৩-৩ সমতায় ছাড়ে মাঠ। ব্রাজিলের শেষ গোলটা পেনাল্টি থেকে ছিল ম্যাচেরও শেষ শটে। স্পেনের হয়ে জোড়া গোল রদ্রির, অপরটি দানি ওলমোর।
ব্রাজিলের পক্ষে একটি করে গোল রোদ্রিগো, লুকাস পাকেতা ও বিস্ময় বালক এনদ্রিকের। স্পেনের লামিনে ইয়ামালের ছড়ি ঘুরানোর জবাবটা ভালোই দিয়েছেন ১৭ বছরের এনদ্রিক।
শুরুতে স্পেনের প্রেসিংয়ে খেই হারিয়েছিল দোরিভালের ব্রাজিল। লামিনে ইয়ামালকে বক্সের ভেতর জোয়াও গোমেজ ফাউল করলে পেনাল্টি পায় স্পেন। ১২ মিনিটে সেই পেনাল্টি থেকে স্পেনকে এগিয়ে নেন রদ্রি।
১৬ বছর বয়সী ইয়ামালকে সামলাতে হিমশিমই খেয়েছে ব্রাজিলের রক্ষণ। বল পায়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী। ৩৬ মিনিটে এই তরুণের পাসে ডিফেন্ডার লুকাস বেরালদোকে নাটমেগে বোকা বানান দানি ওলমো। এরপর ব্রুনো গিমারেসকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে ব্যবধান ২-০ করেন তিনি।
৪০ মিনিটে গোলরক্ষক উনাই সিমোনের ভুলে সমতায় ফেরে ব্রাজিল। সতীর্থের ব্যাকপাস তিনি তুলে দেন রোদ্রিগোর পায়ে, যা এগিয়ে থাকা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ান এই ফরোয়ার্ড।
বিরতির পর রাফিনিয়াকে তুলে এনদ্রিককে মাঠে নামান ব্রাজিলিয়ান কোচ। কিছু দিন পর বার্নাব্যু হতে যাচ্ছে এই বিস্ময় বালকের ঠিকানা। সেখানেই মাঠে নামার ৪ মিনিট পর বক্সের ভেতর চোখ জুড়ানো ভলিতে ২-২ সমতায় ফেরান এনদ্রিক।
এরপর খেলাটা জমজমাট হয় আরও। ৮৫ মিনিটে ডি-বক্সে বেরালদো ডিফেন্ডার দানি কারভাহালকে ফাউল করলে আবারও পেনাল্টি পায় স্পেন। স্পট কিক থেকে দ্বিতীয় গোল করেন রদ্রি।
ম্যাচের যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ব্রাজিলকে সমতা আনার সুযোগ করে দেন কারভাহালই। গালেনোকে তিনি ফাউল করলে পেনাল্টি পায় সেলেসাওরা, যা থেকে গোল করতে ভুল করেননি পাকেতা।
সবমিলিয়ে স্পেনের বলের দখল ছিল ৫৮.৪ শতাংশ আর ব্রাজিলের ৪১.৬ শতাংশ। স্পেন পোস্টে ১৯টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রেখেছিল ৮টি। ব্রাজিল ১২টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে ৬টি। বর্ণবাদের প্রতিবাদে ‘এক ত্বক, একই পরিচয়’ স্লোগানে শুরু হয়েছিল ম্যাচটি। জাতীয় সঙ্গীতের সময় ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা পরেন প্রতিবাদের কালো রংয়ের জার্সি।
বর্ণবাদ বিরোধী বার্তার পাশাপাশি এনদ্রিকরা দিয়েছেন আরেক বার্তা, দোরিভালের হাত ধরে আবারও ফুটবল মাততে তৈরি তারা।