Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

লারা-টেন্ডুলকার পারেননি শান্ত পারবেন?

Najmul-Hossain-Shanto-960x540
[publishpress_authors_box]

‘ক্যাপ্টেন্সি ম্যাটেরিয়াল’ শব্দটির সঙ্গে ক্রিকেট সমর্থকদের পরিচিত একটু বেশি। নেতৃত্বের চাপ সামলে পারফর্ম করা ক্রিকেটে বেশ কঠিন। অনেক তারকাই এই চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, আবার অনেকে সফল।

ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো করেননি কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলী, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং’রা একসঙ্গেই পারফরম ও নেতৃত্ব দুই বিভাগেই সফল।

নাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত এখনও তাদের পর্যায়ের কেউ হয়ে ওঠেননি। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের মতো তারকাও নন। তবে নেতৃত্বের সাফল্যের পরিসংখ্যান তাকে “ক্যাপ্টেন্সি ম্যাটেরিয়াল” হিসেবে সফল করেছে। তার মানে দায়িত্ব পেলেই ভালো খেলেন শান্ত।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানোর পর সংবাদ সম্মেলনে শান্তকে নিয়ে ওমন মন্তব্য করেছেন মুশফিকুর রহিম, “কিছু কিছু মানুষ যখন দায়িত্ব বেশি থাকে তখন সেরাটা খেলে। ও (শান্ত) এরকম মানসিকতার একজন ছেলে, ওর কাছে যত বেশি দায়িত্ব থাকে এটাকে তত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় এবং ওভাবে পারফর্ম করে।”

২০২৩ এ বিকল্প ওয়ানডে নেতৃত্ব দিয়ে শান্ত দেশের ১৬তম অধিনায়ক হন। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওই ম্যাচেই ৭৬ রান করে ২৫ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। নেতৃত্বের অভিষেকে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান। ১৯৯৮ সালে ভারতের বিপক্ষে মোহালিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ৭০ রান করেছিলেন।

লারা-টেন্ডুলকার দুজনই কিংবদন্তী-তবে অধিনায়ক হিসেবে সফল নন তারা।

বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওই ম্যাচ সহ ওয়ানডেতে মোট ৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্ত। ২০২৩ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ, নিউজিল্যান্ড সিরিজে তিনটি, আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি সিরিজে। এর মধ্যে জয় দুটি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২২ রানের রেকর্ড তার।

টি-টোয়েন্টিতেও সফল “অধিনায়ক” শান্ত। দশম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে মাত্র ৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন তিনটিতে। আর টেস্টে তো অবিশ্বাস্য সাফল্যই দেখিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে টেস্ট জয়ের রেকর্ড তার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে হওয়া ওই সিরিজে ১-১ ব্যাবধানে ড্র করেছিল বাংলাদেশ।

শান্তর যে শুধু জয়ের ভাগ্যটাই আছে তা কিন্তু নয়। নেতৃত্বে ব্যাটার হিসেবেও ভালো করেছেন তিনি। প্রথম টেস্ট নেতৃত্বে সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে ২৫ ম্যাচে ১৪৪৯ রানে ৩০.৮২ গড় তার। অথচ অধিনায়ক হিসেবে গড় ৪১.৫০।

ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিং গড় দারুণ। ৪৩ ম্যাচে ১৩২৪ রান করেছেন ৩৩.৯৪ গড়ে। আর ৭ ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে ৩২৩ রান করেছেন ৬৪.৬০ গড়ে। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার ও অধিনায়ক হিসেবে দুটোতেই ২৭ গড় তার।

অথচ সবশেষ বিপিএলে রান করতে না পারায় অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল শান্তকে। এর আগে একটা সময় সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তাকে ব্যঙ্গ করে “লর্ড” বলা হয়। ওই অবস্থা থেকে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান ও ২০২৩ বিপিএলে সর্বোচ্চ রান করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলেন শান্ত।

তার নেতৃত্ব পাওয়াটাও অনেক নাটকীয়তায়। শান্তর আগে লিটন দাসকেই অধিনায়ক হিসেবে ঠিক করে রেখেছিল বিসিবি। কিন্তু বিশ্বকাপের মাঝপথে ছুটি নেওয়ায় লিটনের ওপর আস্থা হারায় বিসিবি। পাকাপাকি ভাবে ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে শান্তকেই চূড়ান্ত করা হয় বিশ্বকাপের পর বিসিবির বোর্ড সভায়।

এর আগেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিতে নিজেকে প্রমাণ করে রেখেছিলেন শান্ত। নিজে বলেছেনও, “অধিনায়ক তো অধিনায়কই। সব সংস্করণের জন্যই আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে হয় যে ওই সামর্থ্য আমার আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।”

শান্ত নিজের বিশ্বাস, রূপান্তর করে দেখিয়েছেন কার্যকারিতায়। দেশের ক্রিকেটে স্ট্রাগলিং ওপেনার থেকে থিতু হয়েছেন। পরে পারফরমার থেকে স্থায়ী নেতা হয়েছেন। এবার তার নেতা হিসেবে সফল হওয়ার পালা। 

যা ক্রিকেটের বরপুত্র হয়েও করে দেখাতে ব্যর্থ হন ব্রায়ান লারা। তার অধীনে ২০০৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল উইন্ডিজ। টেস্ট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে ক্যারিবিয়ানদের জয় লারার অধীনেই।

তবুও লারা এক সাক্ষাৎকারে নিজের নেতৃত্বের মূল্যায়নে বলেছেন, “স্বল্প সাফল্য, বিশাল ব্যর্থতা”।

উইন্ডিজ দলে তিন দফা নেতৃত্ব দিয়েছেন ত্রিনিদাদ কিংবদন্তী। ওই সময় নিজের ব্যাটিং দুর্দান্ত হলেও দলের ফল মন্দের ভালো। ৪৭ ম্যাচ ১০ জয়, ২৬ হার, ১১টি ড্র। ১২৫ ম্যাচ ৫৯ জয়, ৫৯ হার ও ৭টিতে ফলাফল হয়নি।

ক্রিকেটের ব্যাটিং গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার তো অধিনায়ক হিসেবে লারার চেয়েও ব্যর্থ ছিলেন। দুই দফা ভারতের অধিনায়ক হিসেবে মোট ৭৩ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন মাত্র ২৩ ম্যাচ, হার ৪৩টি। আর টেস্টে ২৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে শচিন পেয়েছেন মাত্র ৪টি জয়, হেরেছেন ৯ ম্যাচে আর ড্র ১২টি।

চলতি বছরের জন্য নেতৃত্ব পেয়েছেন শান্ত। শুরু থেকেই পারফরম্যান্স আর নেতৃত্ব ভাগ্য নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি। তাই “সফল নেতা” প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখাই যায়, লারা-টেন্ডুলকাররা যা পারেননি, শান্ত পারবেন তো?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত