সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পাঁচ দিন পর ফিরেছে। তবে এর চেয়েও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা মোবাইল ফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা ফোর-জি এখনও বন্ধ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর সচল ছিল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।
সেদিন বিকালে ঢাকার মহাখালীর আমতলীতে দুযেরাগার ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভবনটির পাশেই খাজা সেন্টার, যেখানে ইন্টারনেট পরিসেবা দেয় এমন বেশকিছু আইপি প্রতিষ্ঠানের সার্ভারের অবস্থান।
রাত ৯টার দিকে কোনও ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। কারণ হিসেবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক জানান, অবকাঠামোয় আগুন দেওয়ার কারণে এবং বিদ্যুৎহীনতায় সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পক্ষ থেকে পাঠানো মোবাইল মেসেজে গ্রাহকদের জানানো হয়, সন্ত্রাসীদের অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে ডেটা সেন্টার পুড়ে যাওয়া এবং আইএসপির তার পুড়ে যাওয়ার কারণে সারদেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে। যা মেরামত করতে সময় লাগবে।
সে হিসাবে, পুরো পাঁচ দিন পর ফিরল ব্রডব্যান্ড। তবে ফোর-জি কখন ফিরবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে বাংলাদেশে কখনও এত সময়ের জন্য বন্ধ থাকেনি ইন্টারনেট সেবা।
২০২৩ সালে তিনবার এবং ২০২২ সালে ছয়বার বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। তবে তার কোনোটিই এত লম্বা সময় ধরে ছিল না।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য সাময়িক অসুবিধা ও ক্ষতি মেনে নিয়ে সবাইকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সব অফিসের কার্যক্রমই ইন্টারনেটনির্ভর। এমনকি অফিসের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্যও প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ।
ফলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বন্ধ রয়েছে দেশের অধিকাংশ অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যেসব ব্যবসা পরিচালনা করা হয়, সেগুলোও বন্ধ।
প্রচুর ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে বসেই বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কাজ করেন। হুট করে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ বন্ধ রাখার কথা জানাতেও পারেননি।
ইন্টারনেট না থাকার কারণে বন্ধ ছিল সকাল সন্ধ্যাসহ দেশের সব অনলাইন গণমাধ্যম। টেলিভিশন ও পত্রিকার কাজ চালু থাকলেও সেগুলোর অনলাইন ভার্সন বন্ধ ছিল। ফলে প্রবাসীদের পক্ষেও দেশের সঠিক খবর পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল।
সবেচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা। ইন্টারনেট না থাকায় প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ করতে পারছিলেন না তারা। ফলে কারও বাড়ির বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় তো কারও গ্যাস সরবরাহ।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ ও গ্যাস অফিসগুলোই লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা আর ভোগান্তির পর এদুটির কার্ড বা মিটারে রিচার্জ করতে হয়েছে।