দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে তিন দিনের ব্যবধানে দুই রকম তথ্য এল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে যেখানে গত বছর দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪ জন; সেখানে যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে সংখ্যাটি ৭ হাজার ৯০২।
দুই পক্ষের হিসাবের এমন ফারাক নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি সংগঠনটির। বিআরটিএ বলছে, যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অতিরঞ্জিত। আর যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, বিআরটিএ তাদের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তার প্রমাণ দিতে পারে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মঙ্গলবার সড়ক ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে।
এই তথ্যের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া।
অন্যদিকে গত রবিববার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরে যাত্রী সমিতি।
তাদের তথ্যের উৎস সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার প্রতিবেদনগুলো।
ফারাক যেখানে যেখানে
নিহত : যাত্রী কল্যাণের হিসাবে ৭৯০২, বিআরটিএর হিসাবে ৫০২৪
আহত : যাত্রী কল্যাণের হিসাবে ১০৩৭২, বিআরটিএর হিসাবে ৭৪৯৫
মোট দুর্ঘটনা : যাত্রী কল্যাণের হিসাবে ৬২৬১, বিআরটিএর হিসাবে ৫৪৯৫
দুর্ঘটনায় পড়া যান (বিআরটিএর হিসাব) : মোট ৭৮৩৭টি, মোটরগাড়ি/জিপ ২০৬টি, বাস-মিনিবাস ১ হাজার ৮৩টি , ট্রাক/কাভার্ডভ্যান ১ হাজার ৩৮৯টি , পিকআপভ্যান ৩৭০টি, মাইক্রোবাস ২২৬টি , অ্যাম্বুলেন্স ১৬টি, মোটরসাইকেল ১ হাজার ৭৪৭টি, ভ্যান ২৩০টি, ট্রাক্টর ১২৮টি , ইজিবাইক ২১৭টি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ৪১৫টি, অটোরিকশা ৪৯৭টি ও অন্যান্য যান ১ হাজার ১৬৮টি।
বিআরটিএ যা বলছে
নিজেদের তথ্যকে ঠিক দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অতিরঞ্জিত।
সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য নিয়মিতভাবে বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিআরটিএর তথ্যাদির বাইরে অন্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা বিআরটিএকে জানাতে ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার প্রকাশিত তথ্য বিআরটিএ’র তথ্যের সাথে অমিল থাকা সত্ত্বেও বিআরটিএকে এ বিষয়ে কোনো কিছু অবহিত করেনি।
এতে সংগঠনগুলোর প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নুর মজুমদার বলেন, “যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে বারবার চিঠি দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু তারা চিঠির কোনো জবাব দেয় না। তাদের তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকা বিআরটিএকে দিতে সমস্যা কোথায়?”
এবার তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাইনি। যদি যথাসময়ে জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান যাত্রী সমিতির
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্যের জবাবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিআরটিএ দুর্ঘটনা কমাতে পারে না, কিন্তু আমাদের রিপোর্ট থামাতে চায়।
“এর আগেও আমাদের প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছিল বিআরটিএ। কিন্তু কখনোই এই দাবি প্রমাণ করতে পারেনি তারা।”
বিআরটিএর চিঠির জবাব দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা বিআরটিএর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১৩টি চিঠি পেয়েছি, প্রতিবারই চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে। তবে এবার এখনও কোনো চিঠি বা নোটিস হাতে পাইনি আমরা। বিআরটিএ আমাদের কাছে তথ্য চায় ঠিকই, কিন্তু কোনো ধরনের সাপোর্ট দেয় না আমাদের।”