আসন্ন বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ‘সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’ নামের একটি সংগঠন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সদস্য মেজর (অব.) জহিরুল ইসলাম বলেন, “দেশের সিংহভাগ প্রতিবন্ধী মানুষ বেকার বা স্বল্পমজুরিতে কর্মরত, অনেকেই পরিবারের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবন্ধী ভাতা তাদের জীবনের একটি বড় অবলম্বন।”
তিনি যোগ করেন, “২০০৫ সালে ভাতা ছিল ২০০ টাকা, ২০২৪ সালে তা হয়েছে ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৯ বছরে ভাতা বেড়েছে মাত্র ৬৫০ টাকা। তাহলে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বৃদ্ধিতে কত বছর লাগবে?”
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৫ হাজার টাকা করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা পুনঃপ্রবর্তনসহ ১১ দফা দাবি জানানো হয়।
সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিবন্ধী ভাতার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ভাতা শ্রীলঙ্কায় ৫০০০ টাকা, নেপালে প্রতিবন্ধিতার মাত্রার ভিত্তিতে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত, ভারতের দিল্লিতে ২ হাজার ৫০০ রুপি, পাকিস্তানে ২ হাজার রুপি।
সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের তুলে ধরা দাবিগুলো হলো, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা মাসিক ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি মাসিক ২ হাজার টাকা করা। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাতা ও উপবৃত্তি উভয়ই বরাদ্দ রাখা। অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিশেষ নীতিমালা (কোটা) প্রণয়ন করা।
এছাড়াও চলতি বাজেটে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্যোক্তা তহবিল গঠন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তরকে দ্রুত কার্যকর করা। বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রণয়ন এবং দেশের ৬৪ জেলার সাধারণ বিদ্যালয়ে বাংলা ইশারা ভাষাযুক্ত সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। আদালতসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী সেবা নিশ্চিত করা। শিক্ষা ও চাকরির নিয়োগ অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা প্রণয়ন করা।
নিম্ন, শ্রমজীবী-মেহনতি এবং অটিস্টিকসহ সব গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষদের আত্মনির্ভরশীল করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সব পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ৬ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া অটিস্টিক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীসহ গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু করা। সহজে প্রবেশ করা যাবে এমন অবকাঠামো এবং গণপরিবহন নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় থেকে জাতীয় সব পর্যায়ে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। এছাড়া মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের কিছু ধারাবাহিক কর্মসূচির তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে আগামী সপ্তাহে জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলেও জানানো হয়।