Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ডিসেম্বরেই মিলছে ১.১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা, রিজার্ভ আরও বাড়বে

ডলার
[publishpress_authors_box]

বিশ্বের আর্থিক খাতের মোড় সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১১০ কোটি (১.১০ বিলিয়ন) ডলারের বাজেট সহায়তা চলতি ডিসেম্বর মাসেই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এতে চাপে থাকা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার ও এডিবি ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, “মোট ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই বাজেট সহায়তা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

বাজেট সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার প্রকল্প সহায়তাও অনুমোদন করেছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে ‘স্ট্রেনদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রাম, সাবপ্রোগ্রাম-১’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৬০ কোটি ডলার ঋণের একটি চুক্তি হয়। অর্থ বিভাগের উদ্যোগে এ কর্মসূচিটি প্রণয়ন করা হয়।

১১ ডিসেম্বর ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাংক গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অনুকূলে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়নে সংস্কার কার্যক্রমগুলো সফলভাবে অর্জন করায় ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক এ বাজেট দেবে।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির সঙ্গে এই ঋণের চুক্তি সই হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এই অর্থ সরকার নিজের মতো করে খরচ করতে পারে।

তবে দুই ক্ষেত্রেই নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও থাকে। বাজেট সহায়তা ঋণে প্রকল্প ঋণের চেয়ে নমনীয় শর্ত থাকে।

গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আর্থিক খাতের সংস্কারসহ মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।

সেই প্রতিশ্রুতির কারণেই বাজেট সাপোর্ট হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাজেট সহায়তার এই অর্থ পাওয়া গেলে বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা।

রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্স বাড়ছে; চলতি ডিসেম্বর মাসের ২১ দিনেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। মূলত এই দুই সূচকের উপর ভর করেই রিজার্ভ বাড়ছে।”

“এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র বাজেট সহায়তা যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে। তখন রিজার্ভ নিয়ে আমাদের আর কোনও চিন্তা থাকবে না।”

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গ্রস হিসাবে হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এক বছর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথা মতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে কেবল গ্রস হিসাবের তথ্যই প্রকাশ করা হতো।

৯০ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, বাজেট সহায়তা ৫০ কোটি ডলার

বিদেশি মুদ্রা সংকটে থাকা বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বের আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসাবে দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার দিচ্ছে । আর জলবায়ু-সহিঞ্চু নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দিচ্ছে বাকি ৪০ কোটি ডলার।

বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে আবার ৩০ কোটি ডলার দিচ্ছে কোনও ধরনের সুদ ছাড়াই। তবে সুদবিহীন এই ঋণ ৬ বছরের রেয়াতকালসহ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৬০ কোটি ডলার ৫ বছরের রেয়াতকালসহ সর্বোচ্চ ৩৫ বছরে বার্ষিক মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

রবিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দুটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজ এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি আব্দুলায়ে সেক সই করেন।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই চুক্তি সই হয়েছে। এসময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার দাতাদের কাছে বাজেট সহায়তার আবেদন করা হয়েছিল। সরকারের সেই আবেদন বিবেচনায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ‘সেকন্ড বাংলাদেশ গ্রিব অ্যন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট (ডিপিসি)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে।

দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখতে আর্থিক খাতের কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।

অর্থ, পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো শক্তিশালীকরণে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি কাঠামো শক্তিশালী করণে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

এই ঋণের মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদসহ ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

এই কর্মসূচির আওতায় বাকি ২৫ কোটি ডলারের জন্য কোনও সুদ দিতে হবে না; শুধু শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ সার্ভিস ফি দিতে হবে। ছয় বছরের রেয়াতকালসহ ১২ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলারের সহজ শর্তের ঋণ দিচ্ছে।

‘রেজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০৩০ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাগরিকেদের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা। এছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নিজস্ব উৎস থেকে আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম জোরদার করা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থায়ন, বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম কার্যকর করা এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নত নগর-আবকাঠামো ও সুবিধা নির্মিত হবে। এরফলে ৮১টি পৌরসভা ও ৬টি সিটি কর্পোরেশনে বসবাসরত ১ কোটি ৭০ লাখ জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০ কোটি ডলারের মধ্যে ৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেওয়া হবে। এসডিআর এর আওতায় মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন এবং চীনা মুদ্রা ইউয়ানে জোগান দেওয়া হবে।

এই ঋণের জন্য কোনও সুদ দিতে হবে না। স্বল্প সময়ের জন্য দেওয়া এই ঋণ ৬ বছরের রেয়াতকালসহ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

এই প্রকল্পের জন্য দেওয়া অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ১ হাজার ৫৬৯ কোটি জাপানি ইয়েন জোগান দেবে বিশ্বব্যাংক। চার বছরের রেয়াতকালসহ ৩৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত