Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

এবারের বাজেট ও মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হোক

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

দেশের চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধিসহ বাজেটের আকার ছোট করার প্রস্তাব-পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন দেশের বিকাশমান অর্থনীতি গতিশীল রাখতে এবারের বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের নানাদিক সম্পর্কে জানতে বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে ‘সকাল সন্ধ্যা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশফাকুর রহমান

এবারের বাজেট ও মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হোক

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

দেশের চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধিসহ বাজেটের আকার ছোট করার প্রস্তাব-পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন দেশের বিকাশমান অর্থনীতি গতিশীল রাখতে এবারের বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের নানাদিক সম্পর্কে জানতে বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে ‘সকাল সন্ধ্যা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশফাকুর রহমান

সকাল সন্ধ্যা: এ বছরের বাজেট নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে— বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনাও করা হচ্ছে। এমন গুরুত্বের কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: আপনি ঠিকই বলেছেন, এবারের বাজেটটি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটটা যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, অতটা না হলেও এবারের পরিবর্তনমূলক অবস্থাটাও প্রায় ওইরকমই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বে এখন নানা রকম সমস্যা আছে। যেটি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। এটার প্রভাব আসলে কম। বিশ্বে নানা সমস্যা আগেও ছিল— এখনও আছে। এই যে ১০ বছর ধরে টাকা অতিমূল্যায়িত করে রাখা হলো— ব্যাংকিং ব্যবস্থার দিকে কোনও নজর দেওয়া হলো না— এই যে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলল— এই যে অর্থ পাচার হচ্ছে। যদিও রাজস্ব ও জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতটা বিশ্বে সবচেয়ে কম। অথচ আমাদের মোটামুটি মানসম্মতভাবে একটি বাজেট করতে হয়।

তাছাড়া ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এর নির্বাচন পুরোপুরিভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই বিষয়ে এখন আর শক্ত কথা বলতে চাই না। এ অবস্থায় রাজনীতি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল হলেও অর্থনীতির যে বড় শক্তি— বিশেষ করে গত ১৫ বছরে অর্থনীতি যে অসাধারণ শক্তি সঞ্চয় করেছিল— দৃষ্টিনন্দন অগ্রগতি অর্জন করেছিল সেখানে কিছুটা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে— চিড় ধরেছে— বড় সমস্যা হয়েছে।

এটাকে আমি বড় সমস্যা বলব না। কারণ রিজার্ভের বিষয়টা যারা পাকিস্তানের সঙ্গে বা শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনা করে, তারা বাংলাদেশকে এক ধরনের অপমান করার চেষ্টা করে। ওদের আর আমাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের ভিত অনেক শক্ত। তবে সমস্যা আছে। যেগুলো আমি আগেই উল্লেখ করেছি। এই সমস্যার বিষয়ে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ৬-৯ মাসের মধ্যে সমাধান করা যাবে। আর দ্রব্যমূল্য ৩-৬ মাসের মধ্যে স্থিতিশীল করা যাবে।

সকাল সন্ধ্যা: আপনি বললেন যে, বাংলাদেশের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সবচেয়ে কম। আবার একটি কাঠামোর মধ্যে এনে রাজস্ব সংগ্রহ ও আহরণ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা আছে বিভিন্ন পর্যায়ে। এর ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কতটা বাস্তব ভিত্তি রয়েছে?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: যে কোনও অর্থনীতির মতো আমাদের অর্থনীতিরও একটি কাঠামো আছে। আমাদের ১৯৭২ সালে কৃষিতে জিডিপি ছিল ৫৩ ভাগ— এখন হয়েছে ১৩ ভাগ। শিল্প ছিল ১৩ ভাগ— এখন হয়েছে ৩৪ ভাগ। আর সেবা ছিল ২৭ ভাগ— এখন হয়ে গিয়েছে ৫১ ভাগ। এটা আমাদের জানা— কোথা থেকে কী পাওয়া যাবে।

এর চেয়ে বড় বিষয় হলো শীর্ষ ১০ ভাগ ধনীর কাছে ৩০ ভাগের বেশি সম্পদ আছে— আয় আছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে গিনি সহগ (বৈষম্য মাপার পদ্ধতি) ছিল ৩৪— এখন ৪৯। মানে বৈষম্য বাড়ছে।

১৯৭২ সালে জিডিপি ছিল ৭০০ কোটি ডলার। এখন হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু এই টাকা কোথায় গেল? টাকাতো তাদের কাছে। ফলে তাদের কাছ থেকে জোর করে হলেও টাকা আদায় করতে হবে। চিহ্নিতও করতে হবে কাদের কাছে কী আছে।

বঙ্গবন্ধু কী পলিসি করেছিলেন? প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় লেখা আছে, বিত্তবানদের কাছ থেকে বেশি বেশি কর আদায় করে সেই অর্থ দিয়ে নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প নিতে হবে। আমরা তাদের চিনি কাদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করতে হবে।

১৯৭২ সালে জিডিপি ছিল ৭০০ কোটি ডলার। এখন হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু এই টাকা কোথায় গেল? টাকাতো তাদের কাছে। ফলে তাদের কাছ থেকে জোর করে হলেও টাকা আদায় করতে হবে। চিহ্নিতও করতে হবে কাদের কাছে কী আছে।

সকাল সন্ধ্যা: সরকারের নেওয়া দেশি-বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ বিষয়ে চাপ আছে। এবারের বাজেটেও এই বিষয়টি প্রাধান্য হবে। কীভাবে এই অবস্থা সামলালে সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য সহনশীল হবে বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয়— যার ঋণ আছে। ২০২৪-২৫-এর বাজেট একমাত্র বাজেট নয় যেখানে ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ব্যয়। কয়েকবারই হয়েছে এমন। ফলে এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এটা একটি সমস্যা।

আমি মনে করি যেটা করা দরকার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট নেওয়া হয়েছে— অন্যায্য দামে কেনাকাটা করা হয়েছে। ওই সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা খুব জরুরি। এর ফলে আগামী তিন বছর পর যে বড় সংকটটি আসার কথা রয়েছে সেটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া কোনও উপায়ও নেই।

এতে কী হবে? কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজে ধীর গতি আসবে। হোক। কারণ এতে করেতো পৃথিবী শেষ হয়ে গেল না। এই বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধি কম হোক। ভারতে কোভিড মহামারীর বছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এবার তার প্রবৃদ্ধি ৮.৪ শতাংশ। ফলে এই বছর আমার বাজেটে কম প্রবৃদ্ধি করার সুযোগ আছে। আর কোনও বছরতো কম প্রবৃদ্ধি করিনি।

বাংলাদেশের ৫৩ বছর বয়সে কোনও বছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়নি। এবারও নেতিবাচক হবে না। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধি একটু কমিয়ে দিলে ক্ষতি হবে না। এটা তাহলে মুদ্রাস্ফীতি কমাতেও সাহায্য করবে।

সকাল সন্ধ্যা: মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি কমাতে নানাভাবে কাজ করছে সরকার। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন মতামত আমরা প্রতিনিয়ত জানছি। তবে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনে এ পরিস্থিতি প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছে। এ অবস্থা বাজেটকে কতটা প্রভাবিত করছে?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: আমি মনে করি বাজেটে দুইটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো কর-রাজস্ব বৃদ্ধি করা। কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি এবং তদসংশ্লিষ্ট মূল্যস্ফীতি কমানো।

কীভাবে এটি কমানো যাবে? আমি আমার বিভিন্ন নিবেদনে বারাবার বলেছি, এখন একটা মোক্ষম সময়। নতুন ফসল উঠেছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা এখন বাস্তবায়ন করা দরকার। এখন যেমন আট লাখ টন মজুদ আছে। ফলে কৃষকদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য দিয়ে ফসল কেনা উচিত। এ মজুদের লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত ২৫ লাখ টন।

এটা করতে করতে মুক্তবাজারও ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এখন যদি ১০০টি দোকান থাকে— তাহলে এখন দুই হাজার দোকান করা উচিত। এর ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যাওয়ার সুযোগ হবে। তাতে করে বাজারের ওপর চাপ কমবে। এই কাজগুলো সঠিকভাবে করা গেলে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করি।

এছাড়া মিলগুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যেন বেশি মজুদ করতে না পারে। আর অনেক বেশি যেন আমদানি করতে পারে তার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার এই সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া আগাম কোনও খবর ছাড়াই পাইকারি বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।

সকাল সন্ধ্যা: বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর। বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে কল-কারখানা স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্র-যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। এছাড়া কল-কারখানা স্থাপন আগের থেকে অনেক বেড়েছে। তবে এই মুহূর্তে দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমদানিকে উৎসাহিত করছে না সরকার। ফলে শিল্পখাত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। এই বিষয়টি বাজেটে কীভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: অবশ্যই এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। আপনার যে বক্তব্য, আমদানি নির্ভর দেশ। মনে হয় যেন এম. সাইফুর রহমান, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, এম এ মুহিতের ভাষায় কথা বলছেন।

আমি সবসময় বলেছি, ইচ্ছা করে আমদানিনির্ভর করা হয়েছে। কোন কারণে আমাকে গুড়া দুধ আমদানি করতে হবে? কেন আমি ফার্নিচার আমদানি করব? কেন আমি বাথরুম ফিটিংস আমদানি করব? দেশেই এখন এসব উন্নতমানের পণ্য তৈরি হচ্ছে। কেন আমি তাদের সুযোগ দিচ্ছি না? যারা আমদানির মধ্যে মধু পেয়েছে সেই চক্রটি ভাঙতেই পারলেই আমরা এই বাজেটের মধ্যে আমূল পরিবর্তন দেখতে পারব।

সকাল সন্ধ্যা: আইএমএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাজেটের আয়তন ছোট করতে পরামর্শ দিয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে অবস্থায় পৌঁছেছে—  তা এই বাজেটে কোনভাবে প্রতিফলিত হবে বলে আপনি মনে করেন? যদিও আপনি প্রবৃদ্ধি হারের বিষয়ে ‘রক্ষণশীল’ হতে বলেছেন…

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংককে এত বেশি গুরুত্ব দিলে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে না। আইএমএফ-এর পরামর্শে কোন দেশ অগ্রগতি করেছে সেটা আমি খুঁজে পাই না। ঘানা তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছিল। তাদের অবস্থা এখন আপনারা দেখেন। ১৯৯৭ সালে যে ‘এশিয়ান ক্রাইসিস’ হয়েছিল সেখানে আইএমএফ কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এই প্রথমবারের মতো আমি ফরাসউদ্দিন আবেদন করছি, এবারের বাজেটটা ও মুদ্রানীতিটা সংকোচনমূলক হোক। কারণ হলো এই মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগে দরিদ্র মানুষের। এত সাফল্য ও অগগ্রতির পরেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। কুটির, মাইক্রো ও এসএমই’র বিষয়ে আরও সুযোগ-সুবিধা পথ উন্মুক্ত হোক। এটা জিডিপিতে খুব ভূমিকা না রাখলেও কর্মসংস্থান হবে।

এই প্রথমবারের আমি ফরাসউদ্দিন আবেদন করছি, এবারের বাজেটটা ও মুদ্রানীতিটা সংকোচনমূলক হোক। কারণ হলো এই মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগে দরিদ্র মানুষের। এত সাফল্য ও অগগ্রতির পরেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। কুটির, এসএমই, মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে আরও সুযোগ-সুবিধা পথ উন্মুক্ত হোক। এটা জিডিপিতে খুব ভূমিকা না রাখলেও কর্মসংস্থান হবে।

সকাল সন্ধ্যা: দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এবারের বাজেটেও এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এমন প্রেক্ষাপটে এ অবস্থা কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: যদি অর্থ মন্ত্রণালয় দক্ষভাবে কাজ করে— বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই দেশে একটি দক্ষতার দ্বীপ— তারা যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে ব্যাংক সংস্কার কমিশনেরও কোনও দরকার নেই।

কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপিদের যে সুবিধা দেওয়া হলো এবং ব্যাংক পরিচালক হওয়ার সুবিধা এক বছর বাড়ানো হলো— এতে ব্যাংক খাত সংস্কারের সুযোগ আর থাকল কি? আসলে সরকারের ইচ্ছার ওপর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন নির্ভর করছে। আমি মনে করি, সোনালী ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকগুলোর শেয়ার মূলধন মার্কেটে মানুষের জন্য ছেড়ে দিতে হবে।

সকাল সন্ধ্যা: অর্থপাচার বেড়েছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে নানাভাবে। বাজেটকে ঘিরে কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: অর্থপাচার যা হয়েছে— ৭ বিলিয়ন ডলার— এটাও নাকি ধারণাগত। অর্থপাচারকারীরা শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিচার হচ্ছে কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বিচার করতে হবে। বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সকাল সন্ধ্যা: গত ১৫ বছরে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু আপনি বলেছেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে আরও জোর দিতে। বাজেটে জনসেবার বিভিন্ন বিষয় কতটা নিশ্চিত করা হচ্ছে?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে সেই কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাখাতে শতকরা ২১ ভাগ বরাদ্দ করেছিলেন। অমর্ত্য সেন ২০১২ সালে বাংলাদেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় (সেই সময়ের হিসাব অনুযায়ী) ভারতের অর্ধেক— কিন্তু সামাজিক রূপান্তর অনেক ভালো। ওই সময়ে শিক্ষাখাতে-স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের প্রভাব আমরা এভাবেই দেখতে পেয়েছি।

এখানে কিন্তু একটা ডিলেমা আছে। সরকারকে সময় দিতে হবে। সম্পদ যেহেতু সীমিত, বিত্তবানরা যেহেতু কর দেয় না— কাজেই আপনি অবকাঠামো আগে করবেন— নাকি এই সামাজিক নিরাপত্তাটাও সঙ্গে সঙ্গে করবেন। এটা অগ্রাধিকারের ব্যাপার। একেকজন একেকভাবে করবে। কিন্তু অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে এই জনবন্ধু শেখ হাসিনার সরকারকে।

১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে সেই কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাখাতে শতকরা ২১ ভাগ বরাদ্দ করেছিলেন। অমর্ত্য সেন ২০১২ সালে বাংলাদেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় (সেই সময়ের হিসাব অনুযায়ী) ভারতের অর্ধেক— কিন্তু সামাজিক রূপান্তর অনেক ভালো। ওই সময়ে শিক্ষাখাতে-স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের প্রভাব আমরা এভাবেই দেখতে পেয়েছি।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করেছেন তিনি। সেই সময় এই বিষয় নিয়ে কত না হাসাহাসি হয়েছে। ২০০৯ সালেই ‘সামাজিক সুরক্ষা বলয়’ করা হয়েছে। এই বছর সাত হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে— এটা ভালো। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি যদি শতকরা ১০ ভাগ হয়— আর বৃদ্ধি যদি শতকরা সাত ভাগ করি— তাহলেতো কমে গেল।

এ সুরক্ষা বলয়ে যদি অতিরিক্ত ২০ লাখ মানুষ এর মধ্যে যুক্ত করি তাহলেতো এই বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। এর মধ্যে পেনশন যুক্ত আছে। এটি আলাদা করা হোক। এটা আমি সরকার প্রধানকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

সকাল সন্ধ্যা: ঘাটতি বাজেটের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতি এই অবস্থায় এসেছে। বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় বাজেটে ঘাটতি কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব আছে। এই বিষয়টি কতটা যৌক্তিক?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: গত পাঁচ-ছয় বছরের বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ। আইএমএফ বলছে বাজেট ঘাটতি পাঁচ শতাংশের মধ্যে রাখতে। পাকিস্তান-ভারত এই বিষয়কে তোয়াক্কা না করেই বাজেট করছে।

তবে আমি বলব, রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্প কাটছাট করে বাজেট করতে। তাহলে আমাদের বাজেটের আকার ছোট হবে। যদিও মনে রাখতে হবে, প্রমিত বাজেট হলো মোট জিডিপির শতকরা ২০ ভাগ।

আমরা প্রথম শুরু করেছিলাম শতকরা ১২ ভাগ দিয়ে। একবার হয়েছিল ১৭ ভাগ। এখনও আমরা ১৫-১৬ শতাংশের বেশি করতে পারি না। এবার না হয় আর একটু সংকুচিত করা যেতে পারে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে যে কোনওভাবেই। না হলে বাজেটের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

আমরা প্রথম শুরু করেছিলাম শতকরা ১২ ভাগ দিয়ে। একবার হয়েছিল ১৭ ভাগ। এখনও আমরা ১৫-১৬ শতাংশের বেশি করতে পারি না। এবার না হয় আর একটু সংকুচিত করা যেতে পারে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে যে কোনওভাবেই। না হলে বাজেটের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

সকাল সন্ধ্যা: সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটের সার্থকতা পেতে আর কোনও উদ্যোগ নেওয়ার দরকার রয়েছে?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: বিত্তবানদের কাছ থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধানের পরতে পরতে আছে সমতাধর্মী হবে— ন্যায় বিচার হবে। এটাই বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সকাল সন্ধ্যা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত