মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও বাজেটে আয়করদাতারা কোনও ছাড় পাচ্ছেন না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না; তা এখনকার মতোই সাড়ে ৩ লাখ টাকা থাকছে।
শুধু তাই নয়, তার পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও এই সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকাই থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তিনি বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানেই এই ঘোষণা দেন।
করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ালেও করহার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এখন ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ করহারের সঙ্গে ৩০ শতাংশের আরেকটি স্তর যুক্ত করা হয়েছে নতুন বাজেটে। বছরে আয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকার বেশি হলে করদাতাকে বাকি অর্থের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা; যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়।
নারী, প্রবীণ নাগরিক, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য এবং গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বেশি।
বাজেট বক্তৃতায় মাহমুদ আলী বলেন, “আমি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যমান স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি। একই সাথে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য করধাপ সমন্বয়পূর্বক বিদ্যমান সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।”
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যক্তির আয়ের প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত।
পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, পরবর্তী ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হার কর আরোপ হবে।
এছাড়া স্বনির্ধারণী ব্যবস্থায় রিটার্ন দাখিলের বিধান চালুর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। রিটার্ন জমার সময় সর্বোচ্চ এক মাস বাড়াতে পারবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কিছু কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নে এই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দিয়ে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর আইনে কর প্রণোদনা-সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনও করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনও কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না, এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।