ঢাকার ব্যস্ত এলাকা মগবাজার রেলগেইটে ২৩ বছরের বেশি সময় ধরে মোটরবাইক মেরামতের কাজ করেন রশিদ অটো পার্টসের মালিক মো. রশিদুল ইসলাম। সকাল থেকে রাত অবধি তার হাতে লেগে থাকে পোড়া মবিল আর ধুলো-ময়লার কালো আস্তর। বিকল মোটরসাইকেলগুলো এই হাতেই সচল হয়ে আবার দাপিয়ে বেড়ায় সড়কে। মোটরসাইকেল মেরামত করে পাওয়া অর্থে সংসার চলে রশিদের এবং তার ওয়ার্কশপে কাজ করা ৮-৯জন কর্মচারীর। সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যে জাতীয় বাজেটের খবর রাখার ফুরসত পান না রশিদ। তবে যখন মোটরপার্টসের দাম বাড়ে বা কমে, রাইড শেয়ারিং নীতিমালার কারণে সড়কে মোটরসাইকেলের চলাচল বাড়ে, তখন বাজেট বা সরকারের নীতিমালার প্রভাব রশিদ ও তার কর্মচারীদের আয়-রোজগারের ওপর পড়ে। তাই জাতীয় বাজেটের গণ্ডি পেরিয়ে বের হওয়ার উপায় নেই এই মোটর মেকানিকেরও।
সকাল সন্ধ্যা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রতিবছরই এমন বাজেট হয়। এই বাজেটে কী হয়, আপনার সঙ্গে বা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর এর কী প্রভাব পড়ে, এনিয়ে কি কখনও ভেবেছেন?
রশিদুল ইসলাম: আমার সারাদিনই কাটে মোটরসাইকেল মেরামতের কাজে। বাজেটের খোঁজ-খবর রাখার সময় কি আমার আছে? তবে দেখেন, আমাদের রুটি-রুজি মানুষের কাছ থেকে আসে। রাস্তায় চলতে গিয়ে মোটরসাইকেল নষ্ট হলে লোকজন আমাদের কাছে আছে। আমরা মেরামতের কাজ জানি, তাই কিছু করে খেতে পারছি। মোটরসাইকেলের পার্টস আমরা বানাই না। দোকান থেকে কিনে এনে লাগিয়ে দিই। যে দামে কিনি, তার থেকে দুই-দশ টাকা বেশি হয়তো রাখা যায়। কিন্তু তাতে কি আমাদের সংসার চলে? এখন লোকজনের আয়-রোজগার কম, আমাদেরও সার্ভিসিং বিল বেশি দিতে পারে না। এখন বলেন, এই বাজেট দিয়ে আমার কী হবে?
সকাল সন্ধ্যা: বাজেটে মোটরসাইকেল বা এর স্পেয়ার পার্টসের (যন্ত্রাংশ) দাম কমলে কি আপনাদের আয় বাড়বে?
রশিদুল ইসলাম: ডলারের দাম বাড়ছে বলে সব পার্টসের দাম বেড়েছে। মবিল (ইঞ্জিন অয়েল) আগে ছিল যেটা সাড়ে তিনশ টাকা, এখন সেটা ৫০০ টাকা। যেটা ছিল ৪০০ টাকা, এখন সেটা ৬০০ টাকা। মবিল মাসে একবার পরিবর্তন করতে হয়। এখন কোনও কোনও মোটরসাইকেলচালক তিন মাসে একবার মোবিল চেঞ্জ করে। মোবিল শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সিজ (অচল) হয়ে যায়। এগুলো মানুষ কেন করে? টাকার অভাবে। আমরা মবিল চেঞ্জ করলে ২০ টাকা পাই। মবিল চেঞ্জ করা কমে গেলে সেই আয়ও কমে যায়।
সকাল সন্ধ্যা: রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল যুক্ত হওয়ায় কি আপনাদের কাজ-কর্ম বাড়েনি?
রশিদুল ইসলাম: এখন বেশিরভাগ চালকই আসে যারা পাঠাও বা এ জাতীয় অ্যাপ বা ক্ষ্যাপ চালায়। তারা গরিব বলেই তো যাত্রী টানে। এরাও মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ে ঠিকঠাক খরচ করতে পারে না। তবে আগের থেকে মোটরসাইকেল যেহেতু বেড়েছে, আমাদেরও কাজ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু দোকান ভাড়া কি বাড়ে নাই? আগে দিতাম মাসে ২০ হাজার টাকা। এখন দিচ্ছি ৩৫ হাজার টাকা। কর্মীদের বেতনও বেশি দিচ্ছি এখন। এখন আমার এই আয় বৃদ্ধির জন্য আপনার বাজেট কী করবে জানি না। আমার প্রতি মাসে নিজের দোকান (ওয়ার্কশপ) আর সংসারের বাজেট মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
বছর শেষে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের খরচও বেড়েছে তিন গুণ। আগে ট্রেড লাইসেন্স করেছি সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এখন সেই লাইসেন্স নবায়ন করতে লাগে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। আমরা গরিব মানুষ, রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল মেরামত করে খাই। এই দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে যদি এত টাকা দিতে হয়, তাহলে কি কেউ তা করবে? এখন সরকার কেবলই খরচ বাড়াচ্ছে। তারা কি কোনও দিন চিন্তা করছে, ঢাকায় মোটর মেকানিকরা কত টাকা আয় করে? একটা ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স করলে বছরে যত টাকা মুনাফা করা যায়, ওয়ার্কশপ চালিয়ে তো এত টাকা আয় করা যায় না।