Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সাধারণের বাজেট ভাবনা

‘আলু-পেঁয়াজের দাম কমবে কি’

রাবেয়া আক্তার।
রাবেয়া আক্তার।
[publishpress_authors_box]

ঢাকার গুলশানের পাশে নর্দা এলাকায় থাকেন গৃহিনী রাবেয়া আক্তার। বয়স ৫০ বছর। প্রায় ৩০ বছরের সংসার জীবন। তার স্বামী একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। স্বামীর সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালাতে কোথায় কত খরচ করবেন, তা ঠিক করতে গিয়ে বাজেট শব্দটির সঙ্গে তারও পরিচয় ঘটে। সংসারের নানা হিসাব-নিকাশ করে মেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন, বিয়েও দিয়েছেন। তবে দেশের বাজেট নিয়ে কথা উঠলেই তার মনে প্রথম প্রশ্ন আসে- নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না? জাতীয় বাজেট নিয়ে এর বেশি কিছু তার মাথায় আসে না। বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশাল এই ব্যয় মেটাতে দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা কর, ভ্যাটসহ অন্যান্য রাজস্ব বাবদ আদায় করবে সরকার। এই করের আওতায় আছেন রাবেয়া বেগমের মতো দেশের অসংখ্য গৃহিনী। তবে বাজেটের আর কতটুকুই বা ধারণা রাখেন এই গৃহিনীরা, তা জানতে সকাল সন্ধ্যা মুখোমুখি হয় রাবেয়া আক্তারের।

সকাল সন্ধ্যা: এবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে আপনি কতটা জানেন?

রাবেয়া আক্তার: না, জানি না। আমি এত খোঁজ-খবর রাখি না। বাজেট নিয়ে খোঁজ-খবর রেখে আমার কি উপকার? আমার দরকার আলু, পেঁয়াজের দাম কমবে কি না, সেই খবর। সরকারের বাজেট নিয়ে কাজ করে মন্ত্রী-মিনিস্টাররা। আমার কথা শুনে কি তারা বাজেট করবে?

সকাল সন্ধ্যা: আপনি কি কখনও বাজেট পেশের খবর দেখেছেন বা শুনেছেন?

রাবেয়া আক্তার: সময় পেলে টেলিভিশনে দেখি। তবে সব বছর দেখা হয় না।

সকাল সন্ধ্যা: অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে কাউকে চেনেন। কারও নাম বলতে পারবেন।

রাবেয়া আক্তার: মুহিতের (প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত) নাম জানি। এর আগে ছিল কামাল (আ হ ম মুস্তফা কামাল)। আর সাইফুর রহমানের নাম জানি।

সকাল সন্ধ্যা: বর্তমান অর্থমন্ত্রীর নাম জানেন?

রাবেয়া আক্তার: এখন কে আছে? সেটাই তো জানি না। আমার এত জেনেই বা কাজ কী? সরকার যদি (ভোজ্য) তেলের দাম কমায় বাজেটে, আমরা তাতেই খুশি। সব কিছুর দাম বাড়তি। এ বছর শুনছি আমের ফলন কম। দাম বেশি। আম খেতে পারব কি না, সেই চিন্তা করছি।

আজকে সকালে বাড়িওয়ালা এই মাসের বিদ্যুৎ বিল দিয়ে গেছে। ইউনিট প্রতি এক টাকা বেশি নিচ্ছে বাড়িওয়ালা। আমার বাসায় এসি আছে। প্রায় ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয় মাসে। এখন থেকে মাসে বিদ্যুতের জন্য আমাকে ৩০০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। এই খরচ মেটাতে গেলে আমার সংসারের বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। এই ৩০০ টাকা কম খরচ হলে আমি আরও কিছু সঞ্চয় করতে পারতাম।

সকাল সন্ধ্যা: সংসারের সব খরচ কি আপনার হাত দিয়ে হয়? কীভাবে এই বাজেট করেন?

রাবেয়া আক্তার: এগুলো এখন মুখস্ত হয়ে গেছে। প্রতিমাসে স্বামীর বেতন থেকে প্রথমে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, নেট বিল, ডিশ বিল, ময়লার বিল, দুধওয়ালার টাকা পরিশোধ করি। তার পর মাসের খাওয়ার জন্য চাল ফুরালে চাল কিনি। মাছ-মাংস যখন যেটা খেতে ইচ্ছা করে, কিনি। তবে যখন ইলিশ মাছ একটু সস্তা পাই, তখন একটু বেশি করে কিনে রাখি। সামনে কোরবানির ঈদ, স্বামী বোনাসের টাকা পেলে এর সঙ্গে কিছু জমানো টাকা যোগ করে ভাগে গরু কোরবানি দেব। এবার ঈদের বাজেট বেশি নাই।   

আর অসুখ-বিসুখ বাঁধলে তো কোনও কথা নাই। বিপদ-আপদেও কত টাকা খরচ হয়, এগুলো তো আগে থেকে হিসাব করে রাখা যায় না। বেশি টাকার টানাটানি পড়লে বাড়িভাড়া বকেয়া পড়ে। পরে আবার হাতে টাকা-পয়সা জমলে পরিশোধ করে দিই।

সকাল সন্ধ্যা: আপনি কি জানেন সরকার আপনার কাছ থেকে কী কী ভাবে টাকা নিয়ে খরচ করে, বাজেট করে?

রাবেয়া আক্তার: মোবাইলে কথা বলার ওপর ভ্যাট নিচ্ছে। এখন ইমোতে কথা বলি বেশি। গ্যাস-পানির বিলও বেশি দিচ্ছি আগের থেকে বেশি। আর কিসে কিসে টাকা বাড়াবে, জানি না। এগুলি নিয়ে ভাবলেই মনে হয় সরকার যে এত নিচ্ছে, আমাদের কী দিচ্ছে? 

সকাল সন্ধ্যা: এই যে মেট্রো রেল চালু হয়েছে। এখন পাতাল রেল করছে। এগুলোর জন্যই তো টাকা লাগে সরকারের।

রাবেয়া আক্তার: এগুলো তো ভালো হয়েছে। আমি এখনও মেট্রো রেলে চড়িনি। আমার দরকার পড়ে নাই। তবে সংসার খরচ বাড়লে একটু খারাপ লাগে। সারা জীবন ভাড়া বাসায় থাকলাম। ২৬ বছর একই বাসায় ভাড়া আছি। নিজে একটা বাড়ি করতে পারলাম না। সরকার যদি সবার নিজের বাড়ির জন্য ব্যবস্থা করতো, তাহলে কর দিয়ে বুঝতাম, কিছু লাভ হয়েছে। ঢাকা শহরে এত বছর থেকে কেবল বেঁচে থাকা হলো। এত বছর সরকারকে কত টাকা দিয়েছি, তার তো কোনো হিসাব রাখি নাই। এই টাকা দিয়ে কি একটা বাড়ি হত? তাও জানি না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত