বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে যে আন্দোলন চলছে, তাকে ‘বায়বীয়’ বলছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
এবিষয়টি ধরে গত কয়েকদিন ধরে বুয়েট অশান্ত থাকার মধ্যে সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে তারা।
বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে সংসদ সদস্য আবদুস সবুর বলেন, “৩০০ থেকে ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী আন্দোলন করছে। এটা তো টোটাল শিক্ষার্থীর ৫ শতাংশও না। এটা বায়বীয় আন্দোলন, এই আন্দোলনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সমর্থন নাই।”
আন্দোলনকারীদের পেছনে ইন্ধন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি উগ্র মৌলবাদীদের মাধ্যমে এ পবিত্র ক্যাম্পাসকে ধীরে ধীরে মৌলবাদীদের আস্তানায় পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত।
“একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সরাসরি অভিযুক্ত করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।”
বুয়েটে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগ নেতা সবুর বলেন, “এ বুয়েট ক্যাম্পাসেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা তৈরি হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণ অংশগ্রহণ করে এবং জীবনদান করেন মুফতি কাসেদ, মাহফুজ, ইকবাল, বদিউলসহ অনেকে। এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র শহীদ রুমী মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিল। তার মা বাংলাদেশের আপামর জনগণের নিকট শহীদ জননী হিসেবে স্বীকৃত।”
২০১৯ সালে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর পিটুনিতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলনে নেমে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার দাবি তোলে। পাশাপাশি যাদের আমন্ত্রণে ছাত্রলীগ নেতারা গিয়েছিলেন, বুয়েট থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানায়।
আবরার হত্যাকাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ দাবি করে সবুর বলেন, “আবরারের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা,এটা নিয়ে বসে থাকার কিছু নেই। হত্যাকারী যেই দলের হোক না কেন, সে হত্যাকারী। আমরা সকল হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে বুয়েটে ছাত্র সংগঠনগুলোর কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি দাবি করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
তাদের দাবিগুলো হলো- বিগত ২৮ মার্চ থেকে বুয়েটে অচলাবস্থা ও অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টিকারীদের তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ইমতিয়াজ রাব্বীকে বিনা তদন্তে বেআইনিভাবে হল থেকে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, বুয়েটের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে টাংগুয়ার হাওরে গ্রেপ্তারকৃত ২৪ উগ্র-মৌলবাদীদের বিরূদ্ধে বুয়েট কর্তৃপক্ষের একাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, হিযবুত তাহরীর, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র-মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে এবং এদের মদদদানকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ছাত্র রাজনীতি চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে বুয়েটে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান বন্ধ করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বুয়েটে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছেন বলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, কাজী খায়রুল বাশার, মোহাম্মদ হোসাইন, আতাউল মাহমুদ, আহসান বিন বাশারসহ অনেকে।
এদিকে এই সংবাদ সম্মেলনের পর হাইকোর্ট বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিটির কার্যকারিতা স্থগিত করে।
সাদ্দাম হোসেনকে ক্যাম্পাসে আমন্ত্রণ জানিয়ে শাস্তি পাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি রাহিমের করা রিট আবেদনে এই আদেশ আসে।