পুষ্টির বিচারে দুধকে আদর্শ খাবারের মধ্যে রাখা হয়। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আরও নানা জরুরি খনিজ আছে দুধে। নাশতায় এক গ্লাস এবং রাতের খাবারে বা ঘুমে আগে হালকা গরম দুধ খেলে গায়ে শক্তি থাকে, ঘুম ভালো হয় এমন কথা নানি-দাদিরাও রোজ বলতেন।
কিন্তু গরুর দুধ বেশি খাওয়া হলেও মহিষের দুধেও কিন্তু স্বাদ ও পুষ্টি বেশ রয়েছে। তাহলে কোনটি বেছে নেবেন – গরু না মহিষের দুধ?
গরুর দুধের উপকারীতা নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না; আগে তাই জেনে নেওয়া যাক।
গরুর দুধের পুষ্টিগুণ
গরুর দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। শিশুদের হাড় গঠনে এবং বড়দের বিশেষ করে নারীর অস্টিওপোরোসিস রোধে এই দুধ খুবই কার্যকর। প্রোটিনে ভরপুর গরুর দুধে আছে অ্যামিনো এসিড; যা মাংসপেশীর গঠন ও শরীরবৃত্তীয় কাজে ভূমিকা রাখে। গরুর দুধে আরও আছে ভিটামিন বি১২, বি২ এবং ডি। এমনকি পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজও মেলে এতে।
হাড়ের যত্নে
বয়সকালেও সুস্থ থাকতে দাঁত ও হাড়ের মজবুত থাকা জরুরি। দাঁত থাকলে খাবার চিবিয়ে খাওয়া তো আছেই, হাসি, কথা বলার সৌন্দর্যেও দাঁত চোখে পড়ে সবার আগে। আর হাড় যদি শক্ত না থাকে তাহলে তো চলাফেরা, ওঠাবসা দায় হয়ে যায়। মানুষের দাঁত এবং হাড়ের যত্নে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি; যা মিলবে গরুর দুধে।
মাংসপেশীর গঠন
গরুর দুধে থাকা প্রোটিন মাংস পেশী গঠন ধরে রাখে ও আরও মজবুত করে। খেলোয়াড় এবং কায়িক শ্রমে যুক্ত থাকা সবার জন্য গরুর দুধ বেশ উপকারি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে গরুর দুধ
গরুর দুধে আছে ভিটামিন এ, জিংক এবং সেলেনিয়াম; যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
পানিশূন্যতা রোধ
গরুর দুধের ৮৭ শতাংশই পানি থাকায় শরীর থাকে আর্দ্র। ফলে গরমে কায়িক শ্রমের পর অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতা
গরুর দুধে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শরীরে পর্যাপ্ত পটাশিয়ামের উপস্থিতি ঠেকিয়ে দিতে পারে হৃদযন্ত্রের অনেক অসুখ।
বলা হয়, গরুর দুধে থাকা ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারি। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
ত্বকের যত্নে
গরুর দুধের ভিটামিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারি। যেমন ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম। এই দুই উপাদান ত্বক সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে দরকারি। পাশাপাশি গরুর দুধ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ত্বকের বলিরেখা দূর করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে
গরুর দুধের প্রোটিন ভরপেট অনুভূতি দেয় বলে বেশি খেয়ে বেশি ক্যালরি নেওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। কোনো কোনো গবেষণা বলছে, নিয়মিত দুধ খেলে তা মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
গরুর দুধের উপকারিতায় ভরসা করাই যায়; কিন্তু মহিষের দুধের পুষ্টিগুণও কোনো অংশে কম নয়।
উচ্চ মাত্রার প্রোটিন
বলা হয়ে থাকে গরুর দুধের চাইতেও বেশি প্রোটিন আছে মহিষের দুধে।
উচ্চ মাত্রার ফ্যাট
মহিষের দুধে আছে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট। যা শরীরে প্রচুর শক্তি জোগায় এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে শোষণে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ
মহিষের দুধে থাকা উচ্চ মাত্রা ইমিউনোগ্লোবিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধেও রাখে কার্যকর ভূমিকা।
ভালো রাখে হৃদযন্ত্র
মহিষের দুধে থাকা পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
নিম্ন মাত্রার কলেস্টেরল
মহিষের দুধে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট থাকার পরও এতে আবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। ফলে এই দুধকে হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ মনে করা হয়।
ত্বকের যত্নে
মহিষের দুধে থাকা উচ্চ মাত্রার ফ্যাট, ভিটামিন এ ও ই ত্বককে রাখে আর্দ্র। ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতেও মহিষের দুধের তুলনা নেই।
এন্টিঅক্সিডেন্ট
মহিষের দুধে আছে টকোফেরল এবং রেটিনলের মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর।
এতো এতো উপকারিতা জানার গরু না কি মহিষের দুধ খাবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন মনে হচ্ছে কী?
আসলে এই দুই ধরনের দুধেই আছে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও মন্দ দিক; এমন কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কে কোন ধরনের দুধ খাবেন তা পুরোপুরি নির্ভর করে নিজ নিজ পছন্দের উপর। তাছাড়া কার এলাকায় কোন ধরনের দুধের দাম ও মান কেমন তাও ভেবে দেখতে হবে।
কারও পছন্দ কম মাত্রার ফ্যাট থাকা গরুর দুধ। কারও আবার ক্রিম থাকা মহিষের দুধ বেশি পছন্দ।
তাই গরু নয়তো মহিষের দুধ যেটাই বেছে নিন না কেন খাওয়ার আগে নিজের হজমের ক্ষমতা এবং বিশেষ পুষ্টি চাহিদার দিকটি ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।