Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫

বন্দরের ট্যারিফ ৪১% বাড়ানোর সমালোচনা ব্যবসায়ীদের

চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসনে রবিবার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি আমিরুল হক।
চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসনে রবিবার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি আমিরুল হক।
[publishpress_authors_box]

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের ট্যারিফ বা মাশুল এক লাফে ৪১ শতাংশ বাড়িয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, যা কার্যকর হচ্ছে আগামী ১৫ অক্টোবর। দেশের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বলে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চট্টগ্রাম চেম্বার প্রশাসক দিয়ে পরিচালনা করায় ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে জোর প্রতিবাদ ছিল না। এই প্রথম এসবের প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন চট্টগ্রামের একদল ব্যবসায়ী নেতা।

রবিবার চট্টগ্রামের পাঁচতারা হোটেল রেডিসনে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক শিল্প, সিমেন্ট ব্যবসায়ী, শিপিং ব্যবসায়ী, এলপিজি ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারকসহ অনেকেই ট্যারিফ স্থগিতের জোর দাবি জানান।

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলা এ সভায় ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম বন্দর প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি আমিরুল হক।

চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন তিনি।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক বলেন, “ট্যারিফ বাড়ানো কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে বন্ধ করার একটি ষড়যন্ত্র। কই আপনারা তো মোংলা বন্দরে ট্যারিফ বাড়াননি, পায়রা বন্দরে ট্যারিফ বাড়াননি। তাহলে চট্টগ্রামে কেন ট্যারিফ বাড়লে? প্লিজ দয়া করে এটি বন্ধ করুন। আর আগাবেন না।”

এফবিসিসিআইর সাবেক এই পরিচালক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এমন কোনও উপদেষ্টা, সেক্রেটারি নাই এই ট্যারিফ বাড়িয়ে আবার তিনি চট্টগ্রামে আসবেন। এটা হবে না। আমার কিন্তু বাধা দিব। হ্যাঁ এই বাধা অন্যভাবে হবে। আমরা ট্রেড ইউনিয়ন (শ্রমিক সংগঠন) নই, আমরা ট্রেড বডি (ব্যবসায়ী সংগঠন)। আমরা বাধা দেব অন্যভাবে। হয়তো হাত উচিয়ে বাধা দিব।”

অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার সমালোচনা করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আপনি দুই বছর আগে অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) হয়েছেন মাত্র। আর আমি ৪০ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। আমাকে শেখানও এত সোজা না কিন্তু। এখানে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের কেউই কিন্তু কচি খোকা না।”

তিনি বলেন, “আমি বলতে থাকব। কারণ এখন আগের সরকারের ডিবি হারুনের ভয় নেই। ফলে যখন যেই ফোরামে পারি এই ট্যারিফ বাড়ানো বন্ধ করতে সোচ্চার থাকব। আমি কমেন্ট করতে কখনও ভয় করিনি।”

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা কার্যক্রম সমালোচনা করে এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আমিরুল বলেন, বন্দরে আইবিএ-এমবিএ নাই, চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট নাই, কস্ট একাউন্ট্যান্ট নাই, আপনার কাছে ম্যানেজমেন্ট ইনফরেমশন সিস্টেম নাই। আপনার কাছে সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট নাই। তাহলে কীভাবে এই বিশাল বন্দর আপনি চালান? আপনি ট্যারিফ বাড়ান? আমার মতো প্রতিষ্ঠানে ১০ জন চাটার্ড-কস্ট একাউন্ট্যান্ট কাজ করে।”

চট্টগ্রাম বন্দরে গত ১৪ বছরে ১২ জন চেয়ারম্যান কাজ করেছেন- উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর মধ্যে ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। আপনারা যদি এত ভালো হন তাহলে কেন এই দুর্নীতি মামলা? কোথায় আমরা?”

চট্টগ্রাম বন্দরের টাকায় বিগত সরকারের সময় পায়রা বন্দর নির্মাণের সমালোচনা করে আমিরুল হক বলেন, “কোথায়, কোন ম্যানুয়ালে এই নিয়ম লেখা আছে? আমাদের বন্দরের একটি টাকা আর কোথাও নিতে দেওয়া হবে না।”

তখন হলে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা করতালি দিয়ে তার প্রশংসা করেন।

চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসনে রবিবার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিতের জোর দাবি জানানো হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর প্রশাসনের সমালোচনা করে আমিরুল হক আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যারিফ নির্ধারিত হবে কস্ট বেইজড। কিন্তু নিট মুনাফা কীভাবে ২৯শ কোটি টাকা করেন? কে আপনাকে করতে বলেছে?

ব্যবসায়ীদের বন্দর চেয়ারম্যান ও সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ না ডাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উনারা পাবলিক সারভেন্ট। আমাদের টাকায় উনার চলছেন।”

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ড দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে আমিরুল হক বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার পেছনে এজেন্ট হিসেবে কে কাজ করছে; আর কে মায়ের্কস লাইন, এমএসসি অফিস গিয়ে তদবির করছে আমরা সবই জানি। সবার কাছে তথ্য আছে।”

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী ‘বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন’- এ প্রশ্ন রেখে বলেন, “কে এই কাজ করছে, তাদের শনাক্ত করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে আর খেলতে দেওয়া হবে না।”

তিনি বলেন, “যদি ট্যারিফ বাড়াতে হয় তাহলে স্টেক হোল্ডার বা বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে আলাপ করেই বাড়াতে হবে। তার আগ পর্যন্ত সেটি স্থগিত রাখতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। আর চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা বোর্ড অবশ্যই একজন চেম্বার প্রতিনিধি রাখতে হবে।”

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি ও কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান বলেন, “তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?”

সভায় এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার পরিচালক হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম, শওকত আল এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট এস এম আবু তৈয়ব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত