বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তিসহ ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ করা হয়।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) শীর্ষক এই জরিপ করেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭৫।
এই নিয়ে তিনবারের মতো করা হলো এই জরিপ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার পরিবেশ সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ১। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই স্কোর সামান্য বেড়ে হয় ৬১ দশমিক ৯৫।
কৃষি ও বনায়ন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও ট্যানারি, ওষুধ ও রাসায়নিক, আবাসন, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পরিবহন, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা—এই ১২টি খাতের ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপ চালানো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
তিনি জানান, মোট ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপ করা হয়েছে। এগুলো হলো-ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান। এর মধ্যে শেষ সূচকটি এবারই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এবারে জরিপে দেখা গেছে, ১১টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে; এই সূচকে প্রাপ্ত পয়েন্ট মাত্র ২৮ দশমিক ১১।
গত অর্থবছরের জরিপে বলা হয়েছিল, ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে, এবারের জরিপেও তার ধারাবাহিকতা দেখা গেল।
২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে অবকাঠামো খাত। এই সূচকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর ৭১ দশমিক শূন্য ৮।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ব্যবসা শুরুর সূচকে ৬২ দশমিক ৭৪, জমির প্রাপ্যতা সূচকে ৫৩ দশমিক ১১, আইন-কানুনের তথ্যপ্রাপ্তি সূচকে ৬৮ দশমিক শূন্য ৪, শ্রম নিয়ন্ত্রণে ৭০ দশমিক শূন্য ৪, বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৬২ দশমিক ৩৮, বাণিজ্য সহজীকরণে ৬০ দশমিক ৮৭, কর পরিশোধে ৫৪ দশমিক ৭৪, প্রযুক্তি গ্রহণে ৬৩ দশমিক ৫০ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মানে স্কোর ৫১ দশমিক ৫৯।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান।
তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এই জরিপ করা হয়েছে। কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার, সে বিষয়ে ধারণাও দেবে এই জরিপ। নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন, তাদের কোন পথে চলতে হবে।
আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী।
