চট্টগ্রাম শহরে দিনদুপুরে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ব্যবসায়ীর নাম আফতাব উদ্দিন তাহসিন (২৬)। তিনি ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে আসা চার অস্ত্রধারী তাহসিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময় আশপাশে লোকজনের উপস্থিতি থাকলেও অস্ত্রধারীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অস্ত্রধারীরা তাহসিনের উরু ও পা লক্ষ্য করে গুলি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
কী কারণে তাহসিনকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, চাঁদার দাবি পূরণ না করায় এ ঘটনা ঘটতে পারে। সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অনুসারীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক জামায়াত-শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইসতিয়াক সাংবাদিকদের বলেন, চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়ার উদুপাড়া এলাকায় আফতাব তার ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখেন। বিকাল সোয়া চারটার দিকে এক ট্রাক বালু এনে সেখানে রাখা হচ্ছিল, তখন আফতাব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোয়াহ মডেলের মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়া হয়।
“এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাছানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা আফতাবের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। আশপাশে লোকজন থাকলেও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ আফতাবকে বাঁচাতে এগিয়ে যাননি।”
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়।
নিহত আফতাবের ছোট ভাই মো. তানভীর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমার ভাই ফেসবুকে লেখালেখি করতেন। ইট ও বালুর ব্যবসা করায় ভাইয়ের কাছে চাঁদাও চায় সাজ্জাদ গ্রুপ। এই অভিযোগে আমরা থানায় জিডি করি দুই মাস আগে। কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি। উল্টো আমার ভাইকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলো।
“এখন পুলিশকে অভিযোগ দিয়ে কিংবা এসব বলে আর কী হবে? পুলিশ তো তাকে (সাজ্জাত) গ্রেপ্তার করে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, “সন্ত্রাসী সাজ্জাদই গুলি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। বিদেশে পলাতক জামায়াত-শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে দেশে চাঁদাবাজি করেন দেশে থাকা এই সাজ্জাদ। তার বাড়ি হাটহাজারির শিকারপুরে।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছিল। যদিও পরের মাসেই তিনি জামিনে মুক্ত হন।
কিছুদিন আগে সাজ্জাদ গ্রুপের নেতৃত্বে একই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে সাজ্জাদ তার দুই সহযোগীকে নিয়ে গুলি করেন। এ ঘটনা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে উঠে আসে।
সে সময় ভয়ে ভবন মালিকেরা ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। ওই ঘটনার আগে গত ৩০ আগস্ট একই এলাকায় দুজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় আসামি করা হয় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের। তবে এসব ঘটনার পরও তাদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা বলছেন, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, চান্দগাঁওয়ের হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সাজ্জাদ।