ঢাকার ডেমরা এলাকায় রাজীবুল আলম নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুই চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে আদালত।
রবিবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালত এই রায় ঘোষণা করে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয় আদালত। জরিমানার এই অর্থ পরিশোধ না করলে তাদের আরও তিন মাস কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– বিজয় ওরফে শামীম আহম্মেদ, দ্বীন ইসলাম, মো. ইকবাল, নাছু ওরফে নাসির উদ্দিন ও রাজিব ওরফে মোটা রাজিব।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার চার আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। তারা হলেন– রিপন, রাশেদ, তপন ও রাসেল ওরফে রোসেল ওরফে মমিতুর রহমান।
খালাস পাওয়া আসামিদের মধ্যে রাশেদ, রিপন ও ইকবাল রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। জামিনে থাকা অন্য আসামিরাও অনুপস্থিত ছিলেন। মামলার প্রধান আসামি রুবেল ২০১০ সালের ১৬ মার্চ র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রাজীবুল বলেছেন, তিনি ন্যায়বিচার পাননি।
“আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমার চোখ উপড়ানোর ঘটনার সঙ্গে ১০ জন আসামি জড়িত ছিল। কিন্তু আদালত চারজনকে খালাস দিয়েছে।”
সমান অপরাধ করেও বাকিরা কীভাবে খালাস পায়– এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
রায়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে রাজীবুলের স্ত্রী মলি আক্তার বলেন, “১৬ বছর আগে আমার স্বামীর চোখ উপড়ে ফেলা হয়। সন্তানসহ কতটা কষ্ট নিয়ে আমরা জীবনযাপন করছি, অথচ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা খালাস পেয়ে গেল!”
তিনি বলেন, “চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা সকল আসামির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। অভিযোগপত্রেও তাদের নাম রয়েছে। এ মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব।”
রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ৫ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে ধারালো অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও রাজীবুলকে হত্যা না করায় বোঝা যায়, রাজীবুলকে হত্যা করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। এ মামলার সঙ্গে রিপন, রাসেল, তপন ও রাশেদের সম্পর্ক থাকার প্রমাণ আদালত পায়নি। তাই তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে রিকশায় করে রাজীবুল আলম ডেমরার বোর্ডমিল এলাকা থেকে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হন। পথে আসামিরা রিকশা থামিয়ে রাজীবুলকে একটি ফাঁকা প্লট নিয়ে যায়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলে। এই ঘটনায় রাজীবুলের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে ডেমরা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ডেমরা থানার পুলিশ পরিদর্শক মীর আতাহার আলী ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলাটি বিচার চলাকালে ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।