রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শূন্যতা পূরণে অন্তর্বতীকালীন যে সরকার দায়িত্ব নিল, তাদের কাছে প্রথমেই বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এও বলেন, এই মুহূর্তে নতুন সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে এই সরকারের আরও ১৩ জন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে শপথ নেন তারা। আর ৩ জনের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে এক প্রতিক্রিয়ায় সকাল সন্ধ্যাকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এই মুহূর্তে বা প্রথমেই সবচেয়ে বড় কাজ হবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া। অর্থনীতি ঠিক থাকলে দেশ ঠিক থাকবে। বিশেষ করে রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার নিরবচ্ছিন্ন জোগান ঠিক রাখতে হবে। আমাদের প্রোডাকশন ঠিক রাখতে হবে।
“এমনিতেই গত তিন চার বছর ধরে রপ্তানি বাণিজ্য, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নিয়ে আমাদের সমস্যা চলে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে স্থানীয় শিল্প কারখানার উৎপাদনের গতি বাড়াতে সেভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।”
চট্টগ্রাম চেম্বারের কয়েক মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়া মাহবুবুল আলম আরও বলেন, “এই মুহূর্তে নতুন সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে করাপশন বন্ধ করা। তাহলেই অর্থনীতি ঘুরে যাবে।
“ড. ইউনূস শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয় ওনি সারা বিশ্বের সম্পদ। ওনার যে ইমেজ আছে তার সঙ্গে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া।”
এর আগে বুধবার ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানান উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “দুষ্কৃতিকারীদের ধ্বংসযজ্ঞ অবশ্যই রুখে দিতে হবে। এর সঙ্গে ছাত্ররা জড়িত নয়। সারাদেশে কিছু দুষ্কৃতিকারী এ তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই চাপে থাকার অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সময়টিতে পরিস্থিতি এমন ছিল- হয় আপনি আমার পক্ষে থাকবেন, নাইলে আপনি আমার বিপক্ষে। মাঝে কোনও অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ছিল না।”
সম্মেলনে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদ্যসাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাদের ঘণ্টা-মিনিট হিসাব করে কাজ করতে হয়। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট হচ্ছে।
“এ পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা চালাতে পারছি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চারটি বিষয় বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। এগুলো হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, কারখানা চালুর ব্যবস্থা করা, মানুষের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং থানা ও পুলিশকে সক্রিয় করা।”