মূল্যস্ফীতি দমাতে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে যেভাবে বাজার তদারকি দরকার, তা দেখা যাচ্ছে। ফলে বাজারে গিয়ে পণ্যমূল্যের উত্তাপে হাঁসফাঁস করা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না ভোক্তাদের।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যাও মিলছে, সেটিও পর্যাপ্ত নয়। আলু ও পেঁয়াজের কারণেও অস্বস্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। মাছের বাজার চড়া। কেবল শাক-সবজির দাম কিছুটা হাতের নাগালে রয়েছে।
শুক্রবার ফার্মগেট, নিউমার্কেট ও কারওয়ানবাজারসহ বেশকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এসব বাজারে শীতের শাক-সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, ঢেড়শ ৬০ টাকা, মুলা ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা ও কচুরমুখী ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। আর মানভেদে প্রতিটি ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, আর লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। গাজর ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি।
দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায়।
বাজারে লাল শাকের আঁটি ২০-২৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা, লাউশাক ৪০-৫০ টাকা, মুলাশাক ১০-১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫-৩০ টাকা, কলমিশাক ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা নুর আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে সবজির দাম। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কিছুটা কমবে।
তবে, শাক-সবজির দাম কমলেও আলু-পেঁয়াজ পকেট কাটছে ক্রেতার। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ভোজ্যতেল।
নতুন আলু ১০০-১২০ টাকা ও পুরাতন আলু ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাহাজাদা ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কমছে ভালো কথা। তবে অন্যান্য পণ্যের দামও কমতে হবে। না হলে নিম্ন আয়ের মানুষদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
বাজারে তদারকি হলে অনেক পণ্যের দামই যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসত বলে মনে করেন বেশিরভাগ ক্রেতারা।
বাজারে নতুন আলু ১০০-১২০ টাকা ও পুরাতন আলু ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামও চড়া। বর্তমানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আর আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদা ১২০-২২০ টাকা দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
দুই দফা শুল্ক কমানোর পরও ভোজ্যতেলের বাজারে আসেনি স্বস্তি। উল্টো বেড়েছে অস্থিরতা।
বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮-১৭০ টাকা, আর খোলা পাম তেল ১৫৭-১৬০ টাকা। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বোতলের গায়ের দামের থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে। আবার সব এলাকায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার থেকে উধাও ১ ও ২ লিটারের বোতল। কোথাও কোথাও ৫ লিটার বোতলের তেল খুলে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যাও মিলছে, সেটিও পর্যাপ্ত নয়। বেশ কিছুদিন ধরে সয়াবিন না দিয়ে ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল সরবরাহ করছে ডিলাররা।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি, গরু, খাসির মাংস ও ডিমের দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
আর বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০-২৫০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।