ভোট হয়ে গেছে, ক্ষমতায় থাকছে আওয়ামী লীগ, তাও ঠিক হয়ে গেছে। এখন সরকার গঠনের পালা। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার শপথের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। তবে মন্ত্রী কারা হচ্ছেন? পুরনোরাই থাকবেন, নাকি নতুন আসবেন?
২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় প্রভাবশালী নেতাদের বাদ দিয়ে বেশ চমক দেখিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর পরের দুটি মন্ত্রিসভায় প্রবীণ নেতা কয়েকজনকে ফেরালেও ২০১৯ সালের মন্ত্রিসভায় আবার নেন কিছু নতুন মুখ।
এবার কারা মন্ত্রী হচ্ছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে বৃহস্পতিবার শপথের দিন নির্ধারিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা কাদের সঙ্গী করেন।
বিদায়ী সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যারা সামলেছেন, তাদের কারও কারও কাজ হয়েছে সমালোচিত, কারও কারও দক্ষতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এবারের সরকারে কেমন মুখ আসা দরকার, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে কাদের প্রয়োজন, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। তাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আরও যোগ্য ব্যক্তিদের দেখার প্রত্যাশাই ফুটে উঠেছে।
পররাষ্ট্রে আরও চৌকস চাই?
২০০৯ সালের সরকারে দীপু মনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরের সরকারে দায়িত্বটি পান সাবেক কূটনীতিক এ এইচ মাহমুদ আলী, গতবার এই পদে আনা হয় এ কে আব্দুল মোমেনকে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে দেশে ফিরে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই পেয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের সময় নানা মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে।
সামনের সময়গুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কেননা, সরকারের কাজে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা এবং ভিসা নীতির পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও ঝুলছে। বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিদেশি একটি দূতাবাসে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আরও বেশি চৌকস মন্ত্রী দরকার। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশগুলো হলো চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশগুলোর সঙ্গে ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখতে পারবে, এমন পদক্ষেপ নেওয়ার মতো মন্ত্রী অবশ্যই এখানে দরকার।”
মন্ত্রিসভায় পদক্রমে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সামনে এগিয়ে আনার উপর জোর দিচ্ছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাইরের দেশগুলোতে, বিশেষ করে ভারতেও প্রধানমন্ত্রীর পরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর মতো পদগুলো থাকে। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ অনেক নিচে থাকে।”
তিনি চান, এমন ব্যক্তিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হোক, যিনি বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রাখেন এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখার যোগ্যতা যার আছে।
অর্থে নতুন কেউ?
আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দুই বার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর অবসর নেন। তখন আ হ ম মুস্তফা কামাল আসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তবে গত পাঁচ বছরে তার কর্মকাণ্ডে খুশি নন অনেকে। মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা চিহ্নিত অর্থনীতিবিদদের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে একজন ‘শক্ত’ মানুষকে চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব অনুপস্থিত দেখেছি। যেটা সবার চোখে পড়েছে। হতে পারে অসুস্থতার কারণে তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই এবার আমি একজন শক্ত অর্থমন্ত্রী চাচ্ছি। যিনি দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের অর্থনীতিতে যে সঙ্কট চলছে, তা মোকাবেলা করতে নেতৃত্ব দেবেন।”
‘শক্ত’ ব্যক্তি চাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোটেই অনুকূলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছোবল এখনও লাগছে আমাদের অর্থনীতিতে। সে কারণেই কিন্তু ডলারের সঙ্কট, রিজার্ভ কমে গেছে। তাই ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের পণ্য রপ্তানি যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়-সে দিকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
“আরেকটি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে; সেটি হচ্ছে রেমিটেন্স। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যে রেমিটেন্স আসে, সেটা যাতে আরও বাড়ে, সেটার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং ঋণ খেলাপি এবং অর্থ পাচারকারীদের আটকাতে সাহসী ভূমিকা নিতে পারবেন, এমন অর্থমন্ত্রী চান ফরাসউদ্দিন।
সঙ্কটকালে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, এমন অর্থমন্ত্রী চাইছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দুর্নীতি কমাতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। শিল্প খাতে গ্যাস-বিদ্যুতের যে সমস্যা আছে, সেটা সমাধান করতে হবে।
“আমাদের অর্থনীতি কিন্তু চাপের মধ্যে আছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। এটা বাড়াতে রপ্তানি আয় বাড়তে হবে।”
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কেমন অর্থমন্ত্রী চান- এ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, “অবশ্যই এমন একজনকে চাই, যিনি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।”
সাধারণ মানুষের চাওয়া এমন একজন অর্থমন্ত্রী, যিনি চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতিতে লাগাম দিতে পারবেন। কেমন অর্থমন্ত্রী চান- এমন প্রশ্নে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় বাইক সার্ভিসিং সেন্টার আলিশা মটর্সের মালিক শরিফ আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি কি চাই, তার কি কোনো দাম আছে? কে শুনবে আমাদের কথা? আমার একটাই চাওয়া- এমন একজনকে অর্থমন্ত্রী করা হোক, যিনি বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমাতে সাহসী ভূমিকা রাখবেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে নতুন সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
“মনে রাখতে হবে, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এলেও আমরা কিন্তু পারিনি। তাই আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাই নতুন সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিৎ।”
রাজস্ব আদায় বাড়াতে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে সংস্কার করতে সাহসী হবেন, এমন ব্যক্তিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান সেলিম রায়হান।
শিক্ষায় চাই আরও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন?
২০০৮ সালের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী হয়ে ফেরেন। তার আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে বাস্তবায়নে হাত দিয়েছেন দীপু মনি। এই কাজটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যোগ্য লোক না পাওয়া গেলে বাইরে থেকে আরও বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আমিরুল ইসলাম।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উন্নত জাতি গঠনে যে শিক্ষা ভূমিকা রাখে, সেই শিক্ষাদানের জন্য এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে। এই কাজগুলো যে ভালোভাবে করতে পারবে, এমন ব্যক্তিকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশি দরকার।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে, সে দিকে দৃষ্টি দিতে পরামর্শ দেন তিনি। আত্মতুষ্টির জন্য পাসের হার বাড়ানোয় মনোযোগী না হতেও বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যে চিকিৎসক প্রয়োজন?
২০০৯ সালের সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আ ফ ম রুহুল হক। পরের বার সেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। গত পাঁচ বছর ধরে এই পদে জাহিদ মালেক। প্রথমজন চিকিৎসক হলেও পরের দুজন রাজনীতিবিদ।
স্বাস্থ্যখাতে অনেক উন্নয়ন হলেও এখনও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা জাহিদ মালেককে নিয়ে উঠেছে নানা অভিযোগ।
এই অবস্থায় নিজেদের পেশার একজনকে এই দায়িত্বে দেখতে চান চিকিৎকদের অনেকে। সেজন্য এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ১২ জন থেকে কাউকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যে কজন চিকিৎসক সংসদ সদস্য হয়েছেন এবার, তাদের মধ্যে কারও কারও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আমি চাই, সেই অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাক।
“স্বাস্থ্য একটি টেকনিক্যাল বিষয়৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কহীন একজন মানুষ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু অসুবিধা হয়।”
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানও একজন চিকিৎসককেই চান মন্ত্রী হিসেবে।
অতীতের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যিনি চিকিৎসক নন…অতীত অভিজ্ঞতা বলে, সেটা ভালো হয় না। আপাতদৃষ্টিতে অনেক বড় অবকাঠামো, অনেক যন্ত্রপাতি দিয়ে উন্নয়নের কথা বলা হলেও সেগুলো বরং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করে। তাতে স্বাস্থ্যের মৌলিক কোনও পরিবর্তন হয় না।”
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. ফোয়ারা তাসমীম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শুধু প্রজেক্ট আর বদলি, পোস্টিং নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এমন নয়, চিকিৎসকবান্ধব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকর বুঝতে পারবে, এমন মন্ত্রী হলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।”
ক্যান্সারে মাকে হারানো জান্নাতুল ফেরদৌসী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেছি। তখন দেখেছি, হাসপাতালগুলোতে কী পরিমাণ ভোগান্তি মানুষের; সেটা সাধারণ মানুষের কাতারে না দাঁড়ালে বোঝা যাবে না। দেশের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ফেরাবে, এমন মানুষ চাই।”
উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের পক্ষে মত দেন ডা. গুলজার। তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডের এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে। অথবা কিউবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দেশে হেলথ ইন্সিউরেন্সটা খুব জরুরি। এই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার মতো স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হবে।”
স্বরাষ্ট্রে তরুণ প্রয়োজন?
২০০৯ সালের সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সাহারা খাতুন। পরে তাকে বদলে আনা হয়েছিল মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। এরপর থেকে সাত বছর ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসাদুজ্জামান খান কামাল। ৭৩ বছর বয়সী কামালকে নিয়ে বড় সমালোচনা না থাকলেও নতুন উদ্যোগে তার নেতৃত্ব সেভাবে দেখেননি অনেকে।
সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকায় অনেক মানুষই সন্তুষ্ট নয়। তাদের একজন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবে, এমন মন্ত্রী দরকার। এজন্য আরও তরুণ ও উদ্যমী ব্যক্তিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাঁধে। এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে এইচ টি ইমাম তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসনে নজর রাখতেন।
অন্য বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে যেন এই মন্ত্রণালয়ের কাজ চালাতে পারেন, এমন কাউকে মন্ত্রী হিসেবে চাইছেন সরকারি একটি দপ্তরে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী।
তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকারি বিভাগ, অনুবিভাগ বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী দরকার।”
পদোন্নতিতে জটিলতার অবসান, ক্যাডার বৈষম্য দূর, বিসিএস নিয়োগ নিয়মিত করতে মন্ত্রীর সক্রিয়তা চাইছেন তিনি।
সবার আগে সততা?
নতুন মন্ত্রিসভায় যেই আসুক না কেন, তার সততাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যেসব রাজনীতিবিদ সবসময় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তারা জানেন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। তারা যে মন্ত্রণালয়ে যাবেন তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে তারা নেতৃত্ব দেবেন। তবে তাদের একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য জনগণ প্রত্যাশা করে, সেটা হলো সততা।”
পেশাগত বিশেষজ্ঞদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়ার যে কথা ওঠে, তাতে ভিন্নমত জানান আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না, যে রাজনীতিবিদ যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তাকে সেই বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে। এই কাজ তো একজন বিশেষজ্ঞই করতে পারেন। তাকে মন্ত্রী হতে হবে কেন?
“বাইরের দেশেও আমরা দেখি, একটি বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়েও অন্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন। সততা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করলে যে কোনো মন্ত্রণালয়েই একজন মন্ত্রী ভালো কাজ করতে পারবেন।”
[ এই প্রতিবেদন যৌথভাবে তৈরি করেছেন আবদুর রহিম হারমাছি, জাকিয়া আহমেদ ও শেখ শাফায়াত হোসেন]