শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে যে সরকার গঠন করেছিলেন, তাতে নারী ছিলেন ছয়জন, তার মধ্যে চারজনই পূর্ণ মন্ত্রী। পরের বারের সরকারে নারী ছিলেন পাঁচজন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় নারী ছিলেন পাঁচজন।
আর এবার টানা চতুর্থ মেয়াদের যে সরকার শেখ হাসিনা গঠন করতে যাচ্ছেন, তাতে নারী থাকছেন তিনিসহ চারজন।
অর্থাৎ নারী মন্ত্রীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় এবার নারীর অংশ ১০ শতাংশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা শপথ নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করবেন।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।
নতুন মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা ছাড়া নারী পূর্ণ মন্ত্রী কেবল একজন। তিনি দীপু মনি। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে তিনি এনিয়ে চতুর্থবার নির্বাচিত হলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির বাবা ভাষা সংগ্রামী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ। তার ভাই জাহিদুর রহিম ওয়াদুদ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রিধারী দীপু মনি ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপরই মন্ত্রিসভায় তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া তখন ছিল চমকপ্রদ ঘটনা।
২০১৪ সালের সরকারে না থাকলেও ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়ে ফেরেন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি প্রথম নারী, যিনি পূর্ণমন্ত্রী হন।
এবার মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন সিমিন হোসেন রিমি ও রুমানা আলী টুসি।
গাজীপুর-৪ আসন থেকে জয়ী রিমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। তার ভাই তানজিম আহমেদ (সোহেল তাজ) একই আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
সোহেল তাজ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাজনীতিকে বিদায় বলার পর গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন রিমি। ২০১২ সালে উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি এ নিয়ে চতুর্থবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্যও হয়েছেন রিমি।
গাজীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত রুমানা আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত নেতা রহমত আলীর মেয়ে।
রহমত আলী গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কৃষক লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন।
রহমত আলীর মৃত্যুর পর গত নির্বাচনে তার পরিবারের কেউ নৌকার মনোনয়ন না পেলেও এবার প্রার্থী করা হয় মেয়ে রুমানাকে। পেশায় শিক্ষক রুমানা বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে দলীয় নেতা বিদায়ী সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজকে ভোটে হারিয়ে এবার মন্ত্রিসভায় আসছেন।
শেখ হাসিনার গত মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে এবার শুধু দীপু মনিই তার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন।
বিদায়ী সরকারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। এছাড়া হাবিবুন নাহার ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী।
এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। ইন্দিরাও সংসদ সদস্য নন। তবে হাবিবুন নাহার এবারও সংসদ সদস্য হয়েছেন।
২০১৪ সালে শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা ছাড়া পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ওই সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইসমত আরা সাদেক, ডাক ও টেলিযোগাযোগে তারানা হালিম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মেহের আফরোজ চুমকি। তাদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী এখন সংসদের উপনেতা। ইসমত আরা সাদেক মারা গেছেন। চুমকি এবার নির্বাচন করলেও হেরেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনজন নারী পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন ও দীপু মনি।
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে সেবার নারীদের বসিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। মতিয়া কৃষিমন্ত্রী, সাহারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাছাড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। সেই মন্ত্রিসভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শেখ হাসিনা যেবার প্রথম সরকার গঠন করেন ১৯৯৬ সালে, সেবার মন্ত্রিসভায় দুজন নারীকে নিয়েছিলেন। তারা হলেন মতিয়া চৌধুরী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দুজনই ছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী। সেবার কোনো নারী প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না।
সেবারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২০০৯ থেকে আমৃত্যু সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন।