Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ঢাকায় মাথার ওপরের তারের জঞ্জাল সরবে কবে

ঢাকাজুড়েই দেখা যায় এমন ঝুলন্ত তার।
ঢাকাজুড়েই দেখা যায় এমন ঝুলন্ত তার।
[publishpress_authors_box]

কোথাও ইন্টারনেটের, কোথাওবা কেবল টিভি অপারেটরদের; রাজধানী ঢাকায় বের হলেই মাথার উপর দেখা যাবে তারের জঞ্জাল। এই তার দুর্ঘটনার কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিন আগেই মেট্রোরেল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছিল এমন এক তারের কারণে।

ঝুলন্ত এই তারগুলো মাটির নিচে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের কাজ তেমন এগোচ্ছে না। ঢাকার দুই নগর কর্তৃপক্ষ এজন্য কেবল টিভি অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবাদাতাদের দায়ী করছেন।

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার শাহবাগের মাঝে মেট্রোরেলের বিদ্যুতের লাইনের উপর একটি তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে মেট্রোরেলের চলাচল আটকে ছিল ১৫-২০ মিনিট।

বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়ে পড়া তার হয় দুর্ঘটনার কারণ।

এই ঝুলন্ত তারে দুর্ঘটনায় পড়ার অভিজ্ঞতা ঢাকার অনেকেরই রয়েছে, তেমনই একজন মোহাম্মপুরের শেখের টেকের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসিব বিল্লাহ।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, গত সোমবার অফিস শেষে এক সহকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে ফার্মগেইট থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে নূরজাহান রোডে রাস্তায় পড়ে থাকা কেবল অপারেটরের তারের কারণে পিছলে পড়ে আহত হন তিনি।

এজন্য হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল হাসিবকে। তিনি বলেন, “তারের কারণে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়ায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে হাত-পাসহ কোমরে আঘাত পেয়েছি। মোটরসাইকেলের গতি কম থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছি।”

মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডসহ শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, ফার্মগেইট, তেজগাঁও, মহাখালী ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাথার উপর ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল। বিভিন্ন স্থানে তারের একপাশ ছিঁড়ে রাস্তার পাশের ফুটপাতের ওপরও পড়ে থাকতে দেখা যায়।

অসহযোগিতার অভিযোগ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর ইন্টারনেট ও কেবল অপারেটররা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হবে।

তবে প্রতিশ্রুতি কেউ রাখেনি বলে জানালেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।

তিনি মঙ্গলবার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেব্‌ল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব)।

“তার বার বার সময় নিলেও এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বর্তমানে তার সরানো নিয়ে অনেকটা ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলছে। ঝুলন্ত তার অপসারণে আমরা অভিযান চালনোর পর আবারও নতুন করে তার ঝুলাচ্ছেন অপারেটররা। আমরা এই কাজ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা পাচ্ছি না।”

তারের এমন জঞ্জাল থেকে ঘটতে পারে যে কোনও দুর্ঘটনা।

তবে কিছু কিছু জায়গায় ঝুলন্ত তার মাটির নিচ নেওয়ার কাজ চলছে জানিয়ে নাছের বলেন, “ধানমণ্ডিতে এই কাজ প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ঝুলন্ত তার অপসারণে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান চলমান।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইনও সহযোগিতা না পাওয়ার কথা জানান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঝুলন্ত তার অপসারণে ইন্টারনেট ও কেবল অপারেটররা একটু গড়িমসি করছেন। তবে আমরা অব্যাহতভাবে তাদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি।”

ইতোমধ্যেই গুলশান-১, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়কের ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া মিরপুর ১ থেকে মিরপুর-১২ এলাকা পর্যন্ত একটি করিডোর ধরেও কাজ চলছে।

“আগামী দুই মাসের মধ্যে এই এসব এলাকার ঝুলন্ত তার অপসারণ হয়ে যাবে। আশা করি, খুব শিগগিরই ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী,” বলেন মকবুল।

যা বলছে কোয়াব- আইএসপিএবি

ঢাকার ঝুলন্ত তারের বেশিরভাগই ইন্টারনেট সেবাদাতাদের বলে দাবি করছেন কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখন শুধু আবাসিক এলাকা বা মহল্লার ভেতরে কেবল অপারেটরদের ঝুলন্ত তার রয়েছে।”

যারা তার মাটির নিচে নেওয়ার কাজ করছে, তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাইফুল।

তিনি বলেন, মাটির নিচ দিয়ে ফাইবার অপটিক কেব্‌ল বসাতে সরকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বা এনটিটিএন অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে।

“কিন্তু এই কাজে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার চরম অভাব রয়েছে। তাই ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আগানো সম্ভব হচ্ছে না।”

তবে তিনি জানান, যেসব এলাকায় ফাইবার অপটিক কেব্‌ল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে, সেসব এলাকায় বেশিরভাগ ঝুলন্ত তার অপসারণ সম্ভব হয়েছে। যেমন বাংলামোটর, উত্তরা, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ি এলাকায় প্রধান সড়কে আগের মতো ঝুলন্ত তার নেই। 

“এনটিটিএন অপারেটররা আবাসিক এলাকায় ফাইবার অপটিক কেবল বসালে সেখানেও ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল থাকবে না। এই বিষয়ে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা সচেতন হলে আরও দ্রুত এই জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাব আমরা।”

ঝুলন্ত তারের বেশিরভাগই এখন ইন্টারনেট সেবাদাতাদের।

সহযোগিতা না করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূইয়া।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সিটি করপোরেশনের অভিযোগটি সঠিক নয়। এই কাজে আমাদের পক্ষে যতটুকু ভুমিকা রাখা সম্ভব, আমরা রাখছি। কিন্তু বিটিআরসির কারণে সাফল্য আসছে না। আমরা বার বার তাদের কাছে অ্যক্টিভ শেয়ারিং সার্ভিসের আবেদন জানালেও ঠিকমতো সাড়া পাচ্ছি না।”

নাজমুল স্বীকার করেন, এখন ঝুলন্ত তারের বেশিরভাগই ইন্টারনেট সেবাদাতাদের।

“একটি এলাকায় সর্বোচ্চ ২-৩ জন কেব্‌ল অপারেটর সেবা দেয়, কিন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সংখ্যা ২০-২৫ জনও থাকে। সেজন্য ইন্টারন্টে অপারেটরদের তারের সংখ্যা বেশি থাকে।”

এই তার মাথার উপর থেকে সরিয়ে নিতে তাদের সদিচ্ছার অভাব নেই দাবি করে তিনি বলেন, “ঝুলন্ত তার অপসারণে আমরা ধানমণ্ডিতে একটা পাইলট প্রকল্প করেছিলাম। সেটা সফল হয়েছে। তাই ধানমণ্ডি ২/এ থেকে ধানমণ্ডি ২৭/এ পর্যন্ত আপনি কোথাও ঝুলন্ত তার পাবেন না।

“শুধু ঢাকা নয়, বাইরেও আমাদের পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে পাইলট প্রকল্পের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। সবার সদিচ্ছা থাকলে ধীরে ধীরে সারাদেশই ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত