Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

১৩৬ ঘণ্টার পারিশ্রমিক গাজায় দান কারাবন্দি হামজার

কারাগারের প্রতীকী ছবি/ দ্য গার্ডিয়ান
কারাগারের প্রতীকী ছবি/ দ্য গার্ডিয়ান
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগারের এক কয়েদি হামজা। সেখানে দারোয়ান ও কুলির কাজ করে ঘণ্টায় আয় করেন ১৭ সেন্ট অর্থাৎ ১৮ টাকা। এই স্বল্প আয় থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন ১৭ দশমিক ৭৪ ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৯শ টাকার সমান।

এই স্বল্প পরিমাণের দান করেই রাতারাতি বিখ্যাত বনে গেয়েছেন কারাবন্দি হামজা। কারণ এইটুকু অর্থ উপার্জন করতে তার কাজ করতে হয়েছে ১৩৬ ঘণ্টা বা ২১ দিন।

সম্প্রতি হামজাকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সেখানে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের চলচ্চিত্র নির্মাতা জাস্টিন মাশউফের সাথে প্রায়শই চিঠি বিনিময় হয় হামজার। ফেব্রুয়ারিতে তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ১৭.৭৪ ডলারের পে চেকের ছবি পোস্ট করেন। যেখানে তিনি হামজার দানের এই বিষয়টি তুলে ধরেন।

জাস্টিন মাশউফ এক্সের (সাবেক টুইটার) ওই পোস্টে লিখেন, ‘গাজায় ১৭ দশমিক ৭৪ ডলার দান করা এক কারাবন্দি ভাইয়ের সঙ্গে চিঠি বিনিময় করছি। এই দানের অর্থ তার কারাগারে দারোয়ান/কুলির কাজ করে জমানো। এটি তার ১৩৬ ঘণ্টার উপার্জন। সৃষ্টিকর্তা তার এই আন্তরিক দানকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিক।’

এই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। আর এই স্বল্প দানের মাধ্যমে ৫৬ বছর বয়সী এই কয়েদি জায়গা করে নেন মানুষের মনে।

এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ফিলিস্তিনের তৃণমূল সংগঠন প্যালেস্টাইনি ইয়ুথ মুভমেন্ট হামজার গল্প শেয়ার করে।

৫৬ বছর বয়সী এই কয়েদির আসল নাম কিন্তু হামজা নয়। খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। কারাগারে আছেন প্রায় চার দশক ধরে। দ্য গার্ডিয়ান জানায় কয়েক দশক ধরে তিনি প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করে যাচ্ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টে মাশউফের বরাত দিয়ে জানানো হয়, তিনি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে সাহায্য করেছেন এরকম কথা উঠতে পারে। হামজা আশঙ্কা করছিলেন, এটি তার প্যারোল পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত করে দিতে পারে। এজন্য দানের বিষয়ে তার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়।  

দ্য গার্ডিয়ানে বলা হয়েছে মার্চের শেষ দিকে তার প্রায় চার দশকের কারাভোগ শেষ হবে। জেলমুক্তির পর তার জীবন-যাপন, পোশাক, চাকরির সন্ধান, প্রশিক্ষণ ও মোবাইল ফোন ব্যবহার বাবদ খরচের জন্য তহবিল গঠন করা হয়। সেখানে দাতাগোষ্ঠীর কাছে থেকে এই পর্যন্ত এক লাখ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগৃহীত হয়েছে।

তবে গত বুধবার জাস্টিন মাশউফ জানায়, হামজা এই তহবিলের অর্থ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাশউফকে হামজা চিঠির মাধ্যমে জানান, ‘জেলমুক্তি পাওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যারা আমাকে সাহায্য করেছেন, তহবিলের গঠন করে যে উদারতা ও দয়া দেখিয়েছেন, তার জন্যে আমি হৃদয় থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমি সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও আফ্রিকার দুর্দশাগ্রস্ত শিশু ও মা-বাবারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাদ্য, পানি, আশ্রয় ছাড়াই তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় তাদের ওপর বোমা হামলা হচ্ছে। ওসব সাধারণ মানুষদের রাজনীতির সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও অমানবিক কষ্টে আছেন।’

ওয়াশিংটন পোস্টের পর্যালোচনা করা আইনি রেকর্ডের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ১৯৮৬ সালে তিনি অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। কিশোর হামজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।

হামজার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি করা ‘গো ফাউন্ড মি’ নামক একটি পেইজে মাশউফ লিখেছেন, হামজা ভুলবশত তার এক প্রিয়জনকে গুলি করলে, সে মারা যায়। আর এর সাজাস্বরুপ প্রায় চার দশক ধরে কারাবাস করছেন তিনি। নিজের ভুলের কারণে পরিবারের সদস্য হারানোর বেদনা নিয়েই বেঁচে আছেন হামজা।

কারাগারে থাকাকালীন তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে উঠেছেন বলেও জানান মাশউফ। হামজা কয়েক দশক ধরে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত