দেশে চলমান আন্দোলনের মধ্যে সব হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ। এসময় তারা কারফিউ তুলে নেওয়ার দাবিও তোলেন।
শুক্রবার ঢাকায় পূর্বঘোষিত ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচির পর জাতীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ অবস্থান নিয়ে এ দাবি তোলেন।
কর্মসূচির আয়োজক গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈম বক্তব্যে বলেন, “আজ ঢাকা শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে, খুনি সরকার আর না।”
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম আরও বলেন, “রবিবারের মধ্যে কারফিউ তুলে দিয়ে সরকার ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করলে সারা বাংলাদেশে গণমিছিল হবে। দুপুর ৩টায় প্রেসক্লাব থেকে গণমিছিল শুরু হবে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই মাসের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের এই আন্দোলনের মধ্যে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরদিন ১৬ জুলাই দেশজুড়ে আন্দোলনের মধ্যে ছয় জন নিহত হলে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বাড়তে থাকে সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানি।
শুরুতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।
এই আন্দোলনের মধ্যে সৃষ্ট সহিংসতায় সরকারের পক্ষ থেকে ১৫০ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে এই সংখ্যা দুই শতাধিক। যদিও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, টানা কয়েকদিনের বিক্ষোভের মধ্যে ২৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এই হতাহতের ঘটনার পরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পথে নামেন শিক্ষক-অভিভাবকরা। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে শামিল হন সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের অনেকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে কর্মসূচি পালন করছেন ও তাদের মতামত তুলে ধরছেন।
এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ সামাজচিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবীরাও।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ‘দ্রোহযাত্রা’ শুরু হওয়ার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ ওরা দখল করেছে। দখলদারদের হাত থেকে স্বাধীনতা বাঁচাতে হবে। বিকল্প কে, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। জনগণ জানিয়ে দিয়েছে তারাই বিকল্প।
“যে হত্যাকাণ্ড এই সরকার চালিয়েছে, তাতে পতন ছাড়া মানুষের কাছে আর কোনও রাস্তা রাখা হয়নি। মানুষ তার অধিকারের জন্য রাস্তায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। কোনও লুটেরার কাছে আমাদের স্বাধীনতা থাকতে পারে না।”
গণগ্রেপ্তার বন্ধ, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যার দায়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দ্রোহযাত্রা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে দ্রোহযাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ। সুপ্রিম কোর্টের সামনে এই যাত্রা ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। পরে ব্যারিকেডে ভেঙে ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশ করে দ্রোহযাত্রা। তারপর রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেন তারা।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় কয়েক হাজার মানুষ। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।