স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ নামে নতুন একটি দেশ।
এবারও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হতে যাচ্ছে স্বাধীনতা দিবস। জাতীয় এই দিবস উদযাপনে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
স্বাধীনতা দিবসে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে দেশের উন্নয়ন, শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য দেশের মানুষকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সবক্ষেত্রে সাম্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
“জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণে আবারও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।”
তাই স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক এক নতুন বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।”
প্রধান উপদেষ্টার বাণী
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও তার বাণীতে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আত্মমর্যাদা, অস্তিত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ ছিল স্বাধীনতা অর্জন।
“যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়, তার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিলো আজকের এই দিনে।”
মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “গত ১৬ বছর দেশের মানুষ এই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বৈরাচারি শাসক জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে তাদের স্বাধীনতা ও মৌলিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষকে স্বৈরাচারের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করেছে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারের কথা আবারও স্মরণ করেন তিনি। বাণীতে বলেন, “দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের এ মাহেন্দ্রক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশের উন্নয়ন, শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথে কাজ করার শপথ নিতে সবাইকে আহ্বানও জানান তিনি।
দিনের কর্মসূচি
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বুধবার বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
ভোরে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন স্মৃতিসৌধে।
প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধটি জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এরই মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা ও উপজেলায় অবস্থিত স্মৃতিসৌধেও ফুল দেওয়া হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।