মশা কামড়ে অস্থির হলে স্প্রে, কয়েল আর নানা রকম রিপেলেন্ট ক্রিম নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রস্তুত থাকতে হয়। মশার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে কেমিকেল মুক্ত উপায় খোঁজেন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা। এসেনশিয়াল অয়েল বা সুগন্ধি ভেষজ তেল একটি ভালো বিকল্প হতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এখানেও কিছু বিশেষ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
সুগন্ধি ভেষজ তেল গায়ে মেয়ে গোসল নেয়ার অভিজ্ঞতা হয় স্পা সেবাতে। তারকাদের ত্বক চর্চার রহস্যতেও আছে সুগন্ধি ভেষজ তেলের জাদুর। এই বিশেষ তেলে মন ফুরফুরে বোধ করে, ত্বক উজ্জ্বল হয়, ঘুম ভালো হয়। এমনকি গায়ের ব্যথা ও অবসাদের উপশম হয়। এর পাশাপাশি মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতেও সুগন্ধি ভেষজ তেলের ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।
ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ ফুল, পাতা, শেকড়ের নির্যাস হলো এসেনশিয়াল অয়েল। এই তেলের প্রাকৃতিক সুগন্ধ মশা তাড়াতে বেশ কাজের। তেলের সুঘ্রাণে মশার অনুভূতি অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়ে; মশাদের পক্ষে মানুষের অবস্থানও শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন হলো মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এভাবে কি জয়ী হওয়া যাবে?
“মশা তাড়াতে ভেষজ সুগন্ধি তেল সব সময়ই প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপায়। সেই সঙ্গে এর অনেক গুণ তো আছেই। কেমিকেল মেশানো মশা প্রতিরোধক ব্যবহারের চেয়ে এ ধরনের তেল নিরাপদ, ত্বকের জন্য ভালো এবং পরিবেশের ক্ষতি করে না”, বললেন ড. ব্লসাম কোচার; যিনি অ্যারোমা থেরাপি ও ত্বকচর্চা বিশেষজ্ঞ।
লেমনগ্রাসের নির্যাস দিয়ে বানানো সিট্রোনেলা এসেনশিয়াল অয়েল সাধারণত মশা তাড়াতেই ব্যবহার হয়।
“এর সিট্রাস গন্ধ মশাদের বিভ্রান্ত করে। মশা তাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছে সিট্রোনেলা তেল নিয়ে। এই তেলে ভরসা করা যায় সহজেই”, বললেন ড. কোচার।
অনেক মশা তাড়ানোর ক্রিম এবং স্প্রে পণ্যেও সিট্রোনেলা ব্যবহার করা হয়।
“সিট্রোনেলা ছাড়াও, ইউক্যালিপটাস, লেমনগ্রাস, পেপারমিন্ট, টি ট্রি, এবং ল্যাভেন্ডার নির্যাসের তেলে লিমোনিন এবং সিট্রোনেলল যৌগ রয়েছে, যা মশাকে তাড়াতে পরিচিত।”
এই তথ্য জানালেন ড. বিজয় সিঙ্ঘল; যিনি নিউ দিল্লিতে শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডারমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট।
কিছু এসেনশিয়াল অয়েল মশার কামড়ের চিকিৎসাতেও ভীষণ উপকারী হতে পারে।
ড. সিঙ্ঘল বললেন, “টি ট্রি এবং ল্যাভেন্ডার তেলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ। মশার কামড়ে ত্বকে চুলকানি, ফুলে যাওয়া এবং লালভাব দেখা দিলে এই তেলে তা সারবে।”
পেপারমিন্ট তেলে আছে এক ধরনের ঠান্ডা অনুভব; এ কারণে এই তেল গায়ে মাখলে চুলকানি থেকে আরাম বোধ হয়।
ভেষজ তেলের উপকার পেতে ব্যবহারের কিছু মেনে চলার দিকে নজর দিতে হবে।
এ নিয়ে ড. ব্লসাম কোচার বলেন, “প্রাকৃতিক অবস্থায় এসেনশিয়াল অয়েল কখনোই সরাসরি ত্বকে মাখা যাবে না; তাতে উল্টো ত্বকে অস্বস্তি দেখা দেবে।
“ত্বকে মাখার আগে এই ভেষজ তেল অবশ্যই অন্য যে কোনো সাধারণ তেলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।”
নারকেল বা বাদাম তেলের সঙ্গে পরিমাণ মতো এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে গায়ে মাখা যেতে পারে।
ড. সিঙ্ঘলের পরামর্শ হলো, “মশার কামড় থেকে বাঁচতে এই মিশ্রণ শরীরের খোলায় অংশে মেখে নিতে হবে; বিশেষ করে কবজি, গোড়ালিতে।
“আরেকটি সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে, এই তেল মিশিয়ে ঘরে ডিফিউজার ডিভাইস চালু রাখা। অথবা পানির সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে ঘরে ও কাপড়ে স্প্রে করা।”
১০-১৫ ফোঁটা পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল মেশাতে হবে হবে পানির সঙ্গে। ভালো মতো ঝাঁকিয়ে তারপর একটি বোতলে ভরে ত্বক ও জামায় ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া তুলা দিয়ে বল বানিয়ে তা কয়েক ফোঁটা তেলে ভিজিয়ে নেয়া যায়; ওই তুলার টুকরা জানালা, দরজা এবং বাইরে বসার জায়গায় রেখে দেয়া যায়।
শরীরে ক্ষত জায়গায় সরাসরি এ ধরনের ভেষজ সুগন্ধি তেল দেয়া ঠিক হবে না। অন্য কোনো সাধারণ তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আগে ত্বকের আশেপাশে লাগিয়ে দেখে নিতে হবে কোনো অস্বস্তি বোধ হচ্ছে কি না। কোনো কোনো এসেনশিয়াল অয়েলে গর্ভবর্তী নারী ও শিশুদের ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। সুতরাং আগে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নেয়াই নিরাপদ হবে।
আর ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় অন্যান্য উপায়েও মশা তাড়াতে সতর্ক থাকতে হবে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরাপদ থাকতে রিপেলেন্ট ক্রিম এবং স্প্রে ব্যবহার বেশি কার্যকর হবে। এজন্য অবশ্যই পণ্যের গায়ের ব্যবহার বিধি মেনে চলতে হবে; ক্রিম বা স্প্রে যেন চোখের সংস্পর্শে না আসে কোনোভাবেই।