বীর্য তৈরি আসলে খুব নাজুক একটি প্রক্রিয়া। এই সময় শরীরের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা জরুরি হয়ে পড়ে। পুরুষের অণ্ডকোষ শরীরের নিচের দিকে থাকে বলে ওখানে তাপমাত্রা গোটা শরীরের চেয়ে খানিক কম।
অতিরিক্ত গরমের দিনে শরীরের এই অংশের তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক থাকে না। আর তখনই শুক্রাণু তৈরি কমে যায়; মানও দুর্বল হয়।
অত্যধিক তাপমাত্রায় হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-গোনাডাল অক্ষের সক্ষমতা কমে যায়। এই হরমোন প্রজনন ও উর্বরতা অর্থাৎ শুক্রাণু উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
দুর্বল শুক্রাণু
ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে শুক্রাণুকে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে হয়; সহজ ভাষায় প্রজনন প্রক্রিয়া পুরুষের ভূমিকাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। মুশকিল হলো, গরম বেড়ে গেলে শুক্রাণুর এই গতি কমে যেতে থাকে। তখন শুক্রাণুর কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে আসে বলে ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারার সম্ভাবনাও কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, অতিরিক্ত গরমে শুক্রাণু দুর্বল হয়ে যায়; এমনকি ডিএনএর ক্ষতিও হতে পারে।
আর এসবের কারণে শুক্রাণু তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ায় নানা অস্বাভাবিকতাও দেখা দিতে পারে।
হরমোনের ওঠানামা
দীর্ঘ সময় সূর্যের তলে কাটালে ওই তাপ শরীরে হরমোনের মাত্রা উল্টোপাল্টা করে দিতে পারে; অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা। তাতে করে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে, সেই সঙ্গে শুক্রাণু হয়ে ওঠে দুর্বল।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হলে কোষের ক্ষতি হতে পারে। আর গরম শরীরে অক্সিডিটভ স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয়। ফলে শুক্রাণুর ডিএনএ নষ্ট হতে পারে এবং মানও দুর্বল হয়ে যায়।
গরম পুরুষের শুক্রাণুর উর্বরতাকে এভাবে কমিয়ে দিলে শেষ পর্যন্ত পুরুষের প্রজনন সক্ষমতা ও সফলতার হার কমে যাবে।
এই পরিস্থিতি এড়াতে পুরুষের করণীয় কী?
শুক্রাণু বা বীর্যর পরিমাণ ও মান বাড়ানোর কিছু তরিকা জানিয়েছেন ভারতের লুধিয়ানার ক্লাউডনাইন গ্রুপ অব হসপিটালের উপদেষ্টা গায়নেকোলজিস্ট এবং ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ গুরপ্রীত বাত্রা।
শরীর শীতল রাখা
দীর্ঘক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করা একেবারে এড়িয়ে চলা খুব ভালো হবে পুরুষের জন্য। এমনকি পার্লারে বা বাড়িতে বাথটাবে গরম পানিতে গোসলও এড়াতে হবে। খুব চাপা মানে আঁটোসাঁটো সেলাই দেওয়া পোশাক না পরাই ভালো। এতে করেও অণ্ডকোষ অংশে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা, ঘরে থাকাই সুবিধাজনক হবে পুরুষের জন্য এবং অবশ্যই ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।
আর্দ্র থাকতে হবে
শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে আর্দ্র থাকার বিকল্প নেই। আর তাই বিশেষ করে গরমের দিনে বিশেষজ্ঞরা পুরুষদের যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
সাধারণত নারীরই অ্যান্টিঅক্সিডেটন্ট থাকা খাবারে ঝোঁক আছে মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা পুরুষকেও অ্যান্টিঅক্সিডেট থাকা খাবার খেতে বলছেন। এজন্য বেছে নিতে হবে ফল ও সবজি। এতে করে পুরুষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে শুক্রাণু তৈরি বেড়ে যাবে। ভিটামিন সি, ই এবং জিংক থাকা সাপ্লিমেন্টও পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ফল দেবে।
ব্যায়ামেও লাগাম টানা চাই
সুস্থ থাকতে হলে শরীরচর্চা করতেই হবে। কিন্তু এও মনে রাখা দরকার গরমের দিনে ব্যায়ামে শরীরে বাড়তি ঘাম হয় এবং শরীরের নিচের অঙ্গে তাপমাত্রা তখন বেড়ে যায়। তাই পুরুষকে ব্যায়ামের রুটিন খেয়াল করে মেনে চলতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান নয়
পুরুষের ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহলের অভ্যাস প্রজনন উর্বরতায় ক্ষতি বয়ে আনবে। এজন্য ধূমপান ও অ্যালকোহলের আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাই ভালো।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি পুরুষের মনে হয় তার প্রজনন উর্বরতা কমে গেছে তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপনের দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও ভীষণ জরুরি।
পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব শুক্রাণু বা বীর্যর মান কেমন আছে। আর তখনই একজন চিকিৎসক সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
গুরপ্রীত বাত্রা অভয় দিয়ে বলছেন, গরমের কারণে শুক্রাণু উৎপাদনে কমে যাওয়ার এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পুরুষের অবশ্যই তার জীবন যাপনের দিকে নজর দিতে হবে।