অনুশীলনে সচারচর এমনটা করতে দেখা যায় না পিটার বাটলারকে। হাতে থাকা খাতা কলম নিয়ে মাঠে ঢুকেই সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুকে বুঝিয়ে দেন নির্দিষ্ট দিনের অনুশীলনের কার্যতালিকা। এরপর সেভাবেই চলতে থাকে সাবিনা খাতুনদের অনুশীলন।
কিন্তু ভারতের বিপক্ষে নারী সাফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর আর্মি স্টেডিয়াম মাঠে সেই বাটলারকে পাওয়া গেল না। কৃষ্ণা রানী, মারিয়া মান্দারা মাঠে ঢুকে হালকা ওয়ার্ম আপ সারতেই সবাইকে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। অন্তত মিনিট দশেক ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বললেন।
দূর থেকে অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল না কোচ কি কথা বলেছেন। কিন্তু এটা অনুমান করা যায় যে, ফুটবলারদের উজ্জ্বীবিত করতে চেষ্টার কমতি রাখতে চাইছেন না ৫৮ বছর বয়সী এই বৃটিশ কোচ। মাঠে ও মাঠের বাইরে যে কাজটি নিয়মিতই করতেন সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাটলার কি ছোটন হতে পারবেন?
সিনিয়র ফুটবলারদের বিভিন্ন অভিযোগে এরই মধ্যে নিজের কাজ নিয়ে তিনি পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। বাটলার দায়িত্ব নেওয়ার পরই গত মে মাসে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখেননি অভিজ্ঞ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে। অথচ সাফ জেতানো এই অধিনায়ক জাতীয় দলের হয়ে করেছেন সর্বোচ্চ ৩৪ গোল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মারিয়া মান্দা, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, নীলুফা ইয়াসমিন নীলাদের মতো অভিজ্ঞ কাউকেই রাখেননি তিনি। কোচ অবশ্য সিনিয়রদের সেভাবে দলে সুযোগ দিতে চান না। সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে আলাপকালে কাঠমান্ডুর দি সোলটি টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “আপনারা শুধু সিনিয়রদের নিয়েই থাকতে চান। নতুন মেয়েরা উঠে আসুক সেটা চান না। সিনিয়ররা তো টিকটক নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ওরা আগে মাঠে পারফর্ম করুক।”
সিনিয়রদের সুযোগ না দেওয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ কোনও রকমে হারতে হারতে ড্র করে- উল্টো এমন অভিযোগ করেন মনিকা চাকমা। এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশ দলের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য সরাসরি কোচের এমন ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন।
কোচের কানে এসব কথাবার্তা পৌঁছানোর পর তিনি বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেননি। সেই রাগেই কিনা মঙ্গলবারের অনুশীলনে একাদশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়রদের প্রাধান্য দিলেন কোচ। ভারতের বিপক্ষে একাদশে তাইতো শুরু থেকেই দেখা যেতে পারে মারিয়া, মাসুরা, কৃষ্ণাকে। আর জায়গা হারাতে পারেন আফঈদা, কোহাতি, স্বপ্না রানীরা।
দলের ভেতরে নাকি এক রকমের ভয়ঙ্কর রাজনীতি চলছে। যেটা এক জন ফুটবলারের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মঙ্গলবার। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ড্রয়ের পর কোচ নিজেও বললেন সেই একই কথা, “ভয়ঙ্কর রাজনীতি চলছে দলের মধ্যে। সিনিয়ররা ভীতি ছড়াচ্ছে জুনিয়রদের মধ্যে।”
কোচ তো মোটেও মিথ্যা বলেননি। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে জুনিয়রদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন সিনিয়ররা। এমন অভিযোগ এরই মধ্যে সকাল সন্ধ্যার কাছে করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলারের বাবা। তিনি বলেছেন, “এমনটা চলতে থাকলে আমি আমার মেয়েকে আর ফুটবলে রাখব না। তাকে বাড়িতে নিয়ে আসব। এই নোংরা রাজনীতির মধ্যে আমার মেয়েকে রাখতে চাইনা।”
অথচ গোলাম রব্বানী ছোটন কোচ থাকার সময় দলের মধ্যে অর্ন্তকোন্দলের কোনও সুযোগ ছিল না। মাঠে ও মাঠের বাইরে ছোটন সব সময় মেয়েদের বাবার স্নেহে আগলে রাখতেন।
তাছাড়া ডাগ আউটে ছোটনের অস্থির পায়চারিই বলে দিত, জয়ের জন্য কতটা মরিয়া থাকতেন সারাক্ষণ। অথচ বাটলারকে ডাগ আউটে বেশিরভাগ সময়ই চুপচাপ থাকতে দেখা যায়। কোন ফুটবলার মাঠে তাৎক্ষণিকভাবে কিভাবে খেলবে, কোন পজিশনে থাকবে সে সবের দিক নির্দেশনাও খুব বেশি দিতে দেখা যায় না।
সবচেয়ে বড় কথা মারিয়া, সানজিদাদের নাড়ি-নক্ষত্র হাতের তালুর মতো চেনা ছিল ছোটনের। কিন্তু অতি মাত্রায় পেশাদার এই ইংলিশ কোচ শুধু প্রথাগত ব্যাকরণের কোচিং ফর্মুলা দিয়েই ম্যাচ জিততে চাইছেন।
কিন্তু ম্যাচ জেতার জন্য মাঠে যারা খেলবেন, সেই ফুটবলারদের ভেতর থেকে জয়ের ক্ষুধাটা যেন বের করে আনতে পারছেন না তিনি।
বাটলারের অধীনে ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের ২ জয়, ২ হার ও ১ ড্র। ভারতের বিপক্ষেও বুধবার জয়ের জন্যই মাঠে নামবে মেয়েরা। ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৫টা-৪৫ মিনিটে।
বাটলার এরই মধ্যে অভিযোগ করেছেন অনুশীলনে শতভাগ দেন না মারিয়া, কৃষ্ণা, সানজিদারা। সুযোগ পেয়ে কোচের অভিযোগটা কি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেন এই ফুটবলাররা?