Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

দ. কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট কি পারবেন ট্রাম্প ঝড় সামলাতে

S. korea
[publishpress_authors_box]

নির্বাচনে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বড় জয় পেয়েছেন। দেশটির ভোটাররা কনজারভেটিভদের শায়েস্তা করতে গিয়ে লি জে মিয়ংকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তার এই ‘হানিমুন পিরিয়ড’ বা স্বস্তির সময়কাল একদিনও টিকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

প্রথাগতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্টদের দুই মাসের সময় দেওয়া হয়। এই সময় তারা নিজের দল গঠন করেন এবং দেশ পরিচালনার রূপরেখা ঠিক করেন। কিন্তু লি সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।

তিনি সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। কারণ আগের প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়েলকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে ইউন চেষ্টা করেছিলেন দেশে সামরিক আইন জারি করতে। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।

লি জে মিয়ং প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন। তারা এমন একটি শাসন প্রত্যাখ্যান করেছে, যা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।

লি তার নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, তিনি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবেন এবং বিভাজিত দেশের মধ্যে ঐক্য আনবেন। গত ছয় মাসে দক্ষিণ কোরিয়া রাজনৈতিকভাবে খুবই অস্থির ছিল।

তবে এই কাজগুলোর আগে তাকে একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে। আর এটি ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ট।

আগামী কয়েক মাসে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে অস্থির করে দিতে পারেন।

গত এপ্রিলে ট্রাম্প কোরিয়ার সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর আগেই তিনি কোরিয়ার প্রধান শিল্প যেমন ইস্পাত ও গাড়ির ওপর কড়া শুল্ক বসিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ভেবেছিলেন, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক মিত্রতা ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি তাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। লি’র ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন অভিজ্ঞ উপদেষ্টা মুন চুং-ইন বলেন, “এই শুল্ক কার্যকর হলে তা একটি অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।”

এই সঙ্কটের আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছিল। সামরিক আইন নিয়ে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তা আরও খারাপ করে দেয়। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। জনগণের প্রধান দাবি হলো, এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। গণতন্ত্রের সংস্কারের চেয়েও তারা এই বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

কিন্তু এতদিন প্রেসিডেন্ট না থাকায় ট্রাম্পের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। এখন আর এই আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

এখানে শুধু অর্থনীতিই নয়, অনেক বেশি কিছু ঝুঁকিতে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলা করলে তারা পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের অস্ত্র দিয়ে সাড়া দেবে। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বাণিজ্য ও নিরাপত্তাকে আলাদা বিষয় হিসেবে দেখবেন না। তার মতে, দক্ষিণ কোরিয়া দুই দিক থেকেই নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না।

চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে শুল্ক আলোচনা চলাকালে তিনি “আমাদের ব্যাপক সামরিক সুরক্ষার জন্য অর্থ প্রদানের বিষয়টি আলোচনা করেছেন।” তিনি এটিকে বলেছেন “সুন্দর ও কার্যকর এক-পয়েন্ট শপিং।”

এই দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি বিশেষ ধরনের ঝুঁকিতে ফেলেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের এক সাবেক কূটনীতিক ইভান্স রিভিয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই প্রথম আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পেয়েছি, যিনি কোরিয়ার প্রতি কোনও নৈতিক বা কৌশলগত দায়বদ্ধতা অনুভব করেন না।”

ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়ও প্রশ্ন তুলেছিলেন—কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা রাখার যৌক্তিকতা আছে কি না। তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, সিউল আরও অর্থ না দিলে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এবারও তিনি একই দাবি করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিউল হয়তো আরও অর্থ দিতে চায় না। তবে তারা চাইলেও দিতে পারে। কারণ সেই অর্থনৈতিক সক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু বড় সমস্যা হলো—এবার শুধু অর্থ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে না। ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ভিন্ন কিছু ভাবছে।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের মূল কৌশলগত লক্ষ্য শুধুমাত্র উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন ঠেকানো নয়, বরং চীনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তাইওয়ানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ঠেকানো।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এলব্রিজ কলবি বলেছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে এখন থেকে “নিজেদের আত্মরক্ষার মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে পারে।”

এর একটি বিকল্প হতে পারে—কোরিয়ায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চীনের ওপর নজরদারির দায়িত্ব পাবে। অন্য আরেকটি বিকল্প যেটি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, সেটি হলো সেনাদের একটি বড় অংশ কোরিয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র মোতায়েন করা হবে। একইসঙ্গে সিউলের সেনাবাহিনীকে চীনকে আটকাতে ভূমিকা রাখতে হবে।

এমনটা হলে দক্ষিণ কোরিয়া শুধু সামরিক দিক থেকেই বিপদের মুখে পড়বে না, বরং কূটনৈতিক দিকেও জটিলতা তৈরি হবে।

লি জে মিয়ং ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীন সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে চান। চীন দক্ষিণ কোরিয়ার শক্তিশালী প্রতিবেশী ও প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।

লি স্পষ্ট করে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে যেকোনও সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

গত মাসে এক টেলিভিশন বিতর্কে তিনি বলেন, “আমরা চীন-তাইওয়ানের সম্ভাব্য সংঘাত থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা উভয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারি।”

লি জে-মিয়ংয়ের উদ্বেগের সঙ্গে একমত হয়েছেন তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা মুন চুং-ইন। তিনি একসময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। 

তিনি বলেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাদের ছেড়ে দেবে। আবার একইসঙ্গে আমরা আশঙ্কা করছি, আমেরিকা আমাদের দিয়ে চীনকে ঘিরে রাখার কৌশলে জড়িয়ে ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের হুমকি দিলে আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে চলে যেতে বলতে পারি।”

সিওলে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক ইভান্স রিভিয়ারের মতে, লি, ট্রাম্প ও চীনকে ঘিরে এই নতুন বাস্তবতা “একটি নিখুঁত ঝড়” সৃষ্টি করতে পারে। 

তিনি বলেন, “দুই নেতা হয়তো একে অপরের অবস্থান পুরোপুরি বুঝতে পারবেন না। এতে করে তাদের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।”

এই পরিস্থিতিতে পিয়ংইয়ং থেকে কিম জং উন অবশ্যই পুরো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারেন। তার পরমাণু কর্মসূচি বর্তমানে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এখনও কেউ তাকে এই কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি করাতে পারেনি—এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও না, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকার সময় প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আবারও কিমের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চান। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যেসব আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, সেগুলো তিনি পুনরায় শুরু করতে চান। 

তবে সিউলে এখন গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে যে, এবার এই দুই নেতা এমন কোনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন, যা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

আর এই আশঙ্কার কারণ হলো—ট্রাম্প হয়তো “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিকে অনুসরণ করে কিমকে বলবেন, তিনি যেন এমন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বানানো বন্ধ করেন, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডকে হুমকির মুখে ফেলে। 

কিন্তু সিউলের দিকে তাক করা অসংখ্য স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে কোনও আলোচনা না-ও হতে পারে। আর এর বিনিময়ে কিম একেবারে উচ্চমূল্য দাবি করতে পারেন।

২০১৯ সালের তুলনায় এখন কিমের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী। তার হাতে আরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র অনেক বেশি উন্নত প্রযুক্তির। আর যে নিষেধাজ্ঞাগুলো তার শাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কথা ছিল, সেগুলোর কার্যকারিতা কার্যত ভেঙে পড়েছে। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এখন কিমকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে সহায়তা করছে।

ফলে কিম এখন অনেক বেশি সাহসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি তুলতে পারেন। তিনি ট্রাম্পকে বলতে পারেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে একটি পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর পুরোপুরি অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার বদলে কেবল অস্ত্রের সংখ্যা কমানোর মতো চুক্তিতে রাজি হয়। 

আরেকটি সম্ভাব্য দাবি হতে পারে—দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়া, যার মধ্যে সেনা প্রত্যাহারও থাকতে পারে।

২০১৯ সালের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য ছিলেন সিডনি সাইলার। 

তিনি বলেন, “এখন উত্তর কোরিয়া চালকের আসনে রয়েছে। একমাত্র অজানা বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। চুক্তির অংশ হিসেবে সেনা প্রত্যাহার বিবেচনায় আসবে—এমন ধারণা এখন আর অবাস্তব নয়।”

সাইলার জোর দিয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে কখনোই ভুলে যাবে না।” তবে তিনি পরামর্শ দেন, দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট যেন ট্রাম্পের সঙ্গে শুরুতেই একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং স্পষ্ট করে জানান, কোনও আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হলে তারা যেন তার অংশ হন।

কূটনীতিক ইভান্স রিভিয়ের বলেন, নতুন প্রেসিডেন্টকে এখন সব দিক থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মতে, লি’র প্রথম কাজ হওয়া উচিত একটি তালিকা তৈরি করা—কমপক্ষে দশটি কারণ দেখাতে হবে কেন দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য অংশীদার এবং কেন সেখানে খরচ করা ডলার সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই যুক্তিগুলো এমন হতে হবে, যা ট্রাম্পের মতো সংশয়বাদী ও লেনদেনভিত্তিক চিন্তাধারার একজন নেতাকে সন্তুষ্ট করতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়া যে একটি শক্তিশালী তাস খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা হলো—দেশটির জাহাজ নির্মাণে অতুলনীয় দক্ষতা। চীন ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশ এত বেশি সংখ্যক জাহাজ নির্মাণ করে না। বর্তমানে চীনই বিশ্বের শীর্ষ জাহাজ প্রস্তুতকারী দেশ এবং একইসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবহরের অধিকারী। 

আর এই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ দেশটির নিজস্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও নৌবাহিনী উভয়ই এখন পতনের পথে।

গত মাসে বিবিসি দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ উপকূলের উলসানে অবস্থিত দেশের প্রধান জাহাজ কারখানা পরিদর্শন করেছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাণ কারখানা। এখানেই হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০টি নতুন জাহাজ তৈরি করে। এর মধ্যে নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার বা ধ্বংসকারী জাহাজও রয়েছে। শক্তিশালী ক্রেনগুলো বিশাল লোহার পাতগুলোকে একত্রে জোড়া লাগিয়ে ছোট একটি গ্রামের সমান আকারের জাহাজ তৈরি করছে।

সিউল এখন আশা করছে, এই প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে পারবে। এর মাধ্যমে তারা ওয়াশিংটনকে বোঝাতে চাইছে যে, দক্ষিণ কোরিয়া এক অবিচ্ছেদ্য ও মূল্যবান কৌশলগত অংশীদার।

হুন্দাইয়ের নৌবাহিনী ও জাহাজ বিভাগের কৌশল প্রধান জিওং উ মান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ নির্মাণ খাতের দুর্বলতা তাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে। এই বিষয়টি আমাদের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী আলোচনার কার্ডগুলোর একটি।”

প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রচারণার সময় লি জে-মিয়ং বলেছিলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোনও চুক্তিতে তড়িঘড়ি করে পৌঁছাতে চান না। কিন্তু এখন দায়িত্ব গ্রহণের পর, তিনি দ্রুতই বুঝে যেতে পারেন যে, তার হাতে আর সময় নেই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত