যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের স্রোত ঠেকাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেজন্য প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই বলেছিলেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আইন বাতিল করার পরিকল্পনা আছে তার।
তবে সে ধরনের কোনও আদেশ না দিয়েই ২০২০ সালে বিদায় নেন তিনি।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে। এটি পাল্টাতে গেলে আগে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। প্রেসিডেন্টের কলমের খোঁচায় এটি বদলানো যাবে না।
চার বছর পর গত নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের আগে ট্রাম্প অভিবাসীদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে তার আগেকার কঠোর অবস্থানের কথা জানান দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে চান তিনি।
কীভাবে এটা করবেন, সে বিষয়ে বিশদ কিছু না বলে ট্রাম্প কেবল বলেছেন, নির্বাহী আদেশ জারি করে তিনি তার দীর্ঘদিনের লালিত পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেবেন।
এই নির্বাহী আদেশের কথা তিনি তার প্রথম মেয়াদের সময়ও বলেছিলেন। এতে নতুন কিছু নেই।
কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া সংবিধানের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়েছে বহু আগে। সে দেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া যে কাউকে নাগরিকত্ব দিতে সরকার বাধ্য। এই আইন কোনও রাষ্ট্রপ্রধান না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের পদক্ষেপ এবার কী হবে?
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি।
তিনি বলেন, “আমি জানতাম, কংগ্রেসের অনুমোদন নিয়ে আমি নিশ্চিতভাবে এই কাজ করতে পারি। কংগ্রেস আমাকে বলছে, একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে এই আইন আমিই বাতিল করে দিতে পারি। সেই এখতিয়ার আমার আছে।”
তবে পরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও সেই পথে আর হাঁটেননি তিনি।
সংবিধানে কী আছে?
১৮৬৮ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব যুক্তরাষ্ট্রে নিশ্চিত করা হয়।
সেই সংশোধনীতে বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিক হয়ে যাবেন। তার মা-বাবার দেশটিতে ঢোকা যেভাবেই হোক না কেন।
নির্বাহী আদেশে বাতিল সম্ভব?
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের সাংবিধানিক অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করতে পারবেন, এমনটা মনে করছেন না আইন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, কোনও নির্বাহী আদেশই সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী বাতিল করতে পারবে না, কারণ সংবিধানে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নেই।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাডভোকেসি সংস্থা আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রেশলিন-মেলনিক বলেন, “কোনও ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে না পারেন তার মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, তাকে পরিচয়পত্র না দিতে সরকারি সংস্থা সোশাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নির্দেশ দিতে পারেন ট্রাম্প।
“সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনি লড়াইয়ে তিনি জিতে যেতে পারেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ কোনও আইনজীবী বা কোনও পণ্ডিত ব্যক্তি ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব রদের চিন্তার সঙ্গে একমত নন বলে জানান অ্যারন রেশলিন-মেলনিক। এমন কোনও নজির তার চোখে পড়েনি।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেসের (ইউসিএলএ) আইন বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডাম উইঙ্কলার বলেন, “নির্বাহী আদেশ জারি করে ট্রাম্প সর্বোচ্চ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সীমিত করতে পারেন; তাদের প্রবেশ আরও কঠিন করতে পারেন। কিন্তু জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার সাংবিধানিক।
“সংবিধানে এটি অন্তর্ভুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজনীতিকরা যাতে এটিতে হাত দিতে না পারেন।”
সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া কী
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর সাংবাদিক কিয়েরা ফ্রেজার বলেন, “সংবিধানের নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প।
“কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব। কারণ এর জন্য বিপুল সমর্থনের প্রয়োজন পড়বে তার। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ও অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার তিন-চতুর্থাংশ সমর্থন পেলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধন করা যায়, নতুবা নয়।”