বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর এবার অস্থায়ী বাসিন্দাও সীমিত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে কানাডা। মূলত অভিবাসী নিয়ে গড়ে ওঠা দেশটির ইতিহাসে এমন পরিকল্পনা এটাই প্রথম।
এ বছরের শুরুতে অস্থায়ীভাবে দুই বছরের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া সীমিত করার পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার। বৃহস্পতিবার অস্থায়ী বাসিন্দা সীমিত রাখার ক্ষেত্রেও অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ির ঘোষণা তিনি দেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি কানাডা সরকার অস্থায়ীভাবে দুই বছরের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া সীমিত করে। এটি এ বছর প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার ভিসার ক্ষেত্রে কার্যকর করা হচ্ছে।
কানাডা সরকারের সেই পদক্ষেপ থেকে বাদ যাননি দেশটিতে পড়াশোনা করা পোস্ট গ্র্যাজুয়েটরাও। তাদের কাজ করার অনুমতিও (ওয়ার্ক পারমিট) আগামীতে সীমিত করা হবে বলে জানানো হয়।
কাজের অনুপতিপত্র থাকলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া সহজ হয়। তারা এখন কাজের অনুপতিপত্র থেকে বঞ্চিত হলে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসতে চাইবেন।
কানাডায় মাস্টার্স বা পোস্ট ডক্টরেট কোর্সের বিদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত তিন বছর কাজের অনুমতি পান।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বামী বা স্ত্রীরাও জানুয়ারিতে কানাডা সরকারের নতুন কড়াকড়ির মধ্যে পড়েন।
অভিবাসনমন্ত্রী মিলার সে সময় বলেছিলেন, “আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, কলেজসহ বিভিন্ন কোর্সে পড়ুয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বামী বা স্ত্রীরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আর যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
“২০২৫ সালের জন্য যারা কানাডায় পড়তে আবেদন করেছেন, তাদের সেসব আবেদন এ বছরের শেষে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।”
অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার এখন বলছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে কানাডায় অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হবে। সীমিতকরণের এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে।
এই পদক্ষেপের আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদেশি শ্রমিক, আশ্রয়প্রত্যাশীরা রয়েছেন বলে জানান অভিবাসনমন্ত্রী।
এর আগে বাজেট ও আবাসন সংকটের কারণে অভিবাসনের লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার তিনি জানান, অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা ছয় দশমিক দুই শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে তার সরকার।
কানাডায় আসা অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যার টেকসই বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বলে জানান মন্ত্রী।
দেশটির জাতীয় ডেটা সংগ্রহ সংস্থা স্ট্যাটিটিক্স কানাডার পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় আসা অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এবছর কানাডায় অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ২৫ লাখ। ২০২১ সালের পর এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ বেড়েছে।
কাদের ওপর প্রভাব পড়বে?
অভিবাসনমন্ত্রী মিলার আরও বলেন, শ্রমিক ঘাটতি পূরণে কানাডা অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিকের ওপর বেশ নির্ভরশীল। তবে অভিবাসন ব্যবস্থা আরও দক্ষ করার জন্য নীতি পরিবর্তনেরও প্রয়োজন আছে।
যুদ্ধ থেকে পালানো ও রাজনৈতিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাওয়া ব্যক্তিদের কানাডা তার দেশে প্রবেশে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের আন্তর্জাতিক দায় অনুভব করে বলে জানান মিলার।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ বা রাজনৈতিক নির্যাতনের বিষয় বিবেচনা করাকে কানাডিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি মনে করে। একই সঙ্গে অভিবাসীর সংখ্যাবৃদ্ধি কানাডার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়েও স্পষ্ট আলোচনা হওয়া উচিৎ।”
অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা সীমিতকরণের নতুন এই নীতি সম্পর্কে দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ১ মে এর মধ্যে কানাডার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কমাতে বলা হবে।
একই সঙ্গে ওই শূন্য হয়ে যাওয়া পদগুলো যে একজন স্থায়ী বাসিন্দা বা কানাডার নাগরিককে দিয়ে পূরণ করা হয়নি, তা প্রমাণ করার জন্যও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে।
তবে নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবা খাত নতুন অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির আওতার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কারণ এই দুই খাতে কানাডা শ্রমিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কানাডা এ বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিক প্রবেশের অনুমতি দেবে।
স্ট্যাটিটিক্স কানাডার তথ্যমতে, ২০২১ সালে দেশটির অধিকাংশ অস্থায়ী বাসিন্দা প্রায় ৫৪ শতাংশের ওয়ার্ক পারমিট ছিল।
দেশটিতে পড়াশোনার জন্য অনুমতি পাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মোট অস্থায়ী বাসিন্দার ২২ শতাংশ। আর অস্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ আশ্রয়প্রত্যাশী। বাকিদের কাছে কানাডায় প্রবেশের একাধিক ধরনের অনুমতি ছিল বা তারা অস্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবারের সদস্য।
অস্থায়ী বাসিন্দাদের ওপর কানাডার নতুন অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেছেন দেশটির অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলো।
তারা কানাডার সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজকে বলেছেন, অভিবাসীরা এমনিতেই এখানে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেন। এখন তাদের ওপর ‘বাজেট ও আবাসন সংকটের’ দায় চাপানো হচ্ছে।