ছোট ছোট শহরে বাস করা নারীদের ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখগাথা নিয়ে লেখা জনপ্রিয় অনেক ছোট গল্পের কারিগর কানাডীয় লেখক এলিস মানরো মারা গেছেন।
কানাডার অন্টারিওর পোর্ট হোপে নিজ বাড়িতে ৯২ বছর বয়সে নোবেলজয়ী এই লেখকের মৃত্যু হয় বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন তার প্রকাশক ক্রিস্টিন কোচরেন।
প্রকাশনা সংস্থা ম্যাকলেল্যান্ড অ্যান্ড স্টুয়ার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টিন কোচরেন এক বিবৃতিতে বলেন, “এলিসের লেখনী অসংখ্য লেখককে অনুপ্রাণিত করেছে… এবং তার সাহিত্যকর্ম আমাদের সাহিত্য জগতে এমন দাগ কেটে গেছে, যা মুছে যাওয়ার নয়।”
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে কানাডার সংবাদপত্র দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল জানায়, মানরো প্রায় এক দশক ধরে ডিমেনশিয়ায় (স্মৃতিভ্রষ্ট রোগ) ভুগছিলেন। সোমবার তিনি মারা যান।
এলিস মানরো ১৯৩১ সালে অন্টারিওর উইংহামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা অনেক গল্পেই এই এলাকার কথা এবং এই অঞ্চলের মানুষের জীবনবোধ ও সংস্কৃতি উঠে এসেছে।
বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কথা নিজের লেখনীতে তুলে ধরায় খ্যাতি ছিল মানরোর।
তার ছোট গল্পে যে অন্তদৃষ্টি ও সহমর্মিতা ফুটে উঠত, সে কারণে প্রায়ই তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত রুশ লেখক আন্তন চেখভের সঙ্গে তুলনা করা হতো। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণার সময় সুইডিশ একাডেমিও এ বিষয়টি উল্লেখ করেছিল।
মানরোকে সমসাময়িক ছোট গল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে সুইডিশ একাডেমি আরও বলে: “তার লেখনীতে প্রায়ই দৈনন্দিন কিন্তু সিদ্ধান্তমূলক ঘটনা চিত্রিত হয়, এক ধরনের উপলব্ধি প্রকাশ পায়, যা পার্শ্ববর্তী গল্পকে আলোকিত করে এবং অস্তিত্বগত প্রশ্নগুলোকে বিদ্যুৎচমকের মতো করে তুলে ধরে।”
নিজের লেখা ছোট গল্পের এক ডজনের বেশি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন মানরো। ২০১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
এলিস মানরো তার গল্পগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে যৌনতা, আকাঙ্ক্ষা, অসন্তোষ, বার্ধক্য, নৈতিক দ্বন্দ্বসহ আনুসঙ্গিক বিষয়গুলো উঠে আসত। ছোট গল্পের সীমিত পরিসরেই জটিল সব চরিত্রগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তিনি।
কানাডার ঐতিহ্য মন্ত্রী প্যাসকেল সেন্ট-অঞ্জ কানাডীয় সাহিত্যের জগতে এলিস মানরোকে একজন আইকন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, “এলিস মানরোর লেখা ছোট গল্পগুলো ছয় দশক ধরে কানাডা এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় কেড়েছে।”
এলিস মানরোর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে ‘ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস’ (১৯৬৮), ‘লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড উইমেন’ (১৯৭১), ‘হু ডু ইউ থিংক ইউ আর?’ (১৯৭৮), ‘দ্য মুনস অব জুপিটার’ (১৯৮২), ‘হেইটশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোর্টশিপ, লাভশিপ, ম্যারেজ’ (২০০১), ‘রানঅ্যাওয়ে’ (২০০৪), ‘দ্য ভিউ ফ্রম ক্যাসেল রক’ (২০০৬), ‘টু মাচ হ্যাপিনেস’ (২০০৯) ও ‘ডিয়ার লাইফ’ (২০১২)।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি