Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

টাইটানিকের যাত্রীদের বাঁচিয়ে পাওয়া ঘড়ি নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি

১৮ ক্যারেট সোনার এই ঘড়ি শনিবার ২০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়।
১৮ ক্যারেট সোনার এই ঘড়ি শনিবার ২০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়।
[publishpress_authors_box]

আলোচিত জাহাজ টাইটানিক ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল যখন ডুবছিল, তখন তার যাত্রীদের উদ্ধারে ছুটে যান আরেক জাহাজের ক্যাপ্টেন আর্থার রোস্ট্রন। রক্ষা করেন সাতশোর বেশি মানুষের জীবন। এতগুলো মানুষের প্রাণ রক্ষা করায় রাতারাতি হিরো বনে যান রোস্ট্রন। পান নাইটহুড উপাধি।

এছাড়া কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পান এক মহামূল্যবান সোনার পকেট ঘড়ি। এটি টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রীর ছিল। টাইটানিকের সঙ্গে সঙ্গে তারও মৃত্যু হয় সেদিন। ওই ধনী যাত্রীর স্ত্রীকে উদ্ধার করেছিলেন রোস্ট্রন। তিনিই পরে প্রয়াত স্বামীর ঘড়িটি উপহার হিসেবে রোস্ট্রনকে দেন।  

সেই মূল্যবান ঘড়ি সম্প্রতি নিলামে প্রায় ২০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এর আগে টাইটানিকের কোনও স্মারক এত চড়া দামে বিক্রি হয়নি।

সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে পকেট ঘড়িটি বিক্রি করে ইংল্যান্ডের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেনরি অল্ডরিজ অ্যান্ড সন।

তারা জানায়, ঘড়িটি তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা জুয়েলারি ব্র্যান্ড টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি, ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে। এটি এখন পর্যন্ত টাইটানিকের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত স্মারকসামগ্রী।

এর আগে গত এপ্রিলে ঘড়িটি নিলামে তুলেছিল হেনরি অল্ডরিজ অ্যান্ড সন। ১৫ লাখ ডলারে সেবার বিক্রি হয় এটি।

নিলামকারী অ্যান্ড্রু অল্ডরিজ বলেন, “এই বছরই দুবার উচ্চ মূল্যে বিক্রি হলো পকেট ঘড়িটি, যার অর্থ টাইটানিক নিয়ে মানুষ আজও বিমোহিত। টাইটানিকের প্রত্যেক নারী-পুরুষ-শিশু যাত্রীর বলার মতো গল্প ছিল। সেসব গল্পই এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই ঘড়ি বলে যাচ্ছে।”

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের উদ্দেশে ২ হাজার ২২৪ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে যাত্রা করে সেসময়ের সবচেয়ে বড় ও অভিজাত জাহাজ টাইটানিক।

পাঁচ দিন পর ১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক সাগরে হিমশৈলের সঙ্গে এটির ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। তাদের মধ্যে ছিলেন টাইটানিক সবচেয়ে ধনী যাত্রী জন জ্যাকভ অ্যাস্টর। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ৭ দিন পর তার মরদেহ থেকে নিলামে ওঠা পকেট ঘড়িটি উদ্ধার করা হয়।

অ্যাস্টরের সঙ্গে সেদিন মারা গিয়েছিলেন টাইটানিকের আরও দুই ধনী ব্যবসায়ী যাত্রী। ক্যাপ্টেন রোস্ট্রন যে সাতশোর বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছিলেন, তাদের মধ্যে ওই তিন ধনীর স্ত্রীও ছিলেন। তারাই পরে অ্যাস্টরের দামী পকেট ঘড়িটি উদ্ধারকর্তাকে উপহার দেন।

সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক থেকে ভূমধ্যসাগরের দিকে যাচ্ছিল ক্যাপ্টেন রোস্ট্রনের যাত্রীবাহী জাহাজ আরএমএস কার্পাথিয়া। ভোরের দিকে হঠাৎ টাইটানিক থেকে বিপদ সংকেত পায় জাহাজটির এক রেডিও অপারেটর।

সাগরগর্ভে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ।

তিনি দৌড়ে গিয়ে ক্যাপ্টেন রোস্ট্রনকে ঘুম থেকে তুলে বিষয়টি জানান। ক্যাপ্টেন তখন জাহাজটি দ্রুত ঘুরিয়ে উত্তর আটলান্টিক সাগরে টাইটানিক যেখানে ছিল, সেদিকে নিয়ে যান।

টাইটানিকের সঙ্গে ধাক্কা লাগা হিমশৈলকে পাশ কাটিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটির কাছে যখন তার জাহাজ পৌঁছায়, তখন অভিজাত জাহাজটি আর ভাসমান ছিল না। ডুবে গিয়েছিল। আর সাগরে তলিয়ে যায় দেড় হাজারের মতো যাত্রী।

রোস্ট্রনের জাহাজের ক্রুরা ২০টির মতো লাইফবোটের সাহায্যে সাতশোর বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করে এবং তাদের নিউ ইয়র্কে নিয়ে যায়।            

তার এই বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ইউএস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলে ভূষিত করেন। পরে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাজা পঞ্চম জর্জ তাকে নাইটহুড উপাধি দেয়।              

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত